অনিল কুণ্ডু : বারুইপুর
বিকল্প পঞ্চায়েত। সিপিআই(এম) প্রার্থীরাই মানুষকে নিয়ে বিকল্প পঞ্চায়েত তৈরি করবেন। নিজেরাই নিজেদের নামে প্যাড, স্ট্যাম্প করে নেবেন। প্রশাসনের আধিকারিকদের কাছে এলাকার মানুষের সমস্যা নিয়ে ওই প্যাডেই চিঠি পাঠাবেন। শুক্রবার বারুইপুরের ধপধপি ২ ও শংকরপুর ১ অঞ্চলে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিআই(এম) প্রার্থীদের সংবর্ধিত করে সাফ জানিয়ে দিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী।
এদিন বারুইপুরের ধপধপি বাজারে সাখেরা সরদারসহ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিআই(এম) প্রার্থীদের সংবর্ধিত করা হয়। প্রার্থীদের নিয়ে বিজয় মিছিল পরিক্রমা করে ওই এলাকায়। ধপধপি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১৮টি আসনের মধ্যে ১৬টি আসনে মানুষের ভোটে সিপিআই(এম) প্রার্থীরা জিতেছিল। তৃণমূল জেতে মাত্র ২টি আসনে। অথচ গণনা কেন্দ্র থেকে সিপিআই(এম) প্রার্থী, কাউন্টিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয় তৃণমূলের বাহিনী। প্রশাসনের সহযোগিতায় গণনা হেরে যাওয়ার পরও তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ের সার্টিফিকেট পেয়েছে। নির্বাচনে ভোট লুট, গণনায় ডাকাতি করেছে।
সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ওই সার্টিফিকেটের কোন মূল্য নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জাল ডক্টরেট ডিগ্রীর সার্টিফিকেটের যেমন কোন মূল্য নেই। তিনি বলেন, পঞ্চায়েতে লুটেরাদের বিরুদ্ধে মানুষ ভোট দিয়েছে। মানুষের ভোটে সিপিআই(এম) প্রার্থীরা জিতেছেন। তৃণমূলের হেরো প্রার্থীদের জয়ের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।
বারুইপুরের শংকরপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতেও একই ভাবে তৃণমূলের হেরো প্রার্থীদের জয়ের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। শংকরপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের মধ্যে সিপিআই (এম) ১২টি আসনে ও বাম সমর্থিত নির্দল ৪টি আসনে প্রার্থী দেয়। মনোনয়নে বাধা দিয়ে ২টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় জিতে নেয় তৃণমূল। গণনায় সিপিআই(এম) ও বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হলেও কারচুপি করে মাত্র ৪টি আসন সিপিআই(এম) প্রার্থী ও ১টি আসন বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ছাড়া বাকি সবকটি আসন নিজেদের দখলে নেয় তৃণমূল প্রার্থীরা। তৃণমূলের হেরো প্রার্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।
এদিন শংকরপুর বাজারে সিপিআই(এম)’র আহ্বানে প্রার্থীদের নিয়ে কার্যত বিজয় সমাবেশ করা হয়। প্রার্থীদের মালা পড়িয়ে সংবর্ধিত করা হয়।
এই সভায় সুজন চক্রবর্তী বলেন, লুটেরাদের সার্টিফিকেট মানুষ মানবে না। লুটেরাদের পঞ্চায়েত মানুষ মানবে না। জয়ের সার্টিফিকেট না পেয়েও পঞ্চায়েত সদস্যর মতোই মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই কাজ করবে বাম ও বাম সমর্থিত প্রার্থীরা। প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জাল সার্টিফিকেটের যেমন হাল হয়েছে তেমনই হেরোদের সার্টিফিকেটেরও একই হাল হবে। আসলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হেরে গিয়ে কাগজ ছিনিয়ে নিয়েছে লুটেরারা। গণতন্ত্রকে ভুলুন্ঠিত করেছে। মানুষের সামনে চোখ তুলে কথা বলার কোন অধিকার নেই তৃণমূলের হেরো প্রার্থীদের।
তিনি বলেন, পরীক্ষায় পাশ করে চাকরি না পাওয়ায় কলকাতায় আন্দোলন করছে। ফেল করাদের চাকরি দিয়েছে। তেমনই নির্বাচনে মানুষ যাদের ভোট দিয়ে জয়ী করেছে তাঁরা সার্টিফিকেট পেলো না। হেরোদের ওই সার্টিফিকেটের কোন মূল্য নেই।
নির্বাচনের দিন শংকরপুরে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ জন সিপিআই(এম) কর্মীকে এই সভা মঞ্চে সওবর্ধিত করা হয়। এই সভাকে কেন্দ্র করে বামপন্থী কর্মী, সমর্থক ছাড়াও বহ সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সভায় মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণই এদিন জানান দেয় লুটেরাদের ভোট দেয়নি মানুষ। সুজন চক্রবর্তী ছাড়াও স্থানীয় পার্টি নেতৃত্ব বক্তব্য রাখেন।
Comments :0