পুকুর, নদী বা সমুদ্রের জলে জমা হচ্ছে ১৯ থেকে ২কোটি ৩০ লক্ষ টন প্লাস্টিক। ২২শো আইফেল টাওয়ারের ওজনের প্রায় সমান। এমন বর্জ্য জমা হচ্ছে প্রতি বছর।
কেবল সমুদ্রেই জমা হচ্ছে ১ কোটি ১০ লক্ষ টন প্লাস্টিক। সামুদ্রিক প্রাণী, আগাছা, বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে মারাত্মক।
এই তথ্য রাষ্ট্রসঙ্ঘের। প্রতি বছর ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালন করে রাষ্ট্রসঙ্ঘের পরিবেশ বিষয়ক বিভাগ ইউএনইপি। এ বছর বিশেষ স্লোগান ‘প্লাস্টিকের দূষণ থেকে বাঁচাও বিশ্বকে’।
গত বছর বিশ্বের ১৭৫টি দেশ একত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার ঠেকাতে সমঝোতায় সই করে। আন্তর্জাতিক স্তরে আইনি বাধ্যবাধকতা চালু হয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘ বলছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পর এই সমঝোতা পরিবেশ রক্ষার বিচারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন হচ্ছে, আইন তো হলো। আইন মানা হচ্ছে কতটা? ভারতেও প্লাস্টিকের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে। মাঝেমাঝে লাগু হয়, কিছু সময়ের জন্য কড়াকড়ি হয়। তারপর উবে যায়। যেমন দোকানে পাতলা প্লাস্টিকে মালপত্র দেওয়ায় দিনকয়েক কড়া হলো। এখন আর সেই নজরদারি নেই।
পরিবেশ কর্মী থেকে সামাজিক আন্দোলনের বড় অংশই বলছেন, কেবল নীতিকথা আউড়ে পরিবেশ রক্ষা করা যাবে না। জীবন-জীবিকার বিবেচনা করা জরুরি। যেমন প্লাস্টিকের সস্তা থলে বন্ধ করা হলে ত্রেতাকে বাড়তি দাম গুনতে হবে পুনর্ব্যবহার যোগ্য থলের জন্য। কে জোগাবে?
আবার পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে চটের কারখানা এবং কাঁচামাল পাটের জোগান রয়েছে। কিন্তু প্লাস্টিক ব্যবসায়ী লবির দাপটে চটের ব্যবহারে সরকারি শিথিলতা থাকার অভিযোগ যথেষ্ট।
দূষণে গরিব, নিম্নবিত্ত মানুষ কেন ক্ষতিগ্রস্ত হন?
জলপাইগুড়িতে সোমবারই করলা নদীকে প্লাস্টিকের দূষণ থেকে বাঁচাতে হয়েছে সভা, প্রচার। বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনই প্রচার চালিয়েছে, চালাচ্ছে। একের পর এক নদী দূষণে পাশের এলাকার বহু মানুষের কাছে নদীর ব্যবহার অসম্ভব হয়ে পড়ছে। জল ব্যবহার বা মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নদীকে ঘিরে জীবিকার সামান্য সুযোগও নষ্ট হয়ে পড়ছে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘ বলছে, সমুদ্রের প্রাণীদের শ্বাস আটকানোর মতো অবস্থা করছে প্লাস্টিকের বাড়াবাড়ি। বিশ্বে প্রতি বছর উৎপাদন করা হচ্ছে ৪০ কোটি টন প্লাস্টিক। তার অর্ধেকই একবার ব্যবহারের জন্য। তারপর ফেলে দেয়া হচ্ছে, মিশছে জলভাগে বর্জ্য হিসেবে।
কেবল জলই নয়। ৫ মিলিমিটার ব্যাসার্ধের কম প্লাস্টিক কণা মিশছে বাতাসেও। বছরে একজনের শরীরে মিশছে প্লাস্টিকের ৫০ হাজার কণা। রাষ্ট্রসঙ্ঘ বলছে, এখনই না ঠেকালে ২০৪০’র মধ্যে নদী, সমুদ্রের জলে জমা হবে তিনগুন প্লাস্টিক। প্লাস্টিক যেহেতু পেট্রোপণ্য, বিশ্ব উষ্ণায়নে দায়ী গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমণও বাড়বে। প্যারিসে লক্ষ্য ছিল ২০৩০’র মধ্যে নির্গমণ অর্ধেক করতে হবে।
একবার ব্যবহার করে ফেলে না দিয়ে বারবার ব্যবহারের প্লাস্টিক দ্রব্য কমাতে পারে ৮০ শতাংশ দূষণ, বলছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ।
Comments :0