West Bengal Panchayat Election Usthi

দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করতে তৈরি পবিত্র মণ্ডল, শুভশ্রীরা

রাজ্য

West Bengal Panchayat Election Usthi


প্রতীম দে, উস্থি


‘‘সিপিআই(এম) দল করি বলে কোন সরকারি প্রকল্পের সাহায্য পাই না। সত্তর বছরের বেশি বয়স হয়েছে তাও বার্ধক্য ভাতা পাই না।’’
-দুয়ারে সরকারে ফর্ম জমা করেছিলেন?
- হ্যাঁ।
-তাও হয়নি?
-না। বিডিও অফিসে ফর্ম দিয়ে এসেছি তাও দেয়নি।
বাইরে তখন নাগারে বৃষ্টি। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী এই বৃষ্টি চলবে। কিন্তু সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পবিত্র মণ্ডল কবে পাবেন তার কোন পূর্বাভাস নেই।
পবিত্র মণ্ডল। উস্থির বাসিন্দা। উস্থি, ডায়মন্ড হারবার লোকসভার মধ্যে পড়ে। যার সাংসদ তৃণমূল নেতা অভিষেক ব্যানার্জি।
উস্থির কানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২০ নম্বর বুথের সিপিআই(এম) প্রার্থী পবিত্র মণ্ডল। ছেলে, পুত্রবধূ তৃণমূল করে তাই বাড়িতে খাবার জোটে না। দলীয় কার্যালয়েই তাঁর খাওয়া দাওয়া হয়। রাতের বেলা মুড়ি, চিঁড়ে খেয়ে শুতে হয়।
বয়স হয়েছে। শারীরিক ক্ষমতা কমেছে। কিন্তু লড়াই করার মানসিকতা এখনও কমেনি। তিনি বলেন, ‘‘কোন কষ্ট নেই বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না বলে। চোরদের চোর বলব- না তো কি করব?’’


কিছুটা থেমে আবার বলেন, ‘‘আগের বার ভাইপোর লোকেরা এখানকার মানুষদের ভোট দিতে দেয়নি। আমাদের প্রার্থী দিতে দেয়নি। এবার আর হবে না ওই সব। দেখে নেবো কি করবে। ভোটের দিন মাঠ ছাড়ব না।’’
উস্থি সহ গোটা ডায়মন্ড হারবার জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় সিপিআই(এম) প্রার্থী কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছে তৃণমূল। চাপা সন্ত্রাস রয়েছে। আবার কোথাও সরাসরি আক্রমণ। কিন্তু আক্রমণ হলেও তার প্রতিরোধ হচ্ছে। 
পবিত্র মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়ে বছর পঁচিশের শুভশ্রী মণ্ডল। শুভশ্রী বাংলায় স্নাতকোত্তর। এবার জেলা পরিষদের আসন থেকে ‘কাস্তে হাতুড়ি তারা’র প্রার্থী। শুভশ্রী জানে লড়াই কঠিন, আর এই কঠিন লড়াই জিততে তৈরি তিনি। শুভশ্রীর কথায়, ‘‘মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। সবাই প্রকাশ্যে বলছে না। তৃণমূলের তোলাবাজি, জুলুমের বিরুদ্ধে মানুষ এক জোট হচ্ছেন।’’
রবিবার শুভশ্রী যখন পদ্মগ্রামে প্রচারে যায় তখন বাধা দেয় তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি ওই এলাকা তারা ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল থাকবে না। এক কথায় ডায়মন্ড হারবার মডেল। বিরোধী শূন্য গ্রাম চায় ‘ভাইপো’। 


তবে বাধা দিয়ে সেদিন কোন লাভ হয়নি শাসক দলের বাহিনীর। পাল্টা প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় তাদের। পতাকা লাগাতে গেলে সিপিআই(এম) কর্মীদের ওপর হামলা করতে গেলে রুখে দাঁড়ায় প্রচারে অংশ নেওয়া বাকি কর্মীরা। দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় বচসা বাঁধে। তারপর গ্রামে পতাকা লাগিয়ে প্রচার করেই বাড়ি ফেরেন শুভশ্রী মণ্ডলরা। 
ওই বুথ থেকে সিপিআই(এম)’র হয়ে লড়ছেন তানজিলা বিবি সরদার। তার স্বামী পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ইসলাম শেখ। স্বামী, স্ত্রী দুজনে প্রার্থী হওয়ায় হুমকির মুখে তাদের পড়তে হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চাপ দেয় তৃণমূল। কিন্তু ২০১৮ থেকে ২০২৩ এর পরিস্থিতি অনেক আলাদা। মনোনয়ন যাতে না তুলতে হয় তার জন্য এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় থেকেছে এই দম্পতি। তাদের মতো নিজের মনোনয়ন বাঁচাতে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী এসফার হালদারও এলাকার বাইরে থেকেছেন। 


বিধানসভা নির্বাচনের সময় এলাকায় বিজেপি’র প্রভাব থাকলেও এবার মাঠে সেভাবে নেই। স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দের কথায়, এবার তৃণমূলের সাহায্যে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। সিপিআই(এম) নেতা সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল এবার বিজেপির প্রার্থী ঠিক করে দিয়েছে। মনোনয়ন ঘিরে যখন অশান্তি হচ্ছে তখন পিছন দিয়ে তৃণমূল বিজেপি’র লোকদের মনোনয়ন জমা করিয়েছে যাতে বিরোধী ভোট ভাগ হয়।’’
তৃণমূলের দুর্নীতি যেমন প্রচারে তুলে ধরছেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা তার সাথে সাথে কানপুরের বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, উস্থি প্রাইমারি স্কুলের ভাঙা বেঞ্চের বদলে ভালো বেঞ্চের ব্যবস্থা, প্রাথমিক এবং ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নতির মতো একাধিক বিষয় জায়গা পাচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment