MANIPUR "INDIA" DELEGATION

অবস্থা স্বাভাবিক হলে মানুষ ত্রাণ শিবিরে কেন, মণিপুরে পৌঁছে প্রশ্ন বিরোধীদের

জাতীয়

বিরোধী সাংসদদের এই ছবি পোস্ট করেছেন এএ রহিম।

বিরোধী রাজনৈতিক বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’-র প্রতিনিধিদল পৌঁছালো মণিপুরে। প্রতিনিধি দলে রয়েছে বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন দলের সাংসদরা। 

প্রতিনিধি দলের নেতা কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেছেন, আমরা এখানে রাজনীতি করতে আসিনি। মণিপুরের গোষ্ঠী সংঘর্ষ ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমরা সমস্যার শিকড়ে পৌঁছাতে এসেছি। গোষ্ঠী সংঘর্ষের শিকার মানুষের সঙ্গে দেখা করছি, তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছি। গোটা বিশ্ব দেখছে মণিপুরে কী ঘটছে। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করা হোক।

এই সংসদীয় প্রতিনিধি দলে সিপিআই(এম)’র তরফে রয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ এ এ রহিম। বিরোধীদের তরফে এই তৎপরতা শুরু হওয়া বেজায় চাপে পড়েছে বিজেপি। বিজেপি নেতাদের কথা থেকেই তা স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বিরোধী সাংসদদের আক্রমণ করে বলেছেন, মণিপুর যখন দিনের পর দিন অবরুদ্ধ হয়ে থাকত,  তখন এঁদের মুখে একটাও শব্দ শোনা যেত না। এখন এঁরা রাজনীতি করতে মণিপুরে গিয়েছেন। মণিপুর থেকে ফিরে সংসদ অচল করে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে বিরোধী সংসদরা। 

একই সঙ্গে অনুরাগ ঠাকুর অধীর চৌধুরীকে আক্রমণ করে বলেছেন, আমি আশা করব অধীর চৌধুরী এই প্রতিনিধি দল নিয়ে পশ্চিমবাংলাতেও পৌঁছাবেন। কারণ সেখানেও মহিলাদের উপর অত্যাচার চলছে।  

বিরোধীরা স্পষ্ট করেই বলেছেন যে কোনও অত্যাচারই নিন্দনীয়। কিন্তু মণিপুরে দিনের পর দিন আইনের শাসন নেই। বিবস্ত্র করে মহিলাদের হাঁটানোর পরও প্রায় তিন মাস দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংগঠিত অপরাধে মদত দিচ্ছে প্রশাসন। রাজ্য এবং কেন্দ্রের সরকার চুপ। দেশের মানুষের কাছে এই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। ক্রীড়া মন্ত্রী নজর ঘোরানোর চেষ্টা হলেও বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি প্রান্তে মালদহে প্রকাশ্যে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মিছিল করেছে বামফ্রন্ট।  

প্রসঙ্গত, মে মাসের মাঝ থেকে গোষ্ঠী সংঘর্ষের আগুনে জ্বলছে মণিপুরে। সরকারি হিসেবে এখনো অবধি সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪০ জনের বেশি। বেসরকারি মতে সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি। ইতিমধ্যেই সেখানে মহিলাদের বিবস্তর করে হাঁটানোর ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। নিগৃহীতাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। এই ঘটনা কয়েক মাস পুরোনো হলেও, পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মণিপুরের বিজেপি সরকার বাধ্য হন অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। 

মণিপুরের সংঘর্ষের পরিস্থিতিতে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা। দেশ জোড়া জনমতের চাপের সামনেও যদিও মৌন হয়ে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর মৌনতা ভঙ্গ করতে ইতিমধ্যেই আস্থা ভোটের নোটিশ দেওয়া হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’-র  তরফে। 

বিরোধী সাংসদদের কাছে রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য দাবি জানিয়েছে মণিপুরের আদিবাসী সংগঠনগুলি। এদিন এই সাংসদদের সঙ্গে দেখা করেন আদিবাসী সংগঠনগুলির মঞ্চ ইন্ডিয়ান ট্রাইবাল ফোরামের নেতৃবৃন্দ। এখানে তারা জানান, বিজেপি সরকারের সময়ে রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং হিংসা থামাতে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রয়োজন। 

মণিপুরে মেইতেই সম্প্রদায় ভুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আদিবাসী কুকিদের মধ্যে বিরোধ লাগাতার সংঘর্ষ তৈরি করেছে। বিভিন্ন অংশই বলেছে যে রাজ্যের বিজেপি সরকার জনগোষ্ঠী জনিত বিরোধে মদত দিয়েছে। মদত জুগিয়েছে উগ্রপন্থী অংশগুলিকে। আধিপত্যবাদের ধারণা ছড়িয়ে ভোটে ফয়দা তুলতে চেষ্টা করেছে। সামাজিক ফাটল বিভাজনের চেহারা নিয়েছে দ্রুত।  

বিরোধী সাংসদরা ইতিমধ্যেই একাধিক ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখেছেন। এক নিগৃহীতার মায়ের সঙ্গে দেখা করেন ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি। 

কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেছেন, বিজেপি বারবার বলছে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে এত মানুষ ত্রাণ শিবিরে থাকছেন কেন?

Comments :0

Login to leave a comment