বুধবার আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা দিবসে কলকাতায় এন্টালি মার্কেটের সামনে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশন একত্রে এক প্রকাশ্য গণ কনভেনশন করেছে। ভারত বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বে সংখ্যালঘুদের ওপর যে আক্রমণ তাকে প্রতিহত করার ডাক উঠে আসে এই গণ কনভেনশন থেকে। সংখ্যাগুরুর যে আধিপত্য সুলভ মনোভাব সংখ্যালঘুর ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয় তাকেও পরাস্ত করার ডাক দেন বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলের নেতৃবৃন্দ। মহম্মদ সেলিম বলেন বাংলাদেশের ঘটনায় বিজেপি তৃণমূল যে কথা বলছে সেই কথা আসলে আরএসএস’এর। কথাগুলি বলছেন শুভেন্দু, ফিরহাদ হাকিম, মোহন ভাগবৎ আর মমতা, কিন্তু সবার সংলাপের স্ক্রিপ্ট লিখে দিচ্ছে আরএসএস।
এই কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক ও সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিআই রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, আরএসপি নেতা অশোক ঘোষ, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের নেতা তমাল চক্রবর্তী, আইএসএফের চেয়ারম্যান নৌশাদ সিদ্দিকি।
সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, "বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কী অবস্থান তা ঠিক করবে ভারত সরকারের বিদেশ মন্ত্রক। কিন্তু আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভা থেকে বললেন কলকাতা, বিহার, উড়িষ্যা দখল করতে আসলে আমরা কী ললিপপ খাবো। সেই কথার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে থেকে শোনা গেলো আমরা কী তাহলে আমলকি চুষবো! পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে এটাই পরস্পরকে মদত দেওয়া বিভাজনের রাজনীতি। পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬-এ বিধানসভা নির্বাচন। বাংলাদেশের সমস্যাকে পোস্টার করে এরাজ্যের রাজনীতিতে বিভাজনের জন্য ব্যবহার করছে তৃণমূল ও বিজেপি। আবার আমাদের রাজ্যের যে বিভাজনের রাজনীতি তাকে বাংলাদেশে ব্যবহার করছে সেখানকার মৌলবাদী দলগুলি। যেমনভাবে আমেরিকায় ভোটের আগে সিরিয়া বা প্যালেস্টাইনে বোম পড়ে। সাধারণ মানুষের রক্ত দিয়ে নির্বাচনের পোস্টার লেখা হয় এবং দক্ষিণপন্থী শক্তিরা সেই রক্ত মেখেই ভোট ও বিভাজনের রাজনীতি করতে চায় তাই ভোটের আগে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সমস্যা তৈরি হয়।
রাষ্ট্রসংঘ ১৯৯২ সালের ১৮ ডিসেম্বর এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে। সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার বলেন, "এই দিন শুধু পালনের উদ্দেশে আমরা এই কর্মসূচি করছি না। বর্তমানে বাংলাদেশ ও আমাদের দেশে সংখ্যালঘুদের উপর যে আক্রমণ তার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলবে।"
আইএসএফের চেয়ারম্যান নৌশাদ সিদ্দিকি বলেন, "শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু নয় ভাষাগতভাবে জাতিগতভাবে সংস্কৃতিগতভাবে যারা সংখ্যালঘু তাদের ওপরেও সংখ্যাগুরু আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা করছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার যাতে রক্ষা হয় সেই দায়িত্ব তুলে নিতে হবে সংখ্যাগুরুদের। সংখ্যাগুরুরাই সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করতে পারে।"
কনভেনশনে বক্তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে বিজেপি আসলে সংবিধানের উপর সরাসরি আক্রমণ করেছে। সংবিধান প্রণেতা বি আর আম্বেদকরের মৃত্যুদিন ওই ৬ ডিসেম্বর, বিজেপি ওই দিনকেই বেঁছে নিয়েছিল যাতে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার উপর আঘাত হানা যায়।
Comments :0