Duare Sarkar Bengal

চলতি বছরে নেই দুয়ারে সরকার, এবার কি বাতিলের পথে প্রকল্প?

রাজ্য

অষ্টম পর্বেই কি সমাপ্ত হয়ে গেল রাজ্য সরকারের দুয়ারে সরকার প্রকল্প?
চলতি বছর শেষ হতে আর মাত্র চারদিন বাকি। এখনও পর্যন্ত চলতি বছরে রাজ্য সরকারের ঘোষিত দুয়ারে সরকার শিবির আয়োজন করার কোনও খবর নেই। এবার নবম পর্যায়ের দুয়ারে সরকার শিবির আয়োজন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরে আর দুয়ারে সরকার শিবির আয়োজনের কোনও পরিকল্পনা এখনও তৈরি করেনি রাজ্য সরকার।
রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে আগস্ট মাসে দুয়ারে সরকার শিবির আয়োজন করার পরিকল্পনা নেওয়ার কথা শুরুতে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু আর জি কর হাসপাতালের পাশবিক ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে প্রবল বিক্ষোভ আন্দোলন পর্বে শিবির আয়োজন নিয়ে আর এগতে পারেনি সরকার। পরে সময় পিছিয়ে করার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সরকার ঝুঁকি নিতে চায়নি। আসলে সরকারের আশঙ্কা ছিল, আর জি কর ঘটনা নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভ শেষ পর্যন্ত সরকারের দুয়ারে আছড়ে পড়তে পারে। ফলে আর অগ্রসর হওয়ার কথা ভাবা হয়নি। পরিবর্তে অতীতের মতো বিভিন্ন দপ্তরকে স্বাধীনভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নাগরিক পরিষেবা প্রদানের কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে। 
গত ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এরাজ্যে এক ছাতার তলায় নাগরিক পরিষেবা প্রদানের জন্য চালু হয়েছিল দুয়ারে সরকার শিবির। রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে এমনকি মোদী সরকারের কাছ থেকেও সরকারি এই প্রকল্পের জন্য পুরস্কার এসেছে রাজ্যের কাছে। কিন্তু চলতি বছরে কেন দুয়ারে সরকার শিবির আয়োজন করা হচ্ছে না, তা নিয়ে নবান্ন থেকে কোনও মন্তব্য নেই। ক্ষমতায় এসে রাজ্যস্তরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক করতেন মমতা ব্যানার্জি। একইসঙ্গে জেলায়, জেলায় মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিবরা উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে যোগ দিতেন। এখন রাজ্যস্তরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক হলেও জেলাস্তরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক উঠে গেছে। জেলাস্তরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক বাতিল করে দুয়ারে সরকার শিবির থেকে পরিষেবা প্রাপকদের সুবিধাদান অনুষ্ঠান করে মমতা ব্যানার্জি সুবিধা তুলে দিতেন। এবার সেই পথও কী বন্ধ হওয়ার পথে?
গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিন অষ্টম পর্যায়ের দুয়ারে সরকার শিবিরের আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকার। পরবর্তীকালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণের সেই সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। শিবিরে আবেদন জমা পড়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আবেদনের তথ্য যাচাই করে পরিষেবা প্রদান করা হয়েছিল। তারপর গোটা দেশের সঙ্গে এরাজ্যেও লোকসভা ভোটের আদর্শ আচরণ বিধি চালু হয়ে যায়। ভোটপর্ব মেটার পর দুয়ারে সরকার শিবির নিয়ে আর সরকারের তরফ থেকে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা ছিল, বছরে দু’বার রাজ্যবাসীর কাছে নাগরিক পরিষেবা প্রদানের জন্য দুয়ারে সরকার শিবির আয়োজন করার। প্রথম শিবির হবে আগস্ট মাসে আর দ্বিতীয় শিবির আয়োজিত হবে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যবর্তী সময়ে।
রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘দুয়ারে সরকার শিবিরের ক্রমশ প্রয়োজন ফুরিয়ে আসছে। প্রত্যেক পর্যায়ে দুয়ারে সরকার শিবিরে নতুন প্রকল্প ঘিরে মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, সহ একাধিক প্রকল্পের উপভোক্তার সংখ্যা প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়াতে দুয়ারে সরকার শিবিরের গ্রহণযোগ্যতা আর থাকছে না।’’ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২ কোটির ওপর মহিলাকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আর্থিক অনুদান দিচ্ছে সরকার। গত নভেম্বর মাসে নতুন করে ৫ লক্ষ ৭ হাজার মহিলাকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে। এই মহিলারা গত বছর ডিসেম্বর মাসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আবেদন করেছিলেন। 
মূলত লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষকবন্ধু প্রকল্প, ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড সহ এসসি, এসটি ও ওবিসি শংসাপত্রের জন্যই দুয়ারে সরকার শিবির মানুষের ভিড় জমতো। প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষকবন্ধ প্রকল্পে উপভোক্তা প্রায় সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রীয় সরকার টাকা বন্ধ করে রাখার অন্যতম কারণ ভুয়ো জবকার্ড। ফলে জবকার্ড তৈরি করা নিয়ে আর নতুন করে বিতর্ক বাড়াতে চায় না রাজ্য সরকার। তারপরেও জাতিগত শংসাপত্র নিয়েও ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। তারসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে প্রায় ৫ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল। যা নিয়ে মামলা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারধীন। একাধিক কারণে আর রাজ্য সরকারের দুয়ার সরকার শিবির আয়োজন করার ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত অনীহা।
সাম্প্রতিক সময়ে গত অক্টোবর মাস থেকে বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মচারীদের ব্যবহার করে আবাস যোজনার সমীক্ষায় বাড়ি, বাড়ি পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকার। এখন সেই আবাস তালিকায় যোগ্য ১২ লক্ষ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে ধাপে ধাপে প্রথম পর্বের ৬০ হাজার টাকা পাঠানো শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আগামী বছর মে মাসে আরও ৮ লক্ষ ও ডিসেম্বর মাসে ৮ লক্ষ, মোট ১৬ লক্ষ নতুন উপভোক্তার কাছে আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা তুলে দেবেন আগাম ঘোষণা করে রেখেছেন। রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এরাজ্য সরকারের যাবতীয় উদ্যোগ ভোটকে সামনে রেখে। এখন ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখে আবাসের টাকা দেওয়ায় মুখ্য কাজ। ফলে দুয়ারে সরকার শিবির নিয়ে এখনও কোনও উদ্যোগের কথা ভাবা হচ্ছে না।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment