সিপিআই(এম) জেলা দপ্তরে হামলা হয়েছে বুধবার। প্রতিরোধ করায় জেলে যেতে হয়েছে সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দকে। তৃণমূল কংগ্রেসের হামলাবাজরা খোলা ঘুরেই বেড়াচ্ছে। ঘটনা পরম্পরায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বৃহস্পতিবারই মিছিল হয়েছে জলপাইগুড়িতে।
এসএফআই অফিস দখলের নামে সিপিআই(এম) জেলা কার্যালয় দখলের চক্রান্তকারী পুলিশের হাতে আটক তৃণমূল ছাত্র পরিষদ দুষ্কৃতীদের রাতে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও। পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৫ সিপিআই(এম) নেতার জামিন নাকচ করলো জলপাইগুড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত। তাঁদের ১৪ দিন জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
২১ তারিখ তাঁদের কেস ডায়েরি ও আহত পুলিশ কর্মীদের ইনজুরি রিপোর্ট আদালতে দাখিল করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী প্রদীপ চ্যাটার্জি। জলপাইগুড়িতে হামলার প্রতিবাদ জানান সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী।
সারা রাত পার্টি নেতাদের থানায় বসিয়ে রেখে পুলিশের উপর হামলা সহ বিভিন্ন ধারায় মিথ্যা মামলা দেয় পুলিশ। সকালে অসুস্থ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম সহ পার্টি নেতৃবৃন্দের মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর পর জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে বেলা ১টা নাগাদ নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে থানায় আটক পার্টি নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে যান প্রাক্তন সংসদ জিতেন দাস, সকালে দেখা করেন জলপাইগুড়ি শহরের সদর পূর্ব এরিয়া কমিটির সম্পাদক বিপুল সান্যাল, পার্টির জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য, প্রাক্তন সংসদ জিতেন দাস সহ অন্যান্য পার্টির নেতৃবৃন্দ।
পার্টি নেতাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে শুনে শিলিগুড়ি থেকে ছুটি আসেন দার্জিলিং জেলা পার্টির সম্পাদক সমন পাঠক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সিপিআই(এম) সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, গণতন্ত্র থাকলে সেখানে কোনো রাজনৈতিক দল ওপর কোনো রাজনৈতীক দলের অফিসে এই ভাবে হামলা চালাতে পারে না। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে আটক পার্টি নেতৃবৃন্দের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী জিতেন বসু সহ এআইএলইউ’র আইনজীবীরা।
পার্টি নেতাদের জামিন হয়নি শুনে জলপাইগুড়ি জেলা সিপিআইএম দপ্তরে জড়ো হওয়া বামফ্রন্ট ও জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। জেলা বামফ্রন্ট কার্যালয় সুবোধ সেন ভবনের সামনে থেকে অগণিত মানুষের প্রতিবাদ মিছিল জলপাইগুড়ি শহর পরিক্রমা করে মিছিলের স্লোগান ওঠে, ‘‘পুলিশ তুমি উর্দি ছাড়ো, তৃণমূলের ঝান্ডা ধর’’। মিছিল জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার দিকে এগোলে পুলিশ থানার সামনে পুলিশি ব্যারিকেড করে। র্যাফ ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। মিছিল থেকে পুলিশের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি তোলেন বাম কংগ্রেস কর্মীরা। বাম কংগ্রেস কর্মীদের এই বিরাট মিছিলে জলপাইগুড়ি শহর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্তব্ধ হয়ে যায়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ফরওয়ার্ড ব্লক রাজ্য সভাপতি গোবিন্দ রায়, সিপিআইএম(এল) নেতা প্রদীপ গোস্বামী, জাতীয় কংগ্রেস জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত, সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক মন্ডলী সদস্য কৌশিক ভট্টাচার্য, আরএসপি’র জেলা নেতা প্রকাশ রায় সহ বামফ্রন্ট ও জাতীয় কংগ্রেসের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
মিছিল শেষে জেলা বামফ্রন্ট দপ্তরের সামনে সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক মন্ডলী সদস্য কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নামে কিছু দুষ্কৃতীকে পাঠিয়ে বুধবার সিপিআই(এম) জেলা কার্যালয় দখল করার কথা ভেবেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এসএফআই কর্মী ও পার্টি কর্মীরা গতকাল তাদের যোগ্য জবাব দিয়েছে। ওদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। পুলিশ ঠান্ডা মাথায় মিথ্যা মামলা দায়ের করল পুলিশ প্রশাসন। আজকের মিছিল জলপাইগুড়ি শহরে প্রমাণ করেছে মানুষ প্রতিবাদের ভাষা ভুলে যাননি।
যাদবপুরে র্যাগিংয়ে নিহত ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর জন্য বিচার চেয়ে রাজ্যের সর্বত্র রাস্তায় এসএফআই। খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত চালানোর দাবি তুলেছে সিপিআই(এম)। ঘটনায় জড়িতদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে পরিচিত এমন সংগঠনের যোগসাজশ মিলেছে যারা বরাবর এসএফআই বিরোধী। বুধবারই যাদবপুরে তৃণমূল ডেপুটেশন দিতে গেলে বহিরাগতদের ঘিরে প্রতিবাদ জানায় ছাত্রদের একাংশ। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতাদের যাদবপুরের ক্যাম্পাসে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে বেছে বেছে সিপিআই(এম) দপ্তরে হুজ্জুতি চালায় তৃণমূল।
পুরো ঘটনাকে সিপিআই(এম) এবং সংগঠিত বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে চালিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং। তিনিই জল ঘোলা করতে সরাসরি সিপিআই(এম)’কে দায়ী করে হস্টেলে অত্যাচারের জন্য। অথচ তাঁরই পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে যারা বা হস্টেল নিয়ন্ত্রণ করে যে অংশ, বরাবর সিপিআই(এম) বিরোধী রাজনীতির সমর্থক তারা।
সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, ওপরতলাকে খুশি করতে সিপিআই(এম) নেতাদের গ্রেপ্তার করে জেলে ঢোকালো তৃণমূল। তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। বাড়িতে হামলা হলেও প্রতিরোধ হয়। পার্টি দপ্তরে হামলা হলেও প্রতিরোধ হবে। পুলিশ কিন্তু হামলাবাজদের ধরল না। ওরা ওপরকে খুশি করতে চাইছে। আমরা নিচ থেকে চাপ তৈরি করব। তৃণমূল এবং বিজেপি, গণতন্ত্র বিরোধী দুই দলকে রুখতে সমবেত করব বিভিন্ন অংশকে।
সলিল আচার্য বলেন, ওপরতলাকে খুশি করতে সিপিআই(এম) নেতাদের গ্রেপ্তার করে জেলে ঢোকালো তৃণমূল। তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। বাড়িতে হামলা হলেও প্রতিরোধ হয়। পার্টি দপ্তরে হামলা হলেও প্রতিরোধ হবে। পুলিশ কিন্তু হামলাবাজদের ধরল না। ওরা ওপরকে খুশি করতে চাইছে। আমরা নিচ থেকে চাপ তৈরি করব। তৃণমূল এবং বিজেপি, গণতন্ত্র বিরোধী দুই দলকে রুখতে সমবেত করব বিভিন্ন অংশকে।
Comments :0