Rahul Gandhi

বিরোধী ঐক্য শুধু যথেষ্ট নয়, জরুরি বিকল্প ভাষ্য

জাতীয়

বিরোধীদের আরও নিখুঁতভাবে বেঁধে ফেলতে পারলে বিজেপি-কে হারানো অসম্ভব নয় বলেই জোরের সঙ্গে জানালেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি মনে করেন, শুধু বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলাই যথেষ্ট নয়। বিজেপি’র বিকল্প ভাষ্য, ভাবনা তুলে ধরতে হবে। সেটাই বড় কথা। মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সামনে তাঁর চোখে বর্তমান ভারতের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে একথা বলেন রাহুল গান্ধী। একজন রাজনৈতিক উদ্যোক্তা হিসাবে তিনি স্পষ্টই বিজেপি’র দুর্বলতা দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান। এখন বিরোধীরা সঠিকভাবে জোটবদ্ধ হলে বিজেপি-কে টলিয়ে দেওয়া যাবে, জানিয়ে দিলেন রাহুল গান্ধী।
বিজেপি যে অভেদ্য নয় একথা বোঝাতে গিয়ে রাহুল গান্ধী স্বাভাবিকভাবেই কর্নাটক নির্বাচনে কংগ্রেসের বিপুল জয়ের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভোটে অন্য ধরনের পন্থা অবলম্বন করে এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাষ্য গড়ে তুলে কর্নাটকে বিজেপি-কে পরাস্ত করেছে কংগ্রেস। আর ওই লড়াই বা ভিন্ন ভাষ্যের রসদ সংগৃহীত হয়েছে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সাফল্য থেকেই বলে তিনি মনে করেন। তবে আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে হারানোর ক্ষেত্রে তিনি জোর দেন বিরোধী ঐক্যের ওপরেই। আরও জোটবদ্ধ হওয়ার কথা বললেও এখনও পর্যন্ত বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার কাজ ‘বেশ ভালোভাবেই এগচ্ছে’ বলে জানান তিনি। তবে বিকল্প ভাবনা তুলে ধরার ওপরেই সর্বাগ্রে জোর দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা। আর এই বিকল্প ভাষ্য বলতে গিয়েই রাহুল জানান, শুধু বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলাই যথেষ্ট নয় বা সব কাজ শেষ হয়ে যাবে না। বিজেপি’র পালটা বিকল্প ভাবনা বা ভাষ্য তুলে ধরতে মানুষের সামনে। তিনি বলেন, ‘‘ভারত জোড়ো যাত্রা সেই বিকল্প ভাবনা দেখানোর প্রথম পদক্ষেপ। সমস্ত বিরোধীদের একসূত্রে বাঁধাই ছিল পদযাত্রার মূল ভাবনা। কোনও বিরোধী দলই ভারত জোড়ো যাত্রা ভাবনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেনি।’’ তাই রাহুল মনে করেন, এই মুহূর্তে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলাই সবচেয়ে জরুরি। বিরোধীদের জোটবদ্ধ করার পাশাপাশি দেশবাসীকে এটাও বোঝাতে হবে যে, এটা শুধু কয়েকটি দল একসঙ্গে মিলেমিশে জোড়াতালি দিয়ে একটা বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলেনি। উলটে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা এদের আছে এবং সেই লক্ষ্যেই এরা একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে।
বক্তৃতায় বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলায় যেমন জোর দিয়েছেন তেমনই বিজেপি, পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদমাধ্যম এবং অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তীব্র সমালোচনা করেছেন রাহুল গান্ধী। বিজেপি সরকার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে অপব্যবহার করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিরোধী নেতা, দেশের মানুষকে ভয় দেখানোর জন্যই কাজে লাগানো হচ্ছে এদেরকে। সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এমন সব বিষয়বস্তু বা ভাষ্য তুলে ধরা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিলই নেই। উলটে বিপুল পরিমাণ বিচ্যুতি তুলে ধরা হচ্ছে। ভারত জোড়ো যাত্রা’র সময় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। ওই সময় পদযাত্রার এমন সব বিষয় তুলে ধরা হতো যাতে সুবিধা হয় বিজেপি’র। ফলে সংবাদমাধ্যমে যা দেখানো হয় তা সত্যি বলে ভাবতে তিনি নিষেধ করেন দেশবাসীকে। রাহুল অভিযোগ করেন, ভারতের গরিব, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বিজেপি রাজত্বে অসহায় বোধ করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী কিংবা তাঁর সরকার মোটেই দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো জলন্ত সমস্যার কথা বলে না। উলটে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, বিদ্বেষ ছড়ায়। আসলে ভারতের ভাবনাই আজ আক্রমণের মুখে, এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
