TMC govt Potato Moneylenders

হুগলীতে খরচ কমেছে আলু চাষের! বলছে তৃণমূল সরকার, মহাজনদের পোয়াবারো সরকার

জেলা

 সিঙ্গুরে আলু চাষের খরচ কমেছে। মমতা ব্যানার্জির সরকার তাই মনে করেছে। সরকার সেই অনুসারে নির্দেশিকাও জারি করেছে। 
শুধু সিঙ্গুরে নয়। বলাগড়, আরামবাগ সহ হুগলী জেলার সর্বত্র গত বছরের থেকে এই বছরে আলু চাষের খরচ কমেছে বলেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে পূর্ব বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা সহ রাজ্যের ৮ জেলায় আলু চাষের খরচ গত বছরের তুলনায় ১ টাকাও বাড়েনি— এই সিদ্ধান্তও নিয়েছে তৃণমূলের সরকার। রাজ্যের ২২টি জেলায় আলু চাষ হয়। তার মধ্যে ২১টি জেলায় আলু চাষ সরকারের বিমা প্রকল্পের আওতায়। বাদ শুধু পশ্চিম বর্ধমান। যে জেলাগুলিতে গত বছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে বলে রাজ্য সরকার নির্ধারণ করেছে, সেখানেও সরকারের ধারণা, চাষের খরচ বেড়েছে সামান্য। যেমন, আলিপুরদুয়ার। সেখানে আলু চাষের খরচ বিঘায় ১৪০৪ টাকা বেড়েছে বলে সরকার মনে করেছে। পুরুলিয়ায় সেই অঙ্ক ৪৮৩ টাকা প্রতি বিঘায়।
খরিফ এবং রবি চাষের আগে রাজ্য সরকার সেই বছরের বিমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করে। রাজ্যে রবি চাষের মরশুম শুরু হয়েছে। এবারও একটি নির্দেশিকা (নম্বর: ১০১৬-এজি-১১০৩১(১১)/১/২০২৩-এনএবি-পার্ট-১) রাজ্যের কৃষি দপ্তর প্রকাশ করেছে। সেই নির্দেশিকায় বোরো ধান, আলু, আখ, গম, সরষে, ডাল সহ ১৩টি ফসলের হেক্টর প্রতি চাষের খরচ নির্দিষ্ট করা হয়েছে। চাষের এই সরকার নির্ধারিত খরচকে বলা হয় ‘স্কেল অব ফিনান্স’। 
কীসের ভিত্তিতে সরকার এই ‘স্কেল অব ফিনান্স’ ঠিক করে? রাজ্যের কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক শনিবার জানিয়েছেন, ‘‘প্রতি বছর দু’বার স্কেল অব ফিনান্স ঠিক করা হয়। খরিফ এবং বোরো চাষের আগে। প্রতিটি জেলাতে একটি করে কমিটি আছে এই সংক্রান্ত। জেলাশাসক সেই কমিটির প্রধান। কমিটিতে কৃষি বিভাগের অফিসাররা থাকেন। প্রতিটি জেলার কমিটি চাষে হেক্টর পিছু কৃষকের কত টাকা খরচ হবে, তা নির্ধারণ করে। জেলাগুলি তা প্রস্তাব আকারে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠায়। রাজ্য সরকার তা চূড়ান্ত করে। তারপর তা নির্দেশিকা আকারে প্রকাশিত হয়।’’
তৃণমূল সরকারের এই সিদ্ধান্তে আনন্দিত দু’টি পক্ষ। প্রথম দল সুদখোর মহাজনরা। কারণ, রাজ্যের সরকার চাষের খরচ যত কম দেখাবে, কৃষক তত কম ঋণ পাবেন ব্যাঙ্ক থেকে। কিন্তু বাস্তবে চাষের খরচ কমে না। বেড়েই চলে। যেহেতু সার, বীজ, কীটনাশক, সেচের জলের মতো চাষের উপকরণগুলির দাম নরেন্দ্র মোদীর শাসনে বেড়েই চলেছে। ফলে কৃষকের চাষের খরচও বেড়ে যাচ্ছে। আবার রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে চাষের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে কৃষকের বেশি ঋণ পাওয়ার রাস্তাও বন্ধ হচ্ছে। ফলে কৃষক মহাজনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে বাধ্য। দ্বিতীয়ত, চাষের পরেই কৃষক মহাজনের ধার ও সুদ মেটানোর তাগিদে চেষ্টা করবেন দ্রুত ফসল বিক্রি করতে। তখন হাজির হবে ফড়েরা। তারা সরকার নির্ধারিত দামের থেকে কমে সেই ফসল কিনতে শুরু করবে।
কৃষক দু’দিক থেকে মার খাবেন। মহাজনের ধারের চাপে অনেক কৃষক আত্মঘাতী হচ্ছেন রাজ্যে। বর্ষায় আলু চাষের ক্ষতির ফলে কৃষকরা এবার আরও সমস্যায়।
এই কৃষিনীতির প্রয়োগ শুরু হয় দেশে নয়া অর্থনৈতিক নীতির প্রয়োগ শুরু হওয়ার পরে। বিজেপি’র শাসনে এই নীতির প্রয়োগ প্রবলতর হয়েছে। রাজ্যে মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সেই নীতি মেনেই তথাকথিত ‘মা মাটি মানুষ’-এর সরকার চালাচ্ছেন।
এবারে সেই সরকার-নির্ধারিত জেলাওয়াড়ি চাষের খরচ কেমন?
সরকার ঠিক করেছে, চলতি আর্থিক বছরে (২০২৩-২৪) হুগলীতে এক হেক্টর জমিতে আলু চাষ করতে কৃষকের খরচ হবে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৭৬১ টাকা। গত আর্থিক বছরে কত ছিল? ১ লক্ষ ৯০ হাজার ১৯০ টাকা। অর্থাৎ হুগলীতে আলু চাষে কৃষকের খরচ গত বছরের থেকে হেক্টর পিছু ২৬ হাজারের বেশি টাকা কমে গিয়েছে বলে তৃণমূলের সরকার মনে করেছে। সারা ভারত কৃষকসভার সিঙ্গুর ব্লক কমিটির সভাপতি সুকুমার সামন্তের কথায়, ‘‘কালোবাজারে কৃষককে বীজ কিনতে হয়। সারের দাম বেড়েছে। জলের ব্যবস্থা করতে খরচ বেড়েছে। আরও সব উপকরণেরই দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় সরকার কী করে মনে করতে পারে যে, কৃষকের আলু চাষের খরচ কমে গেছে?’’
পূর্ব বর্ধমান রাজ্যের আলু চাষের অন্যতম কেন্দ্র। সেখানে গত বছর হেক্টর পিছু আলু চাষের খরচ সরকার ঠিক করেছিল ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ১৫ টাকা। এই বছর রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানে সেই খরচ একই আছে। মালদহেও তাই। গত বছরের মতোই এবারও হেক্টর পিছু আলু চাষের খরচ সরকার ধরেছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার ১৯০ টাকা। 
সেই সঙ্গে তৃণমূল সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দার্জিলিঙ ছাড়াও হাওড়া, জলপাইগুড়ি, কালিম্পঙ, উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আলু চাষের খরচ গত বছরের তুলনায় বাড়েনি।

Comments :0

Login to leave a comment