Aadhar Card

আধার কার্ড বাতিলের চিঠি জেলায় জেলায় নাগরিকত্ব হারানোর আতঙ্কে মানুষ

রাজ্য জেলা

আধার কার্ড ‘ডিঅ্যাক্টিভেট’ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার চিঠি আসছে যত্রতত্র। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাতে আসা ওই চিঠি মানুষের মধ্যে দারুণ আতঙ্ক ও উদ্বেগ তৈরি করেছে। আধারের আইনের ধারা উল্লেখ করে যথাযথ তথ্য না দেওয়ার অভিযোগ দেখিয়ে বাতিল করা হচ্ছে একের পর এক আধার। চিঠিতে বলা হচ্ছে ‘আপনার ভারতে থাকার প্রয়োজনীয়তা পরিষ্কার নয়।’ 
ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে ইউআইডিএআই অফিস থেকে নাম না জানানো একজন আঞ্চলিক আধিকারিক ওই চিঠি পাঠাচ্ছেন। সেখানে শুধু একটি মোবাইল নম্বর (+৯১৯০৩১০০২২৯২) রয়েছে। ওই নম্বরে ফোন করলে সব সময় পাওয়াও যাচ্ছে না। উত্তর ২৪পরগনা, নদীয়া, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদের কিছু অংশে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে এই আধার বন্ধ করে দেওয়ার চিঠি আসতে শুরু করেছে।  
নিষ্ক্রিয় বা ‘ডিঅ্যাক্টিভেট’ করে দেওয়া হয়েছে বলে ডাকযোগে ৯ ফেব্রুয়ারি চিঠি পেয়েছেন উত্তর ২৪পরগনার কাঁকিনাড়ার বাসিন্দা রেখা বিশ্বাস। চিঠি পেয়েই ছুটে গেছেন স্থানীয় ব্যাঙ্কে। সেখানকার আধিকারিক পরিষ্কার জানিয়ে দেন— ‘‘হ্যাঁ, আপনার আধার ব্লক করা হয়েছে।“ এই পরিস্থিতিতে তিনি এখন ব্যাঙ্ক থেকে আর টাকা তুলতে পারবেন না। শুধু রেখা বিশ্বাস নয়, জগদ্দল, কাঁকিনাড়া ও নৈহাটির একাধিক মানুষ এমন চিঠি পেয়েছেন।
একই সঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলার  জামালপুর ব্লকে অন্তত ৬০ জন মানুষ এমন আধার বন্ধের চিঠি পেয়েছেন সম্প্রতি। চিঠির বয়ানের ধরন দেখে তাঁরা রীতিমত চিন্তায় পড়ে গেছেন। কেননা, আধার কার্ডের ২৮-এ রেগুলেশনে আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত বিদেশি হিসাবে পরিগণিত মানুষদের বাসস্থান সংক্রান্ত নথি নিয়ে সন্দেহ জাগলেই এমন ধারার প্রয়োগ ঘটে। আর তা জেনে জামালপুরের মানুষ চরম আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন।
গত বৃহস্পতিবারেই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীও হঠাৎ এই ধরনের চিঠি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, উত্তরবঙ্গের চা বাগান শ্রমিকদের আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এর পিছনে শুধু ভোট না দিতে পারার ফন্দি দেখলেও বিষয়টি যে গুরুতর তা সীমান্তবর্তী এলাকায় চিঠি পাঠানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। শুক্রবার সকালে জামালপুর ব্লকের জৌগ্রাম, আবুজহাটি এলাকায় প্রায় ৬০ জনের কাছে ডাকযোগে ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র রাঁচির আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। 
গত কয়েকদিন ধরে এই ব্লকের আবুজহাটি - ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের জুহিহাটি গ্রামের প্রায় ৫০ জন এমন চিঠি পেয়েছেন। জৌগ্রামের অনেকের কাছেও এই চিঠি এসেছে। পোস্ট অফিস সূত্রে খবর, এই ধরনের কয়েকশো চিঠি এসেছে। সব বিলি হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা প্রিয়া সরকার, পুতুল সরকার, বিপুল বিশ্বাস, লিপিকা বিশ্বাসদের দাবি, কেন এভাবে আধার কার্ড ‘ডিঅ্যাক্টিভেট’ হয়েছে বুঝতে পারছেন না। 
রেশন কিংবা ব্যাঙ্কের লেনদেন সহ সব লেনদেনই এখন আধারনির্ভর। কয়েক মাস আগেই আধারের সঙ্গে প্যানকার্ড লিঙ্ক করা হয়েছে। আধার বন্ধ হলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। জামালপুরের বিডিও পার্থসারথি দে’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ব্লক প্রশাসনের কাছে এই বিষয়ে কেউ কোনও তথ্য চায়নি। তিনি বুঝতে পারছেন না কেন এমনটা হয়েছে। আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি আসার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছেও খবর এসেছে। বিডিও আরও জানিয়েছেন, ‘ঘটনার পরিপ্রক্ষিতে আধারের টোল ফ্রি নম্বর ১৯৪৭-এ ফোন করেছিলাম। কিন্তু কিছুই জানা যায়নি।’
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা সম্প্রতি ফের দেশে নাগরিকত্ব আইন রূপায়ণের বার্তা দেওয়ায় গোটা বিষয়টি ঘিরে আরও সংশয় দানা বেঁধেছে। ২০১৭ সালেও দেশজুড়ে অন্তত ৮১ লক্ষ মানুষের আধার বাতিলের খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই সময় কেন্দ্র জানিয়েছিল, সঠিক তথ্য না থাকার কারণেই আধার বাতিল করা হয়েছে। আধার কার্ড বাতিল বা নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা রয়েছে ইউআইডিএআই’র হাতে। আধার কার্ড রেগুলেশনের ২৭ এবং ২৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনোভাবে একই ব্যক্তির নামে দু’টি পৃথক আধার কার্ড জারি করা হলে বা তাতে কোনও গন্ডগোল থাকলে, কার্ড বাতিল বা নিষ্ক্রিয় করা যেতে পারে। 
সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা বায়োমেট্রিক তথ্যে ভুল থাকলেও আধার নিষ্ক্রিয় করা হয়ে থাকে। নিয়মানুসারে, পাঁচ বছরের কম বয়সি কোনও শিশুর নামে আধার কার্ড থাকলে, পাঁচ বছর বয়সের পরে তার বায়োমেট্রিক্স তথ্য আপডেট করতে হবে। ফের ১৫ বছর বয়স হওয়ার পর আবার ওই তথ্য পুনরায় দিতে হবে। এই তথ্য আপডেটের জন্য দু’বছরের সময়সীমা দেওয়া হয়। এই দু’বছরের মধ্যে আপডেট না হলেও আধার কার্ডটি বাতিল করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবারে তো বাসস্থানে থাকার যৌক্তিকতাই নিয়ে প্রশ্ন তুলছে ভারত সরকার। এর পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। 

Comments :0

Login to leave a comment