DRDO

সরকারি টাকায় রথ বানিয়েছে ডিআরডিও, ধামাচাপা দেয় কেন্দ্র

জাতীয়

drdo bjp tdp chariot bengali news

২০১৪ সালের পরে সংসদে দাঁড়িয়ে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি সরকার। কিন্তু ১০ বছর পরে সেই প্রতিশ্রুতিগুলি কি অবস্থায় রয়েছে, সেটার খোঁজ নিয়েছিল ‘রিপোর্টার্স কালেক্টিভ’। সেই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

রিপোর্টার্স কালেক্টিভের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে একটি মন্দিরের জন্যয ব্যাটারি চালিত রথ তৈরি করে ডিআরডিও। ২০১৫ সালের মে মাসে টিডিপি’র সাংসদ চামাকুরা মল্ল রেড্ডি সংসদে এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলে ধরেন। তৎকালীন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্করকে তাঁর প্রশ্ন ছিল, ‘‘ডিআরডিও কি সত্যিই মন্দিরের জন্য রথ তৈরি করেছে? করে থাকলে কত খরচ হয়েছে রথ তৈরিতে? সেই টাকা কোথা থেকে এল? 

প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে মনোহর পারিক্কর শুধু বলেছিলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’’

টিডিপি সাংসদের প্রশ্নে যাঁদের কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল, সেই ডিআরডিও’র আধিকারিকদের মধ্যে একজন বর্তমানে কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলী নীতি আয়োগের সদস্য। 

রিপোর্টার্স কালেক্টিভের তদন্তমূলক প্রতিবেদনে এই ঘটনার মূল আখ্যান উঠে এসেছে। পুনের ডিআরডিও ল্যাবরেটরিতে রথটি তৈরি হয়েছিল। সারা দেশজুড়ে ডিআরডিও’র ৬০টির বেশি এমন ল্যাবরেটরি রয়েছে। এগুলি থেকেই সেনাবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক সরঞ্জাম তৈরি হয়। পুনে ল্যাবরেটরির তৎকালীন অধিকর্তা এস গুরুপ্রসাদের উদ্যোগে পুনের 

সন্ত দানেশ্বর মন্দিরের জন্য রথ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সংসদে সোরগোল পড়ার পরে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়, এবং ৫ সেপ্টেম্বর অত্যন্ত সন্তর্পণে সেই কমিটি নিজেদের রিপোর্ট কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে জমা দেয়। এরই মাঝে সেইই ল্যাবের একজন বিজ্ঞানী, ডি মুথুরাজ, কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়ের করে বলেন, ডিআরডিও’র সরকারি তহবিল ভুল ভাবে খরচ করা হয়েছে রথ তৈরির জন্য।

সেই রিপোর্ট উদ্ধৃত করে রিপোর্টার্স কালেক্টিভ জানাচ্ছে, ‘‘ডিআরডিও’র কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা পূরণ করতেই রথ তৈরি করা হয়েছিল। এবং রথ তৈরির নির্দেশ এসেছিল ডিআরডিও’র ডিরেক্টর জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা ভিকে সরস্বতের থেকে।’’

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘পুনের মন্দিরটির তরফে সরস্বতের কাছে একটি যন্ত্রচালিত রথ তৈরির আবেদন করা হয়েছিল। তিনি সেটার পালন করেছেন।’’

রথ তৈরির খরচ কত পড়েছিল? রিপোর্টে এই বিষয়টি হোয়াইট ওয়াশ করে দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, ‘‘ মাত্র ১৭.৬০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। সামরিক বাহিনীর সুরক্ষার জন্য ভবিষ্যতে এই রথ তৈরির কৌশল কাজে লাগবে।’’

রিপোর্ট প্রকাশের পরের দিন, ২০১৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বোম্বে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন বিজ্ঞানী মুথুরাজ। তিনি দাবি করেন, তহবিল তছরুপ হয়েছে। এবং তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য তাঁকে বিভাগীয় হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। 

কিন্তু কেন্দ্রের তরফ থেকে সরকারি রিপোর্ট হাতিয়ার করে হাইকোর্টে জানানো হয়, কোনও প্রক্রিয়াগত ত্রুটি হয়নি বিষয়টিতে। 

মামলা চলাকালীন ২০১৫ সালে সংসদে বিষয়টি নিয়ে সরব হন টিডিপি সাংসদ। এবং ‘‘তদন্ত করা হবে’’ বলে প্রশ্ন এড়িয়ে যান মনোহর পারিক্কর। 

যদিও সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলেছিলেন পারিক্কর। তিনি খুব ভালো ভাবেই জানতেন, ঠিক কোন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সংসদকে অন্ধকারে রেখে রথ তৈরি থেকে শুরু করে আদালতে চলা মামলার বিষয় চেপে যান তিনি। 

এরপর এই ঘটনা সম্পর্কে কেবল একটি মাত্র তথ্য মিলেছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পুনে ল্যাবরেটরিতে সারস্বতের জুনিয়র এক বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ভুল খাতে রথ তৈরির প্রজেক্টের ব্যয় দেখিয়েছেন তিনি।

করদাতাদের টাকায় একটি মন্দিরের জন্য রথ তৈরি হলেও কেন্দ্রীয় বদান্যতায় সেটিকে সম্পূর্ণ ভাবে আড়াল করা হয়। এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য সামগ্রী তৈরি করেও কোনও শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের। 

Comments :0

Login to leave a comment