Bashirhat Lynching

ফের ছেলেধরা সন্দেহে যুবককে মারধর, এবার বসিরহাটে

রাজ্য জেলা

প্রবীর দাস- বসিরহাট

রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভাঙড়ের পর এবার বসিরহাটে ঘটে গেল দলবেঁধে মারধরের ঘটনা। নির্মমভাবে মারধরের ঘটনায় রক্তাক্ত হলেন এক যুবক। পুলিশ সূত্রে জানা যায় মারধরের শিকার ওই যুবক বারাসত-২ব্লকের শাসনের বাসিন্দা এবং সে মানসিক ভারসাম্যহীন। আহত রক্তাক্ত যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রাথমিক চিকিৎসার পর ওই যুবককে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এত প্রচার সত্ত্বেও সোমবার ঘটনাটি ঘটে বসিরহাট পুলিশ জেলার অন্তর্গত মাটিয়া থানার রাজেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর মমিনপুর গ্রামে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এদিন এক যুবককে ছেলে ধরা সন্দেহে ইলেকট্রিক পোস্টে বেঁধে রেখে মারধর করে স্থানীয় কয়েকজন যুবক। তার পরিচয় ও ঠিকানা জানতে চায় স্থানীয় যুবকদের একটি অংশ। কিন্তু যুবকটি অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। তার পরেও তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং বেধড়ক মারধর করে। কেউ কেউ আবার তা ভিডিও করে। সংবাদমাধ্যমের হাতে মারধরের কয়েকটি ভিডিও আসে। তাতে দেখা যায় অজ্ঞাত পরিচয় ওই যুবককে যে যেখান থেকে পারছে চড়, কিল, ঘুষি, লাথি মারছে। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের আপত্তি সত্ত্বেও। তাঁকে তাঁর নাম, গ্রামের নাম, প্রধানের নাম বলতে বলা হয়। সে কিছুই বলতে না পারলে তাকে মেরে ফেলার কথা বলা হয়। উত্তেজিত যুবকদের চরম নির্মমতায় মূহুর্তে তাকে রক্তাক্ত করে ফেলা হয়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে মাটিয়া থানার পুলিশ এসে উত্তেজিত যুবকদের হাত থেকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের সামনেই চলে ফের একদফা মারধর। স্থানীয় এক মহিলাকেও দেখা যায় পুলিশ হাত থেকে ওই যুবককে ছিনিয়ে নিতে। এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত হাবিবুল্লাহ গাজি তাকেও দেখা যায় পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে ওই যুবককে। শেষে কোনক্রমে যুবককে উদ্ধার করে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। গাড়ি ছাড়লে গাড়ির পিছনের সিটে বসে থাকা ওই যুবককে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়া হয়। ইটের আঘাতে গাড়িটির কাঁচ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা একটি ভিডিওতে সেই হাবিবুল্লাহ গাজিকে বলতে শোনা যায়, যে দুটি বাচ্চাকে নিয়ে চলে যাচ্ছিল ওই যুবক তার মধ্যে তার একটি সন্তান ছিল। সে জানায় সে ওই সময় বাড়ি ছিল না। ফোনে খবর পেয়ে বাড়িতে এসে দেখে এই কান্ড। তবে হাবিবুল্লাহ গাজির অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে। সে জানায় রাজ্যে এরকম কত ঘটনা ঘটছে। আমরা বাবা মায়েরা আতঙ্কিত। আমরা কি ছেলে মেয়েদের নিয়ে বাড়ি বসে থাকবো? অথচ পুলিশ এসে বলছে ফাও। আমরা ওই যুবকের শাস্তি দাবি করছি। ভিডিওটিতে দেখা গেছে স্থানীয় এক মহিলাকে। নাম জানতে চাইলে তিনি তার নাম তুহিনা পারভিন বলেন। জানা যায় তিনি বাদুড়িয়ার বাসিন্দা। উত্তর মমিনপুর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। ভিডিওতে দেখা যায় তিনি দাবি করছেন তিনি নিজে দেখেছেন গ্রামের দুটি ছোট বাচ্চাকে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে ওই যুবক। তার হাতে খেলনা লজেন্স ইত্যাদি ছিল। পাড়ার কয়েকটি বাচ্চা খেলা করছিল। তখন ওই যুবক সেখানে গেলে ছুটে পালিয়ে যায় অন্যান্য বাচ্চারা। এরপর তিনি চেঁচামেচি করলে এলাকার যুবকরা ছুটে আসে এবং তাকে ধরে ফেলে। তার কাছ থেকে একটি বস্তা পাওয়া গেছে বলে জানায় স্থানীয়রা। যুবকটি ধরে স্থানীয় একটি মসজিদ সংলগ্ন স্থানে নিয়ে আসে। সেখানে ইলেকট্রিক পোস্টে বেঁধে চলে চরম প্রহার। যদিও ভিডিওগুলির সত্যতা যাচাই করে নি গণশক্তি। এদিনের এই ঘটনায় উত্তর মোমিনপুর গ্রামে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের এ হেন অমানবিক আচরণে উঠতে শুরু করেছে সমালোচনার ঝড়।

Comments :0

Login to leave a comment