INDONESIA COBALT MINE

পরিবেশ বান্ধব গাড়ি তৈরির মাশুল গুনছেন ইন্দোনেশিয়ার কৃষকরা

আন্তর্জাতিক

INDONESIA COBALT MINE ENVIRONMENT NEWS BENGALI NEWS

পেট্রল কিংবা ডিজেল চালিত গাড়ির বদলে বিশ্বজুড়ে জোর দেওয়া হচ্ছে ‘পরিবেশ বান্ধব’ ইলেক্ট্রিক গাড়ির উপর। ইলেক্ট্রিক গাড়ির মূল যন্ত্রাংশ হল ব্যাটারি। এবং ব্যাটারির অন্যতম মূল চালিকা শক্তি হল কোবাল্টের মত খনিজ পদার্থ। অভিযোগ, সেই কোবাল্ট খনির জন্য ধ্বংস করা হচ্ছে অরণ্য। জীবীকা হারাচ্ছেন বহু মানুষ।

শুক্রবার সিএনএন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে কোবাল্ট খনি তৈরির জন্য ইন্দোনেশিয়ায় গোলমরিচ চাষিদের বাগান এবং জঙ্গল ধ্বংস করা হচ্ছে। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব সুলাওয়েসি দ্বীপে প্রকৃতি ধ্বংস করে কোবাল্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বংশ পরম্পরায় তাঁরা জমিতে গোল মরিচ চাষ করেন। যদিও প্রশাসনের তরফে তাঁদের হাতে জমির দলিল তুলে দেওয়া হয়নি। আর এই সুযোগেই বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলি চাষের জমির দখল নিচ্ছে। কৃষকদের সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে দখল করা হচ্ছে জমি। কেটে ফেলা হচ্ছে হাজারে হাজারে গাছ। উচ্ছেদ করা হচ্ছে গোটা গ্রামকে। 

পূর্ব সুলাওয়েসি দ্বীপের এক গোল মরিচ চাষির নাম মাসিতা। তাঁর অভিযোগ, ২০১৫ সালে হঠাৎ তাঁর জমির দখল নেয় পিটি ওয়েল নামে এক কোবাল্ট সংস্থা। তাঁর দাবি, তাঁদের গোটা গ্রামকে উচ্ছেদ করা হয়। 

মাসিতা জানাচ্ছেন, জমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁকে ৫ কোটি ইন্দোনেশীয় রুপিয়া দেওয়া হয়, যার মূল্য ৩২২৩ মার্কিন ডলারের সমান। মাসিতার ক্ষোভ, গোল মরিচ চাষ করে তিনি প্রতি মাসে ৬০ লক্ষ রুপিয়া বা ৩৮৬ মার্কিন ডলার রোজগার করতেন। বর্তমানে একটি খাবারের দোকান চালিয়ে তাঁর আয় নেমে এসেছে ১৫ লক্ষ রুপিয়া কিংবা ১০০ ডলারের কাছে। ভারতীয় মুদ্রায় তাঁর মাসিক আয় ৯ হাজার টাকারও কম। 

গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী,  লাগামছাড়া হারে কোবাল্টের খনি তৈরি করার ফলে পূর্ব সুলাওয়েসি দ্বীপে গত ২৩ বছরে সবুজের পরিমাণ কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। 

ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো ঘোষণা করেছেন, চীন, ভারত, থাইল্যান্ডকে ছাপিয়ে ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরির ভরকেন্দ্র হবে ইন্দোনেশিয়া। ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৬ লক্ষ ইলেক্ট্রিক গাড়ি তৈরির কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। আর সেই নীতির অঙ্গ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় শুরু হয়েছে প্রকৃতি ধ্বংস করে খনিজ উত্তোলন। রয়েটার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার বার্ষিক নিকেল রপ্তানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ বিলিয়ন ডলার। 

ইন্দোনেশিয়ার সবথেকে পুরনো এনজিও হল ‘ওয়ালহি’। মূলত নারীদের অধিকার  এবং পরিবেশ নিয়ে কাজ করে থাকে এই সংস্থা। ওয়ালহি’র বক্তব্য, ইলেক্ট্রিক গাড়ি মোটেও পরিবেশ বান্ধব নয়। এই গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরিতে যেই পরিমাণ পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে, তা অকল্পনীয়। 

ওয়ালহি’র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মহম্মদ আল আমিন বলছেন, ‘‘কোবাল্ট খনির প্রভাব স্থানীয় মানুষের উপর কীভাবে পড়তে পারে, কীভাবে তাঁদের জীবীকা ধ্বংস হতে পারে, সেই সংক্রান্ত কোনও রিপোর্ট দেয়না ইন্দোনেশিয়া সরকার। জমি এবং বাসস্থান হারিয়ে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে কয়েক হাজার পরিবারকে।’’

পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদের বক্তব্য, জীবীকা হারানোর পাশাপাশি কোবাল্ট খনির জন্য স্থানীয় মানুষ অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন। খনির ধুলো থেকে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট। বহুক্ষেত্রে শ্রবণ ক্ষমতা হারানোরও অভিযোগ আসছে। 

বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইন্দোনেশিয়ার মোট কৃষকের ২৫ শতাংশ মহিলা। এবং দেশের মোট শ্রমিকের ২৯ শতাংশ কৃষির সঙ্গে যুক্ত। স্বাভাবিক ভাবে খনির জন্য জমি চলে যাওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন গ্রামীণ মহিলাদের একটা বড় অংশ। 

আল আমিনের বক্তব্য, ‘‘পরিবেশ বান্ধব শক্তির সংজ্ঞা নতুন করে লেখা উচিত। যদি পরিবেশ বান্ধব শক্তি গরীব মানুষকে জমি এবং বাড়ি থেকে উৎখাত করে সঞ্চিত হয়, তাহলে আমাদের তাকে পরিবেশ বান্ধব শক্তি বলতে আপত্তি রয়েছে।’’

মাসিতার মত জমি হারানো মহিলাদের বক্তব্য, ‘‘আমরা চাইনা রাস্তায় প্রতিদিন এমন ইলেক্ট্রিক গাড়ি চলুক, যেগুলি জমি এবং বাড়ি থেকে উৎখাত হওয়া গ্রামের মহিলাদের যন্ত্রণা এবং ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্নার ভিতের উপর তৈরি হয়েছে।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment