সৌরভ গোস্বামী
প্রচারের শেষ পর্ব যত এগিয়ে আসছে যাদবপুর লোকসভার অভ্যন্তরে বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ততই অসহযোগীতার অভিযোগ তুলছে সিপিআই(এম)। বুধবার টালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকার নেতাজী নগরে শহীদ দিবস পালন এবং সমাবেশের ডাক দিয়েছিলে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা কোন ভাবে অনুমতি দিচ্ছে না। প্রশাসনের যুক্তি শাসক দল এলাকা জুড়ে ছোট ছোট সভা করার জন্য অনুমতি নিয়ে রেখেছে। তাই কোন অনুমতি দেওয়া হবে না সমাবেশের জন্য। স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতৃত্ব অনুমতি ছাড়াই পুলিশ এবং তৃণমূলের চক্রান্তকে উপেক্ষা করে সমাবেশ করেন।
নেতাজী নগরের সভায় বক্তব্য রাখেন সৃজন ভট্টাচার্য, দীপ্সিতা ধর, ঐশী ঘোষরা। দীপ্সিতা বলেন, ‘‘তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে গীতা, কোরান, বাইবেল উঠে আসছে। সিপিআই(এম) কে সভা করার অনুমতি দিচ্ছে না পুলিশ তৃণমূলের কথায়।’’
টালিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা জুড়ে রাতের অন্ধকারে তৃণমূলের দুস্কৃতি বাহিনী সৃজন ভট্টাচার্য্যের সমর্থনে লাগানো ফ্লেক্স ছিঁড়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে শ্রীরামপুরের সিপিআই(এম) প্রার্থী বলেন, ‘‘যারা সৃজনের ফ্লেক্স ছিঁড়ছে তারা বিজেপির ফ্লেক্স ছিঁড়ছে না কেন? আসলে কংগ্রেসের মধ্যেকার সাম্প্রদায়িক অংশকে নিয়ে আরএসএস তৃণমূল তৈরি করেছে। মাথায় ঘোমটা পড়ে ইফতার খেয়ে এলেই মুসলিমরা সন্তুষ্ট? ওদের চাকরি বাকরি চায় না? সৈফুদ্দিন, মৈদুল, আনিসদের খুন করার সময় মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি ভালবাসা দেখা যায়নি। মমতা ব্যানার্জি চোখের সামনে একটা পর্দা তৈরি করেছে ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক। পরিচিত সত্ত্বার রাজনীতিকে সামনে এনে বিজেপির রাস্তা সহজ করে দিচ্ছে। বিজেপি বলছে ইমাম ভাতা দিলে পুরোহিত ভাতা দিতে হবে।’’
রবিবার মুখ্যমন্ত্রী যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষের সমর্থনে একটি সভায় গিয়ে বলেছেন যে তাকে দেখে সায়নীকে ভোট দেওয়ার জন্য। এই যাদবপুর থেকে পরপর তিন বার লোকসভায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। প্রতিবার জয়ী প্রার্থীকে ভোটে দাঁড় করায়নি তারা। সংসদে এলাকার, রাজ্যের মানুষের হয়ে কোন কথাও তাদের কোনদিন বলতে শোনা যায়নি।
এদিন দীপ্সিতা বলেন, ‘‘যাদবপুরে প্রতিবার প্রার্থী বদলায় আর প্রত্যেকবার বলেন ‘আগের সাংসদ আপনাদের সার্ভিস দিতে পারেনি আমাদের ভুল হয়ে গিয়েছে প্রার্থী ঠিক দিতে। এবার আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি নতুন সাংসদ আপনাদের ভাল সার্ভিস দেবে।’ আমরা গ্যারান্টি দিচ্ছি সৃজন সংসদে গিয়ে সেল্ফি তুলে আসবে না। আপনাদের ছেলে মেয়েদের হাতে চাকরির খাম তুলে দেবে। ও পার্ট টাইম রাজনীতি করে না’’ তিনি আরও বলেন যে বামপন্থীরা জয়ী হলে লক্ষীর ভান্ডার কখনই বন্ধ হবে না, তার সাথে বাড়ির ছেলে মেয়েদের চাকরির ব্যবস্থাও হবে।
সৃজন ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘‘বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ছে না। তৃণমূলও বিজেপির বিরুদ্ধে নয়। মমতা ব্যানার্জিকে নিজেকে আর ভাইপোকে বাঁচাতে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়েছে। বামপন্থীরা, কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ার বাকি দল গুলো লড়ছে বিজেপির বিরুদ্ধে।’’ সিপিআই(এম) প্রার্থী বলেন, ইন্ডিয়া সরকার কোন বড়লোকদের জন্য কাজ করবে না। মানুষের জন্য কাজ করবে। নতুন জনমুখি নীতি তৈরি করবে এই সরকার। যা হয়েছিল ইউপিএ ১ সরকারের সময়।
প্রতিপক্ষ সায়নী ঘোষকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি একবার তাকে ডাকলো। তিনি গেলেন। দ্বিতীয়বার ডাকা হলেও আর গেলেন না। ইডিও কিছু করলো না। গোটাটা সেটিং হয়ে গিয়েছে। ভাইপোকে বাঁচাতে হবে।’’
সৃজন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে এসে বলছে সিপিআই(এম)কে ভোট না দিতে। তৃণমূলকে ভোট দিতে বলছেন। বোঝা যাচ্ছে দুই দলের বোঝাপড়া। নরেন্দ্র মোদীর এই মিসড কল পাওয়ার পরপরই মমতা ব্যানার্জি ১ জুন ইন্ডিয়ার বৈঠকে না যাওয়ার কথা জানিয়ে দিলেন।’’ তার কথায়, রাজ্যে তৃণমূলের মতো দিল্লিতেও বিজেপির পায়ের তলার মাটি সড়ে গিয়েছে।
এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় নেত্রী ঐশী ঘোষ সারা দেশের বিজেপি আরএসএসের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে আক্রমণ করেন।
অভিনেতা বাদশা মৈত্র বলেন, রাজ্যের সাংস্কৃতিক পরিবেশকে ধ্বংশ করেছে তৃণমূল।
এদিন সিপিআই(এম) সমর্থন পার্থস্বারথী গুহ সৃজন এবং দীপ্সিতার হাতে অর্থীক সাহায্য তুলে দেন।
Comments :0