HUNGER FAMILY OF 7

বাঁকুড়ার গ্রামে ৬ শিশুসন্তানকে নিয়ে অভুক্ত মা

জেলা

৬ সন্তানকে নিয়ে অভুক্ত মা। কুড়া-১ ব্লকের আধারথোল গ্রাম পঞ্চায়েতের সিয়ারবেদা গ্রামে ।

মধুসূদন চ্যাটার্জি, বাঁকুড়া

খাওয়ার পাচ্ছেন না নিজে। খাবার দিতে পারছেন না ৬ শিশুসন্তানকে। অনাহারের মুখে সন্তানদের নিয়ে মা চুমকি মালাকার। বাঁকুড়া-১ ব্লকের আধারথোল গ্রাম পঞ্চায়েতের সিয়ারবেদা গ্রামে মর্মান্তিক পরিস্থিতি জানা গিয়েছে।

দু’দিন আগে কালপাথর অঞ্চলের ধবন গ্রাম থেকে এলাকার যুবক দয়াময় মন্ডল ৬সন্তান সহ মা চুমকি মালাকারকে খানিকটা দুরে বাঁকুড়া ১নং ব্লকেরই আধারথোল গ্রাম পঞ্চায়েতের সিয়ারবেদা গ্রামে রেখে আসেন। ধবন গ্রামে খোলা আকাশের নিচে ৬ সন্তানকে নিয়ে তিনি দিন কাটাচ্ছিলেন। সিয়ারবেদা গ্রামেও খোলা আকাশের নিচেই কাটাচ্ছেন। তবে এখানে আরও ৬টি পরিবার থাকেন। তাঁদের মধ্যে ২জনের ঝুপড়ি আছে, বাকিরা খোলা আকাশের নিচেই থাকেন। 

 ‘গণশক্তি’-তে ৬ ফেব্রুয়ারি খবরটি প্রকাশ হওয়ার পরই বেশ কয়েকজন চুমকি মালাকারের কাছে এসে তাঁকে কিছু আটা, গুড়, চিড়ে দিয়ে গেছেন। এই পর্যন্তই। এখানে বাকি যাঁরা আছেন তাঁদেরও অবস্থা একই রকম। 

শুক্রবার সকালে বাঁকুড়া- পুরুলিয়া রাস্তায় নতুনগ্রাম ছাড়িয়ে বনকাটি মোড় থেকে জঙ্গল রাস্তা ধরে সিয়ারবাদা গ্রামে পুতুল মালাকাররা জানান, আমরাও বহু দুর থেকে এখানে এসে আছি। মাটির খুঁগুর তৈরি করে গ্রামে গিয়ে বিক্রি করি। যাযাবর আমরা। কোথায় আমাদের আসল ঠিকানা জানি না। প্রতি মুহূর্তে কষ্ট করে দিন চলে। 

এখানেই চুমকি মালাকার তার ৫ছেলে ১ মেয়েকে নিয়ে এসে উঠেছে। ছোট ছেলে ভুটুর সারা শরীরে চর্মরোগ হয়ে গেছে। এদিন সকালে ছেলেক নিয়ে তিনি বাঁকুড়া হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এখানে থাকা বাকি পাঁচ ছেলের পেটে কিছুই পড়েনি। বড় ছেলে ৮বছরের রাম মালাকার জানায় সারাদিন কুল খেয়ে আছি। জঙ্গলে দু’ভাই কুল তুলে নিয়ে এসেছে। সেগুলোই তাদের খাবার। একদিন কোনক্রমে ভাত পেলে পরে আবার কবে পাবে এরা জানে না। রাম জানায় সে লেখাপড়া শিখতে চায়। স্কুলে ভর্তি হতে চায়। পড়াতে চায় তার ভাইদেরকেও। 

দুমাস আগে আসানসোল থেকে স্বামী চুমকি মালাকার ট্রেন, বাসে চড়ে আবার দীর্ঘপথ হেঁটে বাঁকুড়ার কালপাথর অঞ্চলের গভীর অরণ্য ঘেরা ধবন গ্রামে এসে হাজির হয়। তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে। সে ছেলেগুলিকে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য এভাবে মাইলের পর মাইল হেঁটে কি কিভাবে এই গভীর অরণ্যে পৌঁছেছিল সেটাই আশ্চর্য্যের। এলাকার যুবক সামান্য নিরাপত্তা কর্মী দয়াময় মন্ডলের নজরে আসায় তাঁকে কম্বল ও কিছু খাবার দেন তিনি। পরে বিষ্ণুপুরের এক সরকারি কর্মচারী মুজিবর গাজি এঁদের জামা প্যান্ট দেন। 

এদিন বিকালে চুমকি মালাকার জানান, আর ভাবে থাকতে পারছিনা। একটা যে কোন কাজ পেলে ছেলেগুলোকে মানুষ করতে পারতাম। এদিন বাঁকুড়া হাসপাতালে ছোট ছেলেকে দেখানোর পর চিকিৎসক যে ওষুধ লিখে দিয়েছেন তার দাম ৩৫০ টাকা। ওষুধ কিনতে পারেননি তিনি। এই অবস্থাতেই শেষ দুপুরে সিয়ারবেদায় ফেরেন। সারাদিন কিছুই খাবার জোটেনি। ছেলেরাও অভুক্ত। কান্নায় ভেঙে পড়েন। জানান, খালি ডাক্তারই দেখালাম, ওষুধ দিতে পারছিনা। কোথায় পাব টাকা? কত আর ভিক্ষা করব? আর এভাবে আকাশের নিচে থাকলে আমরা তো মরে যাব। 

Comments :0

Login to leave a comment