Modi

সতেরো লাখি হীরে, এক ফকিরের কিস‌সা

জাতীয়

গায়ে চড়ান নিজের নাম লেখা দশ লাখি স্যুট। আর বন্ধু-পত্নীকে দিয়ে আসেন সতেরো লাখি হীরের তোফা। এসবের পিছনে গৌরি সেন খোঁজার চেষ্টা না করাই ভালো। কেননা দশ লাখি স্যুট নিয়ে শোরগোল পড়তেই যেমন ‘মহৎ উদ্দেশ্যে’ নিলামে চড়ে ১ কোটি ২১ লক্ষ টাকার দামে উঠতে পারে, তেমনই মার্কিন ফার্স্ট লেডিকে দেওয়া এক ‘ফকিরের দেওয়া ছোট্ট উপহার’ নিয়ে কোনও না কোনও গল্প নিয়ে আসতে বেশি সময় লাগাবে না পেটোয়া সংবাদ মাধ্যমের। হোয়াইট হাউস সম্প্রতি সেই ‘উপহারের’ মূল্য তালিকা সমেত প্রকাশ না করলে হয়তো কোনও সমস্যাও ছিল না। সেই তালিকা সামনে আসতেই তাঁর নিন্দুকরা মহা আক্রমণাত্মক হয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। যে দেশে পাঁচ বছরের কমবয়সি পাঁচটা শিশুর দুটিই ভোগে মারাত্মক অপুষ্টিতে, যে দেশের প্রায় কুড়ি কোটি মানুষের দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খাওয়ার মতো সামর্থ্যটুকু নেই, সেখানে ‘প্রধান দেশসেবকে’র এমন দরাজ বেহিসাবি খরচ কোন অর্থশাস্ত্র মেনে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। 

খবরে প্রকাশ, ২০২৩-র জুন মাসে আমেরিকা সফরে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেনকে ২০ হাজার ডলারের একটি হীরে উপহার দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ভারতীয় মুদ্রায় তা ১৭ লক্ষ টাকার সমান। সরকারি কোষাগার থেকেই এই উপহারের যাবতীয় খরচ বহন করা হয়েছে। কেউ কেউ হিসাব দিচ্ছেন, এই টাকাতে তো অপুষ্টিতে ভোগা অন্তত হাজার শিশুকে প্রায় তিন মাস (৮৩ দিন) দু’বেলা পেট পুরে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো যেত! কোনও কোনও সংখ্যাতত্ত্ববিদ আবার এই টাকায় কত গ্রামের লোক রেগায় এক বেলা কাজ পেতেন, কিংবা কত বাচ্চার মিড ডে মিলের আয়োজন করা যায়- এমন সব কঠিক-কঠিন হিসেব পেশ করতে শুরু করেছেন। যে ‘প্রধান সেবকের’ জন্য ৮৫০ কোটি টাকা দিয়ে বিমান কিনতে হয় সরকারকে, কিংবা ৮৫ দেশে ঘুরে আসা ‘ফকিরের’ লিমুজিন কিনতেই ১২ কোটি লেগে যায়, সেখানে তাঁর উপহার-বিলাসিতা ১৭ লক্ষ টাকা হয়তো ‘তেমন কিছুই নয়’। 

এই বিষয়ে সব থেকে গুরত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, প্রায় বছর দুয়েক আগে করা এই খরচ সম্পর্কে দেশের কোনও সংবাদমাধ্যমে ন্যূনতম কোনও খবর ছিল না। হ্যাঁ, বাইডেন পত্নীকে মোদীর সেই ভেট দেওয়ার খবর-ছবি অবশ্য ছাপা হয়েছিল। কিন্তু নীরব ছিল মোদীর এই উপহার-বিলাসিতার পেছনের খরচের হিসাব। সাধারণত বিদেশের কোনও রাষ্ট্রপ্রধান দেওয়া উপহার সংক্রান্ত ব্যয়ের বিষয়ে কেন্দ্রের বিদেশ মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানোর কথা। তবে এই ক্ষেত্রে তাও করা হয়নি। গোটা বিষয়টি নিয়ে জো বাইডেনের মেয়াদের শেষবেলায়, মার্কিন বিদেশ দপ্তরের প্রকাশিত এক নথিতে জানা গিয়েছে। প্রকাশিত এই নথি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের থেকে বহু মূল্যবান উপহার পেয়েছেন বাইডেনের পরিবার। তবে মূল্যের নিরিখে মোদীর এই উপহার সেই সমস্ত উপহারকে হার মানায়। হোয়াইট হাউসের বিধি অনুযায়ী, বিদেশ থেকে পাওয়া কোনও উপহারের মূল্য যদি ৪৮০ ডলারের বেশি হয়, তবে তা জাতীয় মহাফেজখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে নিয়ম ভেঙে মোদীর এই উপহার বাইডেন পরিবার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন বলে জানা গেছে। এই নিয়ে জানাজানি হওয়ায় হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বাইডেনের মেয়াদ শেষ হলে তা মহাফেজখানায় হস্তান্তর করা হবে। এই কলমদানটি হোয়াইট হাউসের এক দপ্তরে রাখা আছে বলে তিনি জানান। যদিও এই বিষয়ে ‘ফার্স্ট লেডি’-র দপ্তর এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি। 

এই তথ্য সামনে আসায় অনৈতিকতা সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন উঠেছে। বাইডেনের স্ত্রীকে মোদী এই হীরের কলমদান আদেয় রাষ্ট্রীয় উপহার হিসাবে দিয়েছেন কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সরকারি খরচে এটি ব্যক্তিগত উপহার বলেও মনে করা হচ্ছে। যদি প্রকৃতপক্ষে তাই হয়ে থাকে তবে দুই দেশের আইন অনুযায়ী, মোদী ও বাইডেন পরিবার বড় রকমের দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। ঠিক সেই কারণেই কি এই ব্যয়ের বিষয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক প্রায় বছর দুয়েক ধরে কোনও সাড়াশব্দ করেনি? যদি ভারত সরকারের তরফে মার্কিন ফার্স্ট লেডি এই উপহার পেয়ে থাকতেন, তবে তা ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের শেষে আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের বার্ষিক অডিট বা আয় ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষাতেই তা ধরা পড়তো এবং তা পত্রপাঠ জাতীয় মহাফেজখানায় পাঠাতে হতো। তা না হয়ে এই তথ্য জানা গিয়েছে বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন দুয়েক আগে।


 

Comments :0

Login to leave a comment