MD SALIM MURSHIDABAD

ভোটের ফল বিশ্লেষণে কর্মী-দরদিরা, শুনলেন সেলিম

রাজ্য

ইসলামপুরে সিপিআই(এম) দপ্তরে সামনে আলোচনা।

ডোমকল, জলঙ্গী, রানিনগর। তিন বিধানসভায় ঘুরে ঘুরে সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থক থেকে কংগ্রেস কর্মী, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বললেন মহম্মদ সেলিম। সকাল থেকে কখনও বসলেন চায়ের দোকানের রোয়াকে। কখনও বসলেন স্কুল লাগোয়া মাঠে। শুনলেন সারাদিন। বললেন শেষ বেলায়। 
এদিন রানিনগরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেছেন, রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকারে যারা থাকে তাঁদের যোগসাজশ ছাড়া আন্তর্জাতিক পাচার হয়নি। তৃণমূল, বিজেপির যোগ সাজশেই পাচার হচ্ছে।


সেলিম বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে যে দপ্তর চালান তাতে নিজেকেই বকুনি খেতে হয়। ভূমি দপ্তর উনি চালান। স্বাস্থ্য দপ্তর উনি চালান। কে কাকে বকুনি দেবেন ? উনি সরকারি খরচায় নিজের দল করতে চাইছেন। তাই শুধু নিজের দলকে বৈঠকে ডেকেছে। বিজেপি এবং তৃণমূল বিরোধী শূন্য রাজনীতি করতে চায়। তাই তাহেরপুর পৌরসভাকে বৈঠকে ডাকা হয়নি।
সেলিম বলেছেন, মোড়ে মোড়ে সিভিক ভলান্টিয়ারদের গাড়ি পিছু তোলাবাজির রেট বেঁধে দিয়েছে। সেই টাকা থানা, এসপি অফিস হয়ে আইজি ডিআইজি অফিসে যায়। তারপর সেই টাকা কালীঘাটে যায়। মমতা ব্যানার্জি বলেছেন যা হবে ৭৫ ভাগ কালীঘাটে জমা দেবে, ২৫ ভাগ তোমরা রাখবে। ৭৫ ভাগ ভাইপো নিয়ে সবটা বিদেশে পাঠায় না। তার অর্ধেকটা যায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পায়। অর্ধেকটা তৃণমূল পায়।
সেলিম দাবি করেছেন যে পুলিশকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে সমস্ত বোমা, বন্দুক উদ্ধার করতে হবে। মানুষের মেজাজ দেখে বোমা বের করতে পারেনি তৃণমূল। এখন সেই বোমা, অস্ত্র বের করা হচ্ছে। বিজেপি, তৃণমূলের নেতাদের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
লোকসভা নির্বাচনের পর সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে সব স্তরে পার্টি সদস্যদের বিশ্লেষণ তো শোনা হবেই, তার সঙ্গে শোনা হবে পার্টি কর্মী-দরদি অংশের বিশ্লেষণ। তার বাইরের আগ্রহী অংশের বক্তব্যও শুনবে পার্টি। এদিন মুর্শিদাবাদে সেই কাজে অংশ নিয়েছেন সেলিম।   
সকালেই ইসলামপুর আর ডোমকলের মাঝামাঝি নাজিপুরে পৌঁছে গিয়েছেন মহম্মদ সেলিম। নাজিপুর বাসস্ট্যান্ডে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন আশেপাশের গ্রামের মানুষ। কেন মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে হারতে হল সিপিআই(এম)-কে? কোথায় ছিল খামতি? নিজের কথা মহম্মদ সেলিমকে সামনে পেয়ে বলেছেন সকলেই। মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে ছিলেন সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা।
এরপর ভাদুড়িয়াপাড়ায় সিপিআই(এম) দপ্তরেও আলোচনায় উঠে এসেছে বুথভিত্তিক ফলাফলের পর্যালোচনা, বলেছেন পার্টি দরদিরা। শুনেছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। আলোচনায় উঠে এসেছে এগনোর পথও। এরপর সেখান থেকে সাদিখাঁদিয়াড়, ডোমকল এবং জলঙ্গী জোড়তলায় সিপিআই(এম) দপ্তরে যান মহম্মদ সেলিম। হয় দীর্ঘ আলোচনা। 
দুপুরে রানিনগর স্কুল লাগোয়া মাঠে গ্রামের মানুষ মহম্মদ সেলিমকে জানিয়েছেন নির্বাচনের পর গ্রামে সিপিআই(এম), কংগ্রেসের কর্মীদের উপর তৃণমূল আর পুলিশের যৌথ অত্যাচারের কথা। রানিনগরে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, দলের কর্মীরা বুথ, পাড়া মহল্লায় ঘুরে সাধারণ মানুষের কথা শুনবেন । 
সেলিম বলেছেন, ভোট শেষ সব শেষ, এরকমটা নয়। এটা কোন তামাশা ছিল না। এটা একটা লাগাতার প্রক্রিয়া। দলের কর্মী, দরদী, সমর্থক, অন্য দলের কর্মীরা প্রাণের বাজি লাগিয়ে লড়াই করেছেন। তাকে মর্যাদা দিতে হবে। সেলিম বলেছেন, আমাদের নির্বাচনী কর্মীদের কেউ যদি ভয় দেখায়, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করে, তাঁদের রক্ষা করাও আমাদের কাজ। সেলিম বলেছেন, লড়াইয়ের ময়দানে যারা নতুন এসেছেন তাঁদের সঙ্গে আরও বেশি করে থাকতে হবে। 
রানিনগর বিধানসভা এলাকায় এগিয়ে আছে সিপিআই(এম)। এই ঘটনাকে অত্যন্ত  তাৎপর্যপূর্ণ বলেছেন মহম্মদ সেলিম। সেলিম বলেছেন, যেখানে এগিয়ে থাকা যায়নি, চুলচেরা বিশ্লেষণ করে জানতে হবে কোথায় দুর্বলতা।  আমি নিজে প্রার্থী হিসেবে আরও কী করতে পারতাম। ভাবতে হবে।’’
সেলিম বলেছেন, আমাদের এই বারের লড়াইটা ছ’টা “এম”এর বিরুদ্ধে। একটা এম মোদী। আরেকটা এম মমতা। তার সঙ্গে রয়েছে ‘মানি’, নির্বাচনী বন্ডের টাকা। কোটি কোটি টাকা উড়েছে। মিডিয়ার একাংশ বিক্রি হয়েছে,। মোদী মমতার বাইনারী তৈরি করা হয়েছে । টাকা দিয়ে মাসলম্যান, বাহুবলীদের ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কর্মী সব নিয়ে যে ভোট মেশিনারি, তার বিরুদ্ধেও লড়তে হয়েছে। এই লড়াই কঠিন ছিল।
সেলিম এদিন রানিনগরে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে ভোটের মুখে তৃণমূল এবং বিজেপি সাম্প্রদায়িক ভাষণ দিয়ে গিয়েছে। ভোটের লড়াইকে ধর্মীয় বিভাজনের চেহারা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী- প্রধানমন্ত্রী নিজেরা সাম্প্রদায়িক ভাষণ দিয়েছেন। 

Comments :0

Login to leave a comment