জন্মদিনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোন পেয়ে এবং ট্রাম্পের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে গদগদ হয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দলীয় ভক্তরা সেটা ঘটা করে প্রচারও করেছিলেন। ভাবখানা এমন অনেকটা দূরে সরে যাওয়া বন্ধু আবার কাছে ফিরছেন। তাছাড়া পাক-ভারত সামরিক সংঘাত বন্ধে নিজের প্রভাব খাটানোর কথা কয়েক মাসে প্রায় ৪০ বার উচ্চারণ করার পর কয়েকদিন আগে থেকে সেটা আর বলছেন না ট্রাম্প। সেটা বেজায় অস্বস্তি থেকে আপাতত মুক্তি মোদীকে হাঁপ ছেড়ে বাঁচিয়েছে। এরই মধ্যে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া আলোচনা ফের শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখছেন মোদীরা। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী, বিদেশ মন্ত্রী এবং বিভাগীয় সচিবরা নানাভাবে আশ্বস্ত করতে শুরু করেছেন এবার বোধ হয় শুল্কের খাঁড়া সরে যাবে। নভেম্বরের শেষ নাগাদ হয়ে যেতে পারে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি। তাতে নাকি দু’দেশই উপকৃত হবে। কিন্তু এরই মধ্যে বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মতো ভিসা বোমা ফেলে মোদীদের স্বপ্নের সাজানো বাগান লন্ডভন্ড করে দিলেন ‘আমার (মোদীর) বন্ধু ট্রাম্প’। মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে আমেরিকায় কাজের সূত্রে যাওয়া বিদেশিদের জন্য এইচ ওয়ান বি ভিসার খরচ বহুগুণ বাড়িয়ে দিলেন। নতুন নিয়মে এই ভিসা পেতে গুণতে হবে এক লক্ষ ডলার বা প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা। একদিন আগেও এটা ছিল মাত্র দু’হাজার থেকে পাঁচ হাজার ডলার। আমেরিকার চাকরি সূত্রে যাওয়া বিদেশি নাগরিকদের বেশিরভাগই বছরে এত ডলার বেতনই পান না। যে কয়জন বেশি বেতন পান তাঁদের এক লক্ষ ডলার ভিসা বাবদ দিতে হলে নিজের জন্য হাতে কিছুই প্রায় থাকবে না। এই অবস্থায় যে কোম্পানির হয়ে তাঁরা কাজ করতে যান সেই কোম্পানি ভিসার টাকা বহন না করলে আমেরিকায় চাকরি করা অসম্ভব হয়ে যাবে। এইচ ওয়ান বি ভিসা নিয়ে যেসব বিদেশিরা আমেরিকায় কাজ করতে যায় তাদের ৭০ শতাংশই ভারতীয়। বর্তমানে ৫ লক্ষাধিক এমন ভারতীয় আমেরিকায় কর্মরত আছেন। বন্ধু ট্রাম্পের নয়া ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ধস্ত হবে মোদীর ভারত। ৫০ শতাংশ শুল্কের ধাক্কায় ইতিমধ্যেই ভারতের অর্থনীতির অন্দরমহলে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। এবার দেশে কাজের সুযোগ না থাকায় আমেরিকায় পাড়ি দেওয়া মানুষদের সঙ্কট তীব্র হবে। যারা ইতিমধ্যে আমেরিকায় কাজ করছেন তাঁদের কতজনকে তল্পিতল্পা গুটিয়ে দেশে ফিরতে হবে এখনও স্পষ্ট নয়। যদি দু-তিন লক্ষকেও ফিরতে হয় তাহলে দেশে তাঁদের কাজ জুটবে কীভাবে। নতুন করে বেকারির স্রোত যেমন বাড়বে তেমনি তাঁদের পাঠানো ডলার আসা বন্ধ হয়ে যাবে। বিদেশি মুদ্রার জোগান কমবে। তেমনি যেসব সংস্থা ভারতীয়দের আমেরিকায় কাজের জন্য পাঠায় তাঁদেরও আয় হ্রাস পেয়ে যাবে। অর্থাৎ সব দিক থেকে বড়সড় ঘা মেরেছেন ট্রাম্প। বন্ধু মোদীর সমস্যা তেমন না হলেও সমস্যা বাড়বে অর্থনীতির, কমবে উচ্চ শিক্ষিত উচ্চ দক্ষদের রোজগার।
H-1B Bomb
ভিসা বোমা

×
Comments :0