অনিল কুণ্ডু
বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একত্রিত করেই তৃণমূল, বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। বিকল্প গড়ে তুলতে হবে।
রবিবার এই আহ্বান জানান সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র। তিনি বলেন, সম্ভাবনার দ্বার আমাদের সামনে উন্মুক্ত হয়েছে। তৃণমূল, বিজেপি উভয়কে পরাস্ত করতে হবে। সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির উদ্যোগে সোনারপুরের রাজপুরে শহীদ দাশুমতি ভবনে আয়োজিত এক সাধারণ সভায় তিনি বক্তব্য রাখেন।
মিশ্র বলেন, ‘‘তৃণমূলের কোন মতাদর্শ নেই। ব্যারিকেড ভেঙে লালঝান্ডা দিয়ে ঘিরতে হবে। মতাদর্শের লড়াই চলছে বিজেপি’র সঙ্গে। যুদ্ধের সাজানো চেহারা তুলে ধরাই তৃণমূল, বিজেপি’র বোঝাপড়া।’’ তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে উদ্দেশ্য করে মিশ্র বলেন, ‘‘ইনি কখন এদিক থেকে ওদিকে যাবেন বাংলার মানুষ বোঝেন। রাজ্যে উনিই বিজেপিকে ডেকে নিয়ে এসেছেন।’’
পার্টি কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক বিন্যাস নিয়ে ‘গোদি মিডিয়া’ প্রশ্ন ঢোকাচ্ছে। মস্তিস্কের লড়াই জরুরি। ফ্যাসিবাদ যেখানে মাথা চাড়া দিতে পারে সেখানে মানুষ ইতিহাস বিস্মৃত হয়। মগজ ধোলাই করতে সক্রিয় রয়েছে ‘গোদি মিডিয়া’।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘আরএসএস, বিজেপির সঙ্গে অন্য কোনও বুর্জোয়া পার্টিকে এক করে দেখা যায় না। লড়াইটা আসলে শ্রেণি সংগ্রামের, শ্রেণি আন্দোলনের।’’
সূর্য মিশ্র আরএসএস প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কংগ্রেস মুক্ত ভারত চায় আরএসএস। আসলে চায় বিরোধী মুক্ত ভারত। আর কমিউনিস্টদের খতম করতে চায়। আমরাও ওদের জানি। আত্মবিশ্বাস আছে। আমরা পারবো বিজেপি’কে পরাস্ত করতে।’’ তিনি বলেন, ‘‘মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারীদের সবচেয়ে বড় দেশভক্ত বলে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। আর মমতাকে ‘দুর্গা’ বলেছিল আরএসএস।’’
প্রয়াত প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা কমরেড পরিতোষ দে’কে স্মরণ করে এদিন সভা শুরু হয়। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ীও। সভা পরিচালনা করেন রাজ্য কমিটির সদস্য রাহুল ঘোষ।
সুজন চক্রবর্তী পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিডিও, থানার ওসি, আইসি’রা গণতন্ত্রকে রক্ষা না করে ভোট লুট করে গেল। গণনায় হেরে যাওয়ার পর জেতার জাল সার্টিফিকেট নিয়ে গ্রামে চোরের মতো চলছে। প্রতিবেশীদের কাছে মুখ দেখাতে পারছে না। নির্বাচনে এতো লুটের পরও কোথাও কোথাও বামপন্থী ও সহযোগী প্রার্থীরা ৩১-৩২শতাংশ ভোট পেয়েছে। লুটের পঞ্চায়েত মানুষ মানছে না। পঞ্চায়েতে তৃণমূলের জাল সার্টিফিকেটের বদলা নিতে হবে লোকসভা নির্বাচনে।’’
শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘এই নির্বাচনে অসম লড়াই লড়তে হয়েছে। কমিউনিস্টদের চিরদিনই স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে হয়। এই সমাজ ব্যবস্থাকে ভাঙতে হবে। ২০১১ সালের পর প্রতিবাদ থেকে প্রতিরোধের স্তরে উন্নীত হয়েছি। প্রবল আক্রমণ, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে পার্টিকে রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পঞ্চায়েতে স্বৈরাচারী সরকারের প্রশাসন আর সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হয়েছে। আরেকদিকে শাসকের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টাও হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় নির্বাচনের দিন ১৭৮২টা বুথে লুট হয়েছে। প্রার্থী, কর্মীদের নামে ২৬৯টা মিথ্যা মামলা হয়েছে। তারপরও সাফল্য এসেছে। এই সাফল্যকে সংহত করতে হবে।’’
প্রবীণ পার্টি নেতা কান্তি গাঙ্গুলি, তুষার ঘোষসহ নেতৃবৃন্দ সভায় ছিলেন।
*ফটো ক্যাপশন — রবিবার সোনারপুর রাজপুরে শহীদ দাশুমতি ভবনে বলছেন সূর্য মিশ্র।
Comments :0