দশ দিনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে বিভিন্ন জায়গায় ভাষণ দেবেন রাহুল গান্ধী। সান ফ্রান্সিসকো হয়ে যাবেন ওয়াশিংটন ডিসি, তারপর নিউ ইয়র্ক। ভারতীয় অভিবাসীদের পাশাপাশি তিনি মার্কিন সাংসদদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁর বক্তৃতামালাকে ‘মহব্বত কি দুকান’ বা ‘ভালোবাসার দোকান’ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। একারণেই মঙ্গলবার ভাষণ দেওয়ার মাঝে খালিস্তানপন্থী কয়েকজন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। রাহুল ভাষণ থামিয়ে তাঁদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তারপরেই বলেন, ‘‘এটাই ‘ভালোবাসার দোকান’, এটাই ভারতবর্ষ। আসলে, জীবনে আপনি কিছুই বুঝতে পারবেন না, যদি না ধৈর্য ধরে আপনি অন্যের কথা শুনতে তৈরি থাকেন।’’
বস্তুত, বিদেশ গিয়ে আবারও চাঁচাছোলা ভাষায় বিঁধেছেন মোদী সরকারকে। বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, ‘এমন কিছু মানুষ যাঁরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে, তাঁরা সব কিছু বোঝেন’ বলে। মোদী হচ্ছেন সেই প্রজাতির, কটাক্ষ রাহুলের। মোদীর মানসিকতা বোঝাতে গিয়ে রাহুল গান্ধী কোনও রাখঢাক না করেই বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, আপনি যদি মোদীজীকে ঈশ্বরের সামনে বসিয়ে দেন, তা হলে উনি ঈশ্বরকেই বোঝানো শুরু করে দেবেন, কী করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চলছে! ঈশ্বর উলটে বিহ্বল হয়ে ভাবতে বসবেন, এ কী পৃথিবী তৈরি করলাম! এটা খুবই হাস্যকর ব্যাপার, কিন্তু বাস্তবে এটাই চলছে। এমন কিছু গোষ্ঠী আছে যারা সব কিছু বোঝে। তারা বিজ্ঞানীকে বিজ্ঞান বুঝিয়ে দিচ্ছে, ইতিহাসবিদকে ইতিহাস পড়িয়ে দিচ্ছে, আবার সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ করাও শিখিয়ে দিচ্ছে। এর মূলে রয়েছে যদিও মধ্যমেধা, এরা আসলে কিছুই জানে না।’’
বিজেপি-কে আক্রমণ করে তাঁর দলের সঙ্গে পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‘যদি আপনার বিশ্বাস থাকে রাগ, ঘৃণা আর ঔদ্ধত্যে, তা হলে আপনি নিজেকে বিজেপি’র সভায় খুঁজে পাবেন, আর আপনি ‘মন কি বাত’ শুনবেন।’’ সরাসরি কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘আমাকে এখানে প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এটাও কিন্তু বিজেপি-তে হবে না। সেখানে কোনও প্রশ্নের বালাই নেই, শুধু উত্তরে ভরপুর!’’
এদিন নয়াদিল্লিতে আবার রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের জবাব দিতে শুরু করে দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। অত্যন্ত ছেঁদো ভাষায় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী রাহুলকে ‘ভুয়ো গান্ধী’ বলে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, ‘‘একজন ব্যক্তি কিছুই জানেন না অথচ ভান করেন তিনি বিশাল বিজ্ঞ।’’ যেভাবে গান্ধী পরিবারকে আক্রমণ করতে অভ্যস্ত বিজেপি নেতারা, সেভাবেই যোশী দাবি করেন, ‘‘ওঁর ইতিহাসের জ্ঞান গান্ধী পরিবারের বাইরে নয়।’’ আরেক মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর রাহুল গান্ধী বিদেশে গিয়ে ভারতকে অপমান করেছেন বলে সেই পুরানো রেকর্ডই বাজিয়েছেন। লন্ডনে গিয়ে ভারতের এই মুহূর্তের দুরবস্থার কথা বলেছিলেন রাহুল। আমেরিকাতেও এভাবে রাহুল ‘দেশের সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছেন’ বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, হতাশা থেকেই মোদীকে নিশানা করে নেন রাহুল।

Comments :0

Login to leave a comment