Migratory Birds

চলতি শীতে পরিযায়ীর সংখ্যা কমেছে ফুলবাড়ির জলাশয়ে

জেলা

অনিন্দিতা দত্ত

শীতের শুরুতেই শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়িতে এসেছে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির দল। নানা রকমের পাখি ফুলবাড়ি ব্যরেজ সংলগ্ন জলাশয়ে আস্তানা গাড়ে তুলেছে। পরিযায়ী পাখিদের দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয় ও দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষজন। তবে পরিযায়ীর সংখ্যা কমেছে চলতি শীতে। যা নিয়ে কপালে ভাঁজ পরিবেশপ্রেমীদের। শেষ হতে চলেছে ২০২৪ সাল। আসতে চলেছে নতুন বছর। তবুও শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়িতে প্রতি বছরের ন্যায় রেকর্ড সংখ্যক পরিযায়ী পাখিদের আগমন ঘটেনি। শীতের মরশুমে তাপমাত্রার পারদ একটু তলানির দিকে নামতেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি ব্যরেজ সংলগ্ন জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের আগমন ঘটে। সারা বছর কম বেশী পাখি দেখা মিললেও শীতে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা আস্তানা গাড়ে। আর পরিযায়ী পাখীদের দেখার জন্যই অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান। হরেক পাখিদের মেলায় শিলিগুড়ির অদূরে ফুলবাড়ি বাইপাস অত্যন্ত আকর্ষনীয় হয়ে ওঠে।
বিগত বছরগুলিতে অনেকটা রীতি মেনেই হিমালয় পেরিয়ে চখা, রুডি সেল ডাক, নর্দান পিনটেল, নর্দান শোভেলার, কমন টিল, ইউরেশিয়ান ওয়াইজিয়ন, মেলার্ড, গ্যাডওয়াল সহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখিরা নির্দিষ্ট সময় ও দিন মেপেই ফুলবাড়ি ব্যারেজ জলাশয় সহ উত্তরের জঙ্গল ও জলাশয়ে আসা যাওয়া করে থাকে। ভিড় জমানো বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের সবাই গোটা শীতের মরশুম জুড়ে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে উত্তরের জঙ্গল ও জলাশয়ে থেকে যায় না। কিছু সংখ্যক পাখি গোটা শীতকাল জুড়ে স্থায়ীভাবে থেকে গেলেও যাত্রা পথের পরিযায়ী পাখিরা ফিরে যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যায় শুধুমাত্র জলজ পরিযায়ী পাখি নয়, অন্যান্য বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আগস্ট মাস থেকেই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জলাশয়ে নীড় বাধে। মূলত মাঝ নভেম্বরের পর থেকে সূদূর সাইবেরিয়া সহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে পরিযায়ী পাখিদের আসা শুরু হয়। আবার মার্চ মাসের মধ্যেই ফিরে যাওয়া। 


ছবি তুলেছেন চিন্ময় কর।

যদিও কাজল, সাই জাতীয় পাখিগুলো চলতি বছরের শেষ হতে চললেও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জঙ্গল ও জলাশয় এলাকায় নজরে আসছে না। শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি ব্যারেজ জলাশয়ে দেখতে পাওয়া জলজ পরিযায়ী পাখি হোক বা অন্য পাখিগুলোর সবই দূর দূরান্তের দেশ থেকে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখি নয়। তালিকায় দেশজ পরিয়ায়ী পাখিরাও রয়েছে। শীতের সময়ে কয়েক মাস অসংখ্য দেশজ পরিযায়ী পাখিও আসা যাওয়া করে থাকে এখানে। দূরবর্তী হিমাচল, লাদাখের লেকগুলো থেকেও চখা, রুডি সেলডাক জাতীয় অনেক দেশজ পরিযায়ী পাখি যাতায়াত করে। দেশের উত্তর দিক থেকে সরাল বা হুইসিলিং টিল দেশজ পরিযায়ী পাখিও আসে। হিমালয় পেরিয়ে মোঙ্গলীয়া সহ দূর দূরান্ত থেকে রুডি সেল ডাক এখানে আসে। 
হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ) র প্রোগ্রাম কো—অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু জানিয়েছেন, উত্তুরে হাওয়া বইতে শুরু করলেও ওদের আগমন ঘটতে কিছুটা বিলম্বই ঘটছে। অন্যান্য বছরের চাইতে উত্তরবঙ্গের সর্বত্র জঙ্গল, নদী ও জলাশয় এলাকায় পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমেছে। এবছর ফুলবাড়ি ব্যারেজ ও গজলডোবায় এখনও পর্যন্ত আশানুরূপ পরিযায়ী পাখি আসেনি। যেহেতু উত্তরবঙ্গের পাখি গণনার কাজ প্রতিবছরই গোটা জানুযারি মাস ধরে চলে, সেহেতু এই সময়ে ফুলবাড়িতে আরো বেশ কিছু পরিযায়ী পাখিদের আগমন ঘটতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। 
প্রসঙ্গত ১১ও ১২জানুয়ারি ন্যাফের পক্ষে অন্যান্য জায়গার মতো শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি ব্যারেজ জলাশয়ে পাখি গননার কাজ হবে। শিলিগুড়ি সংলগ্ন ফুলবাড়ি ব্যারেজ জলাশয়ে চলতি শীতের মরশুমে এখনও পরিযায়ী পাখি সেইরকম নজরে না আসায় চিন্তিত পাখিপ্রেমী মানুষ সহ পরিবেশ প্রেমী সংস্থাগুলি।

Comments :0

Login to leave a comment