প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বৃহস্পতিবার রাত আটটা নাগাদ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ভারতের প্রক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তাঁকে দিল্লির এইমসের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে আইসিইউয়ে ভর্তি করা হয়। যদিও কী কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেই বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
যেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থেকেই তাঁকে সরাসরি হাসপাতালের আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় দু’ঘন্টা ধরে চিকিৎসকরা যাবতীয় চেষ্টা চালালেও শেষরক্ষা হয়নি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তাঁর স্ত্রী এবং তিন কন্যা রয়েছেন।
এদিন দিল্লি এইমস’র তরফে জানানো হয়, ‘বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার চিকিৎসা চলছিল। এদিন বাড়িতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। বাড়িতেই তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু হয়। রাত ৮টা বেজে ৬ মিনিটে হাসপাতালে আনা হয় তাঁকে। কিন্তু সব চেষ্টা সত্ত্বেও ওঁকে ফেরানা যায়নি। রাত ৯টা বেজে ৫১ মিনিটে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।’
তাঁর মৃত্যুসংবাদে পেয়ে শোকের ছায়া নেমে আসে দেশের রাজনৈতিক মহলে। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে তড়িঘড়ি চলে আসেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং তাঁর মা সোনিয়া গান্ধী। পর পর আসতে থাকেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা।
মনমোহন সিং ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে ডঃ সিং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক হন। এর পরেই, ১৯৬২ সালে ডঃ সিং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড কলেজ থেকে অর্থনীতিতে ডি. ফিল পান। অর্থনীতিবিদ হিসাবে জীবন শুরু। সেখান থেকেই তাঁর রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ।
১৯৭১ সালে ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রকের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দেন। ১৯৯২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হন। এরপর অর্থ মন্ত্রকের সচিব, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান, ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান। ১৯৯১ – ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভারতের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।
১৯৮৭ সালে পদ্মভূষণে, ১৯৯৫ সালে তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের জওহরলাল নেহরু জন্ম শতবার্ষিকী পুরস্কার পান। ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তিনি পান অর্থমন্ত্রীদের জন্য ‘এশিয়া মানি’ পুরস্কার। ১৯৯৩ সালেই তিনি বছরের সেরা অর্থমন্ত্রী হিসাবে পান ‘ইউরো মানি’ পুরস্কার। ১৯৫৬ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডঃ সিং পান অ্যাডাম স্মীথ পুরস্কার’। ১৯৫৫ সালে পান কেমব্রিজ – এর সেন্ট জনস কলেজের রাইট্স পুরস্কার অর্থনীতিতে তাঁর অসাধারণ কাজের স্বীকৃতিতে।
১৯৯১ সালে পি ভি নরসিমা রাও সরকারের অর্থ মন্ত্রী হিসাবেই তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। সেই বছরই তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন। পাঁচ বছর অর্থ মন্ত্রী থাকাকালীন বিতর্ক সবসময় তাড়া করে বেড়িয়েছে তাঁকে। দক্ষিণপন্থী অর্থনীতির সমর্থকরা দু’হাত তুলে তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কারের নীতিকে প্রশংসা করতেন। আবার তাঁর কড়া সমালোচক ছিলেন বামপন্থীদের পাশাপাশি মধ্যপন্থীরাও, যাঁরা বিশ্বাস করেন দেশের মৌলিক ক্ষেত্র থেকে রাষ্ট্রের হাত গুটিয়ে নেওয়া মোটেই দেশ তথা দেশের পক্ষে সুখকর নয়। বস্তুত, তাঁর সময়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়।
২০০৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এর আগে ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিরোধী দলনেতা ছিলেন। ২০০৪ সালের ২২ মে তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। এই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পর পর দু’বার প্রধানমন্ত্রীর পদে ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ২০০৯ সালের ২২ মে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশ বিদেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে রাজনীতিবিদরা। শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন শোক প্রকাশ করে সিপিআই(এম)-র কোঅর্ডিনেটর প্রকাশ কারাত বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন তিনি। শোক জানিয়ে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, তিনি ছিলেন আত্মপ্রচারবিমুখ। অত্যন্ত সহজ সরল জীবনযাপন করতেন তিনি। তাঁর আমলেই আলিগড় সহ ১০০ বছর অতিক্রান্ত বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সারে ভরতুকি, ১০০ দিনের কাজ চালু, খাদ্য নিরাপত্তার মতো জনমুখী কাজ হয়েছিল তাঁর আমলে। একই সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি ছিলেন দায়বদ্ধ। শোক জানিয়ে বিমান বসু বলেছেন, অনেকগুলি দল নিয়ে তিনি দক্ষতার সঙ্গে সরকার পরিচালনা করেছিলেন।
Comments :0