Drowning

বন্যার জলে ডুবে ছাত্রীর মৃত্যু মুর্শিদাবাদে

রাজ্য জেলা

মঙ্গলবার সকালে বন্যার জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার সোনাভারুই গ্রামের এক প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রীর। জলমগ্ন হয়ে হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার একাংশ। গ্রামে জল। উদাসীন সরকার।  সোমবার রাত থেকেই থেকেই কুয়ো নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছে বড়ঞা ব্লকের তারাপুর, সোনাভারুই, ভড়ঞা, আনন্দনগর এই গ্রামগুলিতে। গ্রামগুলি জলমগ্ন। জলবন্দী হয়ে পড়েছেন গ্রামের মানুষ। এখনও সরকারি ত্রাণ শিবিরের কোন ব্যবস্থা করা হয়। জল ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ছে উৎকন্ঠা। এদিন সকালে জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বড়ঞা থানার সুন্দরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের  সোনাভারুই গ্রামের বাসিন্দা দিস্তা বাগদী (৯)’র। দিস্তা স্থানীয় সোনাভারুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। এদিন সকালে পাড়ার মহিলারা সরকারি ত্রাণ নিতে গিয়েছিলেন রাস্তায় । গ্রামে ঢুকে ত্রাণ বিলির কোন ব্যবস্থা করে নি প্রশাসন। হলদিয়া ফারাক্কা রাজ্য সড়কের উপর থেকেই দেওয়া হচ্ছিল ত্রাণ। জলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে সেই ত্রাণ নিতে আসছিলেন গ্রামের মহিলারা। সঙ্গে এসেছিল ছোট্ট শিশু। ফেরার সময় কিছুটা রাস্তা যাওয়ার পর  আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁকে। প্রায় ