BRITAIN LABOUR CABINET

শুরুতেই স্বাস্থ্যে নজর স্টার্মারের, বিদ্বেষে জোর সুনকদের, নজরে সেই করবিন

আন্তর্জাতিক

সমর্থকদের সঙ্গে কায়ার স্টার্মার।

নির্বাচনে জয়ের পর শনিবার প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠক করলেন ব্রিটেনের লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টার্মার। সরকারি ব্যয় সঙ্কোচন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতির মতো একগুচ্ছ অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জেরবার ব্রিটেন। প্রথম দিন থেকে নজরে পড়ার মত কাজ করতে না পারলে সেই সমর্থন যে থাকবে না তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন স্টার্মার। জানা যাচ্ছে, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষায় শুরু থেকে জোর দিতে চাইছে লেবার পার্টি।
১৪ বছর ধরে সরকার চালানো রক্ষণশীল বা কনজারভেটিভ টোরিরা সেই সঙ্কট মোকাবিলা করতে পারেনি। ৬৫০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৪১১টি জিতেছে লেবার পার্টি। প্রত্যাশার চাপ আছে বুঝে স্টার্মার বলেন, ‘‘আমাদের সামনে কাজের পাহাড় পড়ে রয়েছে। আজ থেকেই আমাদের কাজ শুরু করে দিতে হবে। নষ্ট করার মতো সময় আমাদের নেই।’’
যদিও একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘একটি দেশের অবস্থা পাল্টানো সুইচ টেপার মতো সহজ নয়। ফলাফল চোখে পড়তে সময় লাগবে।’’ 
প্রসঙ্গত, কনজারভেটিভ পার্টির দুশো বছরের ইতিহাসে ২০২৪ সালের মত খারাপ ফল কখনও হয়নি। সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে মাত্র ১২১ আসনে জিতেছে রক্ষণশীলরা। 
লেবার নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, প্রাথমিক ভাবে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা বা এনএইচএসের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে পরিষেবা পেতেন সাধারণ মানুষ। রক্ষণশীলদের দীর্ঘমেয়াদী শাসনকালে সেই ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ কমেছে। পরপর ধর্মঘট হয়েছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। লেবার পার্টির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল এই এনএইচএস-এ বরাদ্দ বাড়ানোর। এর পাশপাশি ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ায় একের পর এক যুদ্ধের ফলে গোটা ইউরোপ জুড়ে শরণার্থীর ঢল নামছে। ব্রিটেনও তার ব্যতিক্রম নয়। ব্রিটিশ সমাজে শরণার্থীদের নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সেই আশঙ্কাকে হাতিয়ার করে নির্বাচনে ১৪ শতাংশের কাছে ভোট পকেটে পুড়েছে উগ্র দক্ষিণপন্থী রিফর্ম পার্টি, যা দ্বীপরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। প্রতিবেশি ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে এগিয়ে রয়েছে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে শরণার্থী সমস্যার মোকাবিলা করার উপায়ও খুঁজে বের করতে হবে স্টার্মারকে, বলছে পর্যবেক্ষক মহল। 
সদ্য প্রাক্তন ঋষি সুনক সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ফ্রান্স থেকে বেআইনি ভাবে ছোট নৌকা করে আসা শরণার্থীদের আফ্রিকার রোয়ান্ডায় পাঠানো হবে। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই কয়েক লক্ষ পাউন্ড খরচ হয়ে গিয়েছে। লেবারের প্রতিশ্রুতি, একজনকেও আফ্রিকায় না পাঠিয়ে সমস্যার সমাধান করা হবে। 
পরাজয়ে দমে না গিয়ে পালটা আক্রমণে নামা শুরু করে দিয়েছেন রক্ষণশীলরা। হাতিয়ার শরণার্থী বিদ্বেষ। সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সুয়েলা ব্রেভারম্যান সুনকের জায়গায় দলের রাশ হাতে নেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি উগ্র দক্ষিণপন্থী ভাষ্যেরই প্রচারক। 
বেভারম্যান বলেছেন, ‘‘ বেআইনি ভাবে আসা মানুষকে আফ্রিকায় পাঠালেই একমাত্র সমস্যার সমাধান সম্ভব ছিল। আমরা সমাধান প্রায় করে ফেলেছিলাম। কিন্তু স্টার্মার এবং তাঁর দলবলের জন্য সঙ্কট আরও ঘনিভূত হবে।’’
এর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক মন্দার ফলে দারিদ্রের হার বৃদ্ধি পাওয়ার মত বিষয়ের সমাধানও খুঁজে পেতে হবে স্টার্মার সরকারকে। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রাশিয়া থেকে সস্তায় খনিজ জ্বালানি ব্রিটেনে আসা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু সেদেশের প্রবল ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে বাড়ি গরম করার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হয়। জ্বালানির দাম বাড়ায় বাড়ি ভাড়া সাধারণ মানুষের নাগালের প্রায় বাইরে। লন্ডন শহরে বাড়ি ভাড়া খাতে মাসে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ হাজার পাউন্ড, যা নজিরবিহীন। এর ফলে শ্রমজীবী অংশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তলানিতে। এই সমস্যারও সমাধান বের করতে হবে স্টার্মার সরকারকে। 
অপরদিকে প্রবল লেবার ঝড়ের মধ্যেও লন্ডনের আইলিংটনে নিজের আসন ধরে রেখেছেন প্রাক্তন লেবার নেতা জেরেমি করবিন। ২০১৯ সালে তাঁর নেতৃত্বে লেবার পার্টি ৪০ শতাংশ ভোট পেলেও কাঙ্ক্ষিত আসন পায়নি। এই বছর লেবার পার্টি পেয়েছে আসলে সেবারের চেয়ে কম, পেয়েছে ৩৪ শতাংশ ভোট। 
লন্ডন শহরে গাজায় গণহত্যা থামানোর দাবিতে একের পর এক জনস্রোতের সাক্ষী থেকেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই মিছিলগুলি সংগঠিত করতে বড় ভূমিকা রয়েছে করবিনের। নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়ের পরে তিনি দাবি আদায়ে সংগ্রাম চালিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। 
করবিনের পক্ষে জনসমর্থন যে জোরালো এই ভোট তা-ও স্পষ্ট করেছে। ভবিষ্যতে রিফর্ম পার্টির সঙ্গে রক্ষণশীলদের হাত মেলানো একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। বরং সেটাই সম্ভাব্য পরিস্থিতি। সেই দক্ষিণপন্থী স্রোতের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে বিকল্প রাজনৈতিক ভাষ্য দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে বামমুখী করবিনের, বলছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

Comments :0

Login to leave a comment