MONCADA DAY

ন্যাটোর সম্প্রসারণ রুখতে পারে একমাত্র শান্তি আন্দোলন, মনকাডা দিবসে নেতৃবৃন্দ

জাতীয় রাজ্য জেলা কলকাতা

AIPSONELSON MANDELA FIDEL CASTRO MONCADA DAY NATO INDIA USA KOLKATA WEST BENGAL BENGALI NEWS এআইপিএসও’র সভায় বক্তব্য রাখছেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য

বিশ্ব শান্তির অতন্দ্র প্রহরী হলেন সাধারণ মানুষ। তাঁরা যুদ্ধ কিংবা সংঘাত চাননা। ন্যাটোর বিপদ এবং তাঁর নেপথ্যে কে রয়েছে সেটি এদেশের মানুষের অভিজ্ঞতায় নেই। এই বোঝাপড়া স্পষ্ট করতেই এদেশে শান্তি আন্দোলন অত্যন্ত জরুরি। মঙ্গলবার মনকাডা দিবস বা কিউবা সংহতি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা(এআইপিএসও)’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। আলোচনা সভার মূল বিষয় ছিল সামরিক জোট ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং বিশ্ব শান্তির বিপদ। সেই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনটাই বললেন রাজ্যের বামপন্থী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্ব শ্রীদীপ ভট্টাচার্য।

 শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদ যতদিন টিকে থাকবে, ততদিন দেশে দেশে শোষণমুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। গোটা বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদকে সম্প্রসারিত করার কাজ করছে সাম্রাজ্যবাদ। ন্যাটোকে সেই কাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে। ন্যাটোর কার্যধারা নিরঙ্কুশ করতেই বিভিন্ন দেশকে নিয়ে নানা গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকেও এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে চেষ্টা চলছে এই সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারকেও যুক্ত করার। ভারত ইতিমধ্যেই ‘কোয়াড’ নামে এমনই একটি গোষ্ঠীর অংশ হয়ে উঠলেও, ভারত সরকার পুরোপুরি সাম্রাজ্যবাদের কাছে আত্মসমর্পন করেনি। সেই আত্মসমর্পণ ঠেকাতে পারে একমাত্র সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জনমত।

 

ন্যাটোর সম্প্রসারণ কীভাবে ভারতের জন্য বিপদ ডেকে আনছে তা তুলে ধরতে গিয়ে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ন্যাটোর সাম্প্রতিক সামিট কিংবা বৈঠকগুলি থেকে চীনকে প্রধান লক্ষ্যবস্তূ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বৈঠকগুলি থেকে জল, ভূমি, আকাশ এবং ডিজিটাল জগৎকে মুঠোয় আনার কথা ঘোষণা করেছে ন্যাটো। সেখানে তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ চীন। চলতি বছরের ন্যাটো সামিটে অভিযোগ করা হয়েছে, চীন নাকি আন্তর্জাতিক আইন মানছে না। যদিও চীনের তরফে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থা আমরা মানি না। এই লড়াইয়ে ভারতকে শরিক বানাতে চাইছে আমেরিকা। তার বিরুদ্ধে জনমত গঠন একান্ত প্রয়োজন। 

 

এদিন আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এআইপিএসও’র সর্বভারতীয় নেতা রবীন দেব বলেছেন, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে মনকাডা দিবসের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চেতনা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ। বর্তমান সময়ে শান্তি আন্দোলনের সামনে সবথেকে বড় অন্তরায় ন্যাটো। ১৯৪৯ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গঠিত হয়েছিল সামরিক জোট বা ন্যাটো। পশ্চিমী বিশ্বের ১১টি দেশকে নিয়ে প্রাথমিক ভাবে ন্যাটো তৈরি হয়। এই জোটের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্তমান সময়ে না থাকলেও ন্যাটোর সম্প্রসারণ সমানে চলছে। আসলে ন্যাটোকে সামনে রেখে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিজের দখলদারি বজায় রাখতে চায়। ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতও ন্যাটোর কারণেই সমাধান করা যাচ্ছেনা। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও আঞ্চলিক সংঘাতে উষ্কানি দিয়ে চলেছে ন্যাটো। এর বিরুদ্ধে সমস্ত শান্তিকামী মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করবে এআইপিএসও। 

 

এর পাশাপাশি রবীন দেব তুলে ধরেন, কিভাবে আমেরিকার চাপিয়ে দেওয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কিউবার মানুষ। তিনি সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন, কিভাবে হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও কিউবার চিকিৎসাব্যবস্থা বিশ্বে অগ্রগণ্য। তিনি বলেন, কোভিডের সময় যখন পুঁজিবাদী দেশগুলি মুনাফার জন্য ভ্যাক্সিনকে ব্যবহার করেছে, তখন সমাজতান্ত্রিক কিউবা তার উল্টো পথে হেঁটেছে। এটাই সমাজতন্ত্রের শিক্ষা। এটাই মনকাডা দিবসের চেতনা। 

 

এদিনের সভায় এআইপিএসও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন বেরা বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদ প্রসারের মূল হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ন্যাটো। মনকাডা দিবস গোটা বিশ্বের কাছে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। 

 

তিনি বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদের বিপদ এখন ভারতের দোড়গোড়ায় এসে উপস্থিত হয়েছে। কোয়াড নামের সামরিক জোটে ভারতকে অংশীদার করতে চাইছে আমেরিকা। ভারতের স্বাধীন বিদেশনীতির অবক্ষয় ঘটানো হচ্ছে। তার জায়গা নিচ্ছে সমঝোতাবাদী বিদেশ নীতি। এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে এআইপিএসও সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। সেই কারণেই মনকাডা দিবসে ন্যাটোর আগ্রাসন এবং সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা সভার ডাক দেওয়া হয়েছে। 

 

এছাড়াও এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন কালান্তর পত্রিকার সম্পাদক কল্যাণ ব্যানার্জী। তিনিও ন্যাটো সম্প্রসারণের বিপদ এবং ভারতের ক্ষেত্রে তার প্রভাবের বিষয়টি তুলে ধরেন। 

 

এদিনের আলোচনা সভায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শান্তনু ব্যানার্জী এবং গুরুদাস কলেজের ছাত্রী সৃজিতা হালদার। সভায় উপস্থিত ছিলেন সমর চক্রবর্তী, তরুণ পাত্র, অশোক গুহ, শ্রাবণী সেনগুপ্ত প্রমুখ। 

Comments :0

Login to leave a comment