Left Front Siliguri

শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ অভিযান, জমা পড়ল জনতার তৈরি চার্জশিট

রাজ্য জেলা

Left Front Siliguri

প্রায় এক লক্ষ স্বাক্ষর সংগ্রহের মধ্য দিয়ে চলতি মাসের শেষ দিনে শুক্রবার জনতার আদালতে তৈরি চার্জশিট গ্রামীণ মানুষ নিজেরাই ঐক্যবদ্ধভাবে তুলে দিলেন মহকুমা পরিষদের সভাধিপতির হাতে। 
স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত আবাস যোজনায় সমস্ত গরীব মানুষের জন্য পাকা বাড়ি দেওয়া হলো না কেন? গ্রামীন গরীব মানুষের স্বার্থবাহী সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির কি হলো? শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ অভিযানে সামিল গরীব মানুষের জিজ্ঞাসা। মহকুমা পরিষদ এলাকায় ত্রিস্তর নির্বাচনের আগে তৃণমূলীদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতিগুলির উত্তর চাইছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষ। দার্জিলিঙ জেলা বামফ্রন্টের আহ্বানে এদিন মহকুমা পরিষদ অভিযান কর্মসূচিতে মহকুমার বাগডোগরা, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, বিধাননগর, আঠারোখাই সহ মহকুমার বিস্তীর্ন এলাকার প্রচুর গ্রামীণ মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন এয়ার ভিউ মোড় সংলগ্ন মহানন্দা নদী ঘাটে। এরপর শুরু হয় মিছিল। লাল পতাকায় সুসজ্জিত বড় মিছিল হিলকার্ট রোড ধরে এগিয়ে চলে। হাসমিচক হয়ে মহকুমা পরিষদের সামনে মিছিলের সমাপ্তি হয়। এদিন বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল মহকুমা পরিষদে গিয়ে গনস্বাক্ষর সম্বলিত দাবিপত্র সভাধিপতির হাতে তুলে দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন সমন পাঠক, তাপস সরকার, গৌতম ঘোষ, মনি থাপা, বিকাশ সেন রায়, তাপস গোস্বামী, অনিমেষ ব্যানার্জি প্রমুখ।
১৫ দফা দাবিকে সামনে রেখে গত ১ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত এক মাস ব্যাপী ধারাবাহিকভাবে শিলিগুড়ি মহকুমার ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েত ৪টি পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় গণস্বাক্ষর, জনসংযোগ ও গণ অর্থ সংগ্রহ অভিযান চলেছে। 


এদিনের মহকুমা পরিষদ অভিযান মিছিলে স্লোগান উঠেছে মহকুমা জুড়ে ভেঙে পড়া কৃষি সেচ ব্যবস্থা ও কৃষি নালাগুলির সংষ্কার করার প্রতিশ্রুতির কি হলো? কোথায় গেলো তৃণমূলের ১০০ দিনের বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি? গ্রামীণ এলাকার চারটি ব্লকের রাস্তাঘাট, কালভার্ট বেহাল দশা কেন? অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে অবিলম্বে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা ও বাড়ি বাড়ি পানীয় জলের সলযোগ দেওয়া, পয়ঃপ্রনালী আবর্জনামুক্ত করা, বাগডোগরা শ্মশানঘাটে অসমাপ্ত বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মান, এশিয়ান হাইওয়ে ২বিহার বর্ডার থেকে মেডিকেল হয়ে নৌকাঘাট পর্যন্ত জাতীয় সড়কে পথবাতির ব্যবস্থা, ফ্লাইওভারগুলিতে আলোর ব্যবস্থা, রাঙাপানি রেলগেটে ফ্লাইওভার ও ধযু জোতে নির্মান, গ্রামীণ নদীগুলিকে কেন্দ্র করে কালোবাজারি বন্ধ করা, রাতের অন্ধকারে ডাম্পারের দৌরাত্ম্য বন্ধ, চা শ্রমিক পরিবারগুলিকে তাদের জমির বিধিবদ্ধভাবে পাট্টা দেওয়া, বন্যপ্রানী আক্রমণের হাত থেকে কৃষিক্ষেত্রকে বাঁচাতে বনদপ্তরের উদ্যোগ গ্রহণ, কৃষিতে সহায়ক মূল্য চালু, মহকুমা জুড়ে ভেঙে পড়া কৃষি সেচ ব্যবস্থা ও কৃষি নালাগুলির সংষ্কার করা, তপশিলী জাতি ও উপজাতি শংসাপত্র পেতে হয়রানি বন্ধ, গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরবঙ্গ ক্যাম্পাস প্রকল্পের বাস্তবায়ন ইত্যাদি। 
এদিন মহকুমা পরিষদ সংলগ্ন এলাকায় সংক্ষিপ্ত সভায় সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, শুধু স্মারকলিপি নয়, কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের হুঁশিয়ারি দিতে এসেছি। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদেও চার্জশিট দেওয়া হবে। জমির দালালি, লুটেরাদের রাজত্ব চলছে সর্বত্র। শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামাঞ্চল এর বাইরে নয়। গ্রামাঞ্চলে গত দুই বছরের বেশী সময় ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। ভোট ও ক্ষমতার লোভে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস নানা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও জাতিগত আবেগকে সঙ্কীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করে বিভাজনের বীজ বপন করে পরিস্থিতিকে জটিল করে রাখতে চাইছে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে। অন্যদিকে মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ও গরীবের ভাতা বন্ধ। গরীব মানুষের জীবিকার ওপরেও আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। নদী শ্রমিকরা কর্মহারা হয়েছে। চারটি ব্লকে জমি মাফিয়ারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করায় নদীর ক্ষতিসাধন হচ্ছে। ডাম্পারের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। প্রশাসন উদাসীন। অবিলম্বে বকেয়া টাকা প্রদান ও ১০০ দিনের কাজ চালু করার দাবি জানান তিনি। জবাব ওদের দিতেই হবে। 


সভায় সভাপতিত্ব করেন দার্জিলিঙ জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সমন পাঠক। পার্টি নেতা অশোক ভট্টাচার্য বর্তমান সভাধিপতিকে ‘বেচারা’ বলে কটাক্ষ করে বলেন, তার কোন গুরুত্বই নেই। সব জায়গাতে শিলিগুড়ির তৃণমূল নেতার কর্তৃত্ব চলছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি ক্ষেত্রে খবরদারি করছেন ওই তৃণমূল নেতা। মহকুমা পরিষদ স্থানীয় সরকার। সরকারের অধিকার ও মার্যাদাকে নষ্ট করছে শাসকদল। এর তীব্র বিরোধীতা করে তিনি বলেন, তিনটি সরকারের অধিকারকে অটুট রাখতে হবে। 
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সভাধিপতি তাপস সরকার, গৌতম ঘোষ, আরএসপি’র বিকাশ সেন রায়, সিপিআই’র অনিমেষ বোস।

Comments :0

Login to leave a comment