Yuvashakti

সারা দেশে বিজেপি’কে বিচ্ছিন্ন, রাজ্যে হারাতে হবে তৃণমূলকে, নেতৃবৃন্দ

জেলা

Yuvashakti



শম্ভুচরণ নাথ: আলিপুরদুয়ার 


যেভাবে এরাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে তা গোটা দেশে নজিরবিহীন। রাজ্য নির্বাচন কমিশন, রাজ্য প্রশাসন, পুলিশ, এসডিও, বিডিও ভোট লুট করতে যেরকম ন্যক্কারজনকভাবে শাসক দলকে সাহায্য করেছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। কেন্দ্রে বিজেপি, আর রাজ্যে তৃণমূল— এদের মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। তাই সারা দেশে বিজেপি’কে বিচ্ছিন্ন করা এবং রাজ্যে তৃণমূলকে পরাজিত করতে হবে। তৃণমূলকে পরাজিত করতে না পারলে বিজেপি’কে সরানো যাবে না। রবিবার ডিওয়াইএফআই’র মুখপত্র ‘যুবশক্তি’র ৫৬তম প্রতিষ্ঠা দিবসের আলোচনাসভায় একথা বলেছেন গণআন্দোলন ও যুবআন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। 
এদিন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিকে নিয়ে এই আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয় আলিপুরদুয়ার পৌর হলে, বিষয় ছিল ‘রাজনীতির বর্তমান সন্ধিক্ষণে বাম যুবদের দায়িত্ব ও কর্তব্য’। সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক, গণআন্দোলনের নেতা আভাস রায়চৌধুরি, শ্রমিক আন্দোলন ও গণআন্দোলনের নেতা জিয়াউল আলম, ডিওয়াইএফআই’র সাধারণ সম্পাদক হিমঘ্নরাজ ভট্টাচার্য, সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, ‘যুবশক্তি’র সম্পাদক কলতান দাশগুপ্ত বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়ার যুবকর্মী শহীদ কমরেড মনসুর আলমের পরিবারের জন্য সাহায্য তাঁর কাকা জাকির হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে। 


এদিন আলোচনা করতে গিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘‘নাগপুরের প্রোডাক্ট তৃণমূল। ২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যে বিজেপি’র বাড়বাড়ন্ত একমাত্র তৃণমূলের জন্য। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে শ্রমজীবী মানুষের উপর যে আক্রমণ হচ্ছে তা আমরা ত্রিপুরার দিকে তাকালেই দেখতে পাই। বিজেপি’র শাসনে দেশে মানুষের অসহায়তা, বৈষম্য, দারিদ্র্য সীমাহীন জায়গায় পৌঁছেছে। মানুষের জীবনধারণের উপাদানগুলি আক্রান্ত। রাষ্টায়ত্ত শিল্প বিক্রি করে দিচ্ছে, কৃষিতে আয় বাড়েনি। ব্যাঙ্ক, বিমা, বনজ সম্পদ লুট করেছে। চা বাগান, কয়লা খাদান, কোথাও নিয়োগ নেই। বাধ্য হয়ে তাঁরা ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন কাজের জন্য। বাংলায় কোনও কাজ নেই, মানুষ হাহাকার করছে কোথায় কাজ খুঁজে বেরিয়েছে, রাষ্ট্রের কোনও দায়িত্ব নেই। সর্বত্র লুটের রাজনীতি চলছে। একদিকে, লুটেরাদের পৌষমাস, অন্যদিকে, শ্রমজীবী মানুষ, শ্রমজীবী ছাত্র-যুবদের সর্বনাশ।’ 
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সদ্য পঞ্চায়েত নির্বাচনে দেখা গিয়েছে, আমাদের বহু যুবকর্মী লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়ে আক্রমণকে  প্রতিহত করেছেন। রাজ্যের মানুষ এবারে পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের অনেকটা এগিয়ে দিয়ে আমাদের সাহস জুগিয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই আরও তীব্র করতে হবে। আরএসএস-বিজেপি’র মতো অশুভ শক্তিকে দেশ থেকে সরাতে হলে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হলে, যুবসমাজকে আরও একবার পরীক্ষা দিতে হবে।’ জিয়াউল আলম বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের বৈচিত্র্য ও বিভিন্ন জনজাতির মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। আভাস রায়চৌধুরি  বলেন, ‘‘প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে প্রতিনিয়ত বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে চলছে। এবিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’’  


মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘‘যারা এরাজ্যে সাধারণ মানুষ, ছাত্র, যুবদের মাঝে বিভাজন করতে চাইছেন, তাদেরকে রুখে দিতে হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘যুব সমাজকে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, একে প্রতিহত করে যুবসমাজকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার বিভাজনের নীতি নিয়ে আদিবাসী, দলিত, সাধারণ মানুষকে বিভাজন করে ঐক্যকে দুর্বল করছে। কাজের দাবি, শিক্ষার দাবিতে লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির আক্রমণ প্রতিহত করে আমাদের কর্মীরা এগিয়ে যাবেন।’’ 
কলতান দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ষাটের দশক থেকে যে কোনও পরিস্থিতিতে যুবসমাজকে দিশা দেখিয়ে এসেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে পরাজিত করে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। তৃণমূল সরকার উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন জনজাতি উন্নয়নের জন্য পর্ষদ গঠন করেছে। কিন্তু কোথায় পর্ষদ, তার ভূমিকা কী, তা মানুষ দেখতে পাচ্ছেন না।’’
এদিন আলোচনাসভার শেষে শহরে একটি মিছিলে শামিল হন যুব নেতা-কর্মীরা। 

 

Comments :0

Login to leave a comment