Govt Doctors

অনমনীয় রাজ্য, অনশনেই অবিচল জুনিয়র ডাক্তাররা

রাজ্য

বৈঠক থেকে মিললো না কোনো সমাধান। ফলে উৎসবের মধ্যেও আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন সাত অনশনকারী। 
বৈঠক থেকে বেরিয়ে জুনিয়ার চিকিৎসকদের তাৎপর্যপূর্ণ অভিযোগ,পুজোর সময় অনশন তোলার এজেন্ডা নিয়েই বৈঠকে ডেকেছিল রাজ্য সরকার! পাঁচ দিনে পড়া আমরণ অনশনকারীদের শরীরের হাল থেকেও সরকারের উদ্বেগ পাঁচদিন পরে মুখ্যমন্ত্রীর কার্নিভ্যাল নিয়ে।
ফলে বৈঠক থেকে কোনো সমাধান সূত্র মেলেনি। রাত ১২টা ২০ মিনিটে বৈঠক শেষ করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁরা জানিয়ে দেন, ‘‘ পুজো আসছে। অনশনটা তুলে নিতে বলুন। এর বাইরে কোনো সদর্থক আলোচনা হয়নি। আমাদের ১০ দফা দাবির একটা দাবিও সরকার মানতে চায়নি।’’ 
অনশন আপনারা তোলা নিয়ে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছেন। উত্তর দিতে গিয়ে আন্দোলনকারীরা জানান, ‘‘ কী পেয়েছি আমরা? কী যুক্তিতে আমরা অনশন তোলার কথা বলবো।’’ বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগে আমরণ অনশনকারীরা প্রতিনিধি দলকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন প্রত্যাহার করার কোনো সুযোগ নেই। গভীর রাতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে এই কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে যাচ্ছিল আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের অন্যতম নেতা ডা দেবাশিস হালদারের। বৈঠকের কোনো দাবি না মানায় রাতেই অনশন মঞ্চে ফিরে আসেন বৈঠকে যোগ দেওয়া প্রতিনিধিরা। যাওয়ার আগে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে তাঁরা জানিয়ে যান,‘‘ আমরা যখনই কোনো কথা বলেছি, আমাদের বলা হয়েছে পুজো পার হয়ে যাক। সাধারণ মানুষ বুঝে নিন, সরকারের আসলে কোনো সদিচ্ছা নেই। ’’ 
মাত্র ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট সময় দিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে ই-মেল করে বৈঠকে ডাকলো রাজ্য সরকার! বৈঠক ডাকতে বাধ্য হলেও সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো। সেই আবহেই আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা তাঁদের দাবির প্রতি অনড় থেকেই রাত পৌনে দশটা নাগাদ বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। ফলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অচলাবস্থা কাটার লক্ষণ নেই। চুটিয়ে এনজয় করুন বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। এখন উৎসবের মধ্যেই স্বমহিমায় সুর চড়াচ্ছে বিচারের দাবির আন্দোলন। 
১০০ ঘন্টা পার হয়ে গেছে সাত জুনিয়র চিকিৎসকরের আমরণ অনশন। দ্রুত অবনতি হচ্ছে শারিরীক অবস্থার। গত শুক্রবার ১০ দফা দাবি পূরণ ২৪ ঘন্টার মধ্যে না হলে আমরণ অনশনের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। গত শনিবার থেকে আমরণ অনশন শুরু হওয়ার পরও সরকার কোনো আলোচনার কথা মাথায় আনেনি। 
সাড়ে ছয়টায় মুখ্যসচিবের ই-মেল আসে আন্দোলনকারীদের কাছে। আর ৭টা ৪৫ মিনিটে স্বাস্থ্য ভবনে আসতে বলা হয়েছে আন্দোলনকারীদের। অথচ দু দিন আগে নবান্নে সাংবাদিকদের কাছে অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের আমরণ অনশন প্রত্যাহার করার জন্য বৈঠক নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি রাজ্য সরকার। সেদিন সরকার দাবি করেছিল, হাসপাতালে সুরক্ষার কাজে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। 
কিন্তু নবান্নের তরফ থেকে বৈঠক ডাকা হলেও এদিন পুলিশ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে আচরণ শুরু করেছে তাতে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে। রাত সাড়ে ৯টার পর বৈঠক শুরু হলেও এদিন দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারা সম্মিলনী ক্লাবের সামনে থেকে জাস্টিসের দাবি তোলা নাগরিকদের আটক করে পুলিশ। প্রতিবাদে রাতেই লালবাজারে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের সঙ্গে আছেন সাধারন মানুষও। 
চার দিন ধরে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন সাত জুনিয়র চিকিৎসক। দ্রুত অবনতি হচ্ছে স্বাস্থ্যের। চারদিন ধরে চুপ করে বসেছিল রাজ্য প্রশাসন। পুলিশকে ব্যবহার করে ধর্মতলার অনশন মঞ্চে নানাভাবে বাধা তৈরি করে শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য হলো নবান্ন।
এদিনই রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ আন্দোলনরত জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের কাছে আলোচনায় বসার বার্তা দিয়ে একটি ই মেল পাঠান। তাতে ৮ থেকে ১০ জন প্রতিনিধি নিয়ে রাত সাতটা ৪৫ মিনিটে স্বাস্থ্য ভবনের কনফারেন্স রুমে বৈঠকের আহ্বান করেন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যসচিবের উপস্থিত থাকার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ই মেল পাওয়ার পর ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থেকে জুনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তাঁরা মুখ্যসচিবের ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন।
রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ জুনিয়র চিকিৎসকদের দল পৌঁছে যান স্বাস্থ্য ভবনে। মিটিং’এ যাওয়ার আগে আন্দোলনকারীরা জানিয়ে যান, তাঁরা কোনো রফার জন্য বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন না। ১০ দফা দাবিতে তাঁরা অনড়। স্বাস্থ্য সচিবের পদত্যাগের দাবি থেকেও আন্দোলনকারীরা সরছেন না। পৌনে দশটায় শুরু হয়েছে বৈঠক। বৈঠকে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি সহ কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষরাও যোগ দিয়েছেন। 
আসলে চাপের মুখে সরকার এদিন বৈঠক ডাকতে বাধ্য হয়েছে। দু দিন আগেও নবান্ন থেকে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলির অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল রাজ্য সরকার। সেই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিরাপত্তার আয়োজনে রাজ্য সরকার কতটা এগিয়ে গেছে সেই তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। সরকারের ধারণা ছিল, সিসিটিভি, ডিউটি রুম, রেস্ট রুম আর হাসপাতাল চত্বরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থার তথ্য সামনে এনে আন্দোলনকারীদের চাপে ফেলা যাবে। কিন্তু সরকারের এই ব্যবস্থা গ্রহণের পরও আমরণ অনশন থেকে নড়ানো যায়নি আন্দোলনরত চিকিৎসকদের। বরং জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবির পাশে দাঁড়িয়ে কলকাতার একের পর এক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকরা ইস্তফা দিতে শুরু করেন। আর জি কর, মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম, সাগর দত্ত থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এদিন দলে, দলে সরকারি চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য শিক্ষা আধিকারিকের কাছে ইস্তফা পত্র পাঠিয়ে দেন। 
মুখ্যমন্ত্রী ভেবেছিলেন মহালয়া থেকে একের পর এক পুজো উদ্বোধন শুরু করে রাজ্যে উৎসবের আমেজ ফিরিয়ে আনা হবে। জেলা ও কলকাতা মিলিয়ে একাই ১২০০ পুজোর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ‘চুটিয়ে ইনজয় করুন। পুজো শুরু হয়ে গেছে।’ একইসঙ্গে ১৫ অক্টোবর রেড রোডে বিসর্জনের কার্নিভ্যাল উপলক্ষে সরকারের তরফ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়ায় শুরু হয়ে যায়। প্রশাসনের ধারণা ছিল, পুজোর মধ্যে আর জি কর ঘটনা নিয়ে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। ফি দিন দলে, দলে সাধারণ মানুষ এসে ভিড় জমিয়েছেন ধর্মতলার অনশন মঞ্চে। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে এদিন জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠকে ডাকতে বাধ্য হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment