আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাশ বই ইত্যাদি জেরক্স করতে হয়েছে বার দশেক। নাই নাই করে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস, 'দুয়ারে সরকার' ক্যাম্প এবং বিডিও অফিসেও যাতায়াত করা হয়ে গেছে ছয় সাত বার। ব্যাংকে কতবার যাওয়া হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। করিমপুর -১নং ব্লকের অধীন মধুগাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরাতন চামনা গ্রামের সোহাগী মণ্ডল 'তপশিলি বন্ধু' প্রকল্পে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পেতেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসে সর্বশেষ এক হাজার টাকা পাওয়ার পর তাঁর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। পরপর কয়েক মাস একাউন্টে ভাতার টাকা না ঢোকায় সোহাগীদেবী গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে যান, টাকা না ঢোকার কারণ জানতে। গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কি কারণে টাকা ঢুকছে জানতে হলে বিডিও অফিসে যেতে হবে। তিনি পরের দিনই টোটো ভাড়া করে হাজির হন বিডিও অফিসে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁদের একাউন্টটি স্বামী স্ত্রীর নামে যৌথ একাউন্ট হওয়ায় টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গেল একাউন্ট না হলে টাকা ঢুকবেনা। মাস তিনেক ধরে, বার কয়েক ব্যাংকে হত্যে দিয়ে ওই একাউন্ট থেকে সোহাগীদেবী তাঁর স্বামীর নাম বাদ দেন এবং নতুন পাশ বইয়ের জেরক্স কপি বিডিও অফিসে জমা করেন। কয়েক মাস অপেক্ষা করার পর দেখা যায় টাকা ঢোকেনি। সোহাগী মণ্ডল আবার বিডিও অফিসে যান তদ্বির করতে। সেখান থেকে জানানো হয় 'সব ঠিকই আছে, পরের মাস থেকে টাকা ঢুকবে '। আবার মাস চারেক অপেক্ষার পর সোহাগীদেবী তৃতীয় বারের জন্য বিডিও অফিসে যান। বিডিও অফিস থেকে জানানো হয়, 'সমস্ত কাগজ পত্র জেলায় পাঠানো হয়েছে, জেলা থেকে টাকা ছাড়লেই পেয়ে যাবেন'। প্রতি মাসে এক বুক আশা নিয়ে ব্যাংকে খোঁজ নেন সোহাগী মণ্ডল, 'কিন্ত টাকার দেখা নাই রে'। ২০২৪ এর সেপ্টেম্বর মাসে আবার বিডিও অফিসে যান তিনি। কম্পিউটারের নথি ঘেঁটে তাঁকে একটা কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয়, যাতে লেখা আছে '২০২৪-২৫ অর্থ বর্ষের টাকা আন্ডার প্রসেসিং'। সুতরাং অল্পদিনের মধ্যেই টাকা ঢুকে যাবে। না ঢুকলে জেলায় গিয়ে খোঁজ নিতে হবে বিডিও অফিসের আর কিছু করার নেই। ২০২৫ এর মার্চ মাসেও ব্যাংকে খোঁজ নিয়েছেন সোহাগীদেবী। টাকা ঢোকেনি। সোহাগী মণ্ডলের গ্রাম থেকে বিডিও অফিসের দূরত্ব প্রায় ২০ কিমি, ব্যাঙ্কের দূরত্ব কমবেশী সাত কিমি এবং জেলা সদর অর্থাৎ ডিএম অফিসের দূরত্ব প্রায় একশো। প্রতিবার জেরক্স করতেও বেশ কটা টাকা খরচ হয়ে যায়।
Karimpur
বছর পার, একাধিক জায়গায় ঘুরে পাচ্ছেন না সরকারি প্রকল্পের সুবিধা

×
Comments :0