আমরা ইনফরমেশন ওভারলোড বা তথ্যের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমাদের সামনে রয়েছে অজস্র তথ্য। কিন্তু কোন তথ্যটি সঠিক আর কোনটি নয়, সেটা স্পষ্ট নয়। একইসঙ্গে চেষ্টা চলছে আসল তথ্যের নামে ভুয়ো খবর এবং ভুয়ো তথ্য ছড়ানো। এই অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মিডিয়া লিটারেসি বা মিডিয়া সাক্ষরতা। কলকাতা শহরের শিশুদের সেই সাক্ষরতার পাঠ দেওয়ার উদ্যোগ নিল অল্ট নিউজ।
কলকাতা পুলিশের উদ্যোগে ১৯৯৭ সাল থেকে চলছে নবদীশা প্রকল্প। দরিদ্র পরিবারের শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়া হয় এই স্কুলগুলিতে, যাদের একটা বড় অংশ ড্রপআউট । এই স্কুলগুলি পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে বিক্রমশীলা এডুকেশন রিসোর্স সোসাইটি। বিক্রমশিলা এডুকেশন রিসোর্স সোসাইটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শিশুদের মিডিয়া সাক্ষরতার পাঠ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে অল্ট নিউজের শাখা অল্টএড।
অল্ট নিউজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রতীক সিনহা জানাচ্ছেন, শিশুদের মধ্যে মিডিয়া সাক্ষরতা গড়ার কাজ পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে তারাতলা থানার পাশের নবদিশা কেন্দ্রকে। এই কেন্দ্রে মূলত পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের পড়ুয়ারা আসে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই শিশুদের মিডিয়ার সাক্ষর করার কাজ শুরু হয়েছে।
তারাতলা থানার নবদিশা কেন্দ্রি সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৪০ জন শিশু। তারা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের সন্তান। গত দু মাস ধরে এই শিশুদের তাদের মাতৃভাষায়, মিডিয়া স্বাক্ষরতার তালিম দিয়েছেন অল্ট নিউজের দুইজন সাংবাদিক এলিয়া জামিল এবং মহাপ্রজ্ঞা নায়েক।
এই তালিম শেষে সোমবার ছিল প্রদর্শনী। সেখানে তারাতলা নবদিশা কেন্দ্রের শিশুরা নিজেদের মতো করে তুলে ধরেন মিডিয়া সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা। প্রদর্শনীতে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। তথ্যচিত্রটি করেছেন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র আনমোল এবং অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ভূমিকা। তারা দুজনেই পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের সন্তান। তথ্যচিত্রে তারা এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন ভুয়ো খবরের ক্ষতিকারক প্রভাব।
অল্টএড সূত্রে দাবি, এর আগে বাটানগরে এই রকম একটি কর্মসূচি চালানো হয়। যদিও কলকাতায় এই প্রথম।
এই কেন্দ্রের প্রশিক্ষকরা জানাচ্ছেন, তারা মূলত শেখানোর চেষ্টা করেছেন কিভাবে ভুয়ো খবরকে চিহ্নিত করতে হয়। স্বাভাবিক নিয়মই উঠে এসেছে ভুয়ো খবরের নানা ভাগ। সাধারণ মানুষ কেন ভুয়ো খবরের ফাঁদে পড়েন, সেই বিষয়টি নিয়েও চলেছে চর্চা।
প্রোপাগান্ডা কিভাবে মানুষের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে, শিশুদের সামনে সেটিও তুলে ধরেছেন প্রশিক্ষকরা। উঠে এসেছে ব্যান্ডওয়াগন থিওরি, কনফার্মেশন বায়াসের মত গণজ্ঞাপন এর বিভিন্ন থিওরি। একই সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের মালিকানার বিষয়টিও পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। থিওরি চর্চার পাশাপাশি চলেছে হাতে- কলমে প্রয়োগও।
প্রতীক সিনহা জানিয়েছেন, পাইলট প্রজেক্ট এর মাধ্যমে সিলেবাস কে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার কাজ চলছে। সেই কাজ শেষ হলে কলকাতার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জায়গাতেও শিশুদের মধ্যে মিডিয়ার সাক্ষরতা তৈরীর উদ্যোগ নেবেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতীক সিনহা এবং মহম্মদ জুবের-এর হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করে অল্ট নিউজ ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইট মূলত ভুয়ো খবরের পর্দা ফাঁস করে থাকে। বিজেপি এবং সংঘ পরিবারের একাধিক মিথ্যা প্রচার ও তার উপর ভিত্তি করে ধর্মীয় জিগির তৈরির চেষ্টা আটকে গিয়েছে অল্ট নিউজের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জোরে। হজরত মহম্মদকে নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র নুপুর শর্মার ন্যাক্কারজনক মন্তব্যও সামনে আসে অল্ট নিউজ এর জন্য।
এর পাল্টা ২০২২ সালের ২৭ জুন ভুয়ো মামলার উপর ভিত্তি করে মহম্মদ জুবেরকে গ্রেপ্তার করে বিজেপি সরকার। সত্যি তুলে ধরার জন্য এক মাসের কাছে জেলে কাটাতে হয় মহম্মদ জুবেরকে।
Comments :0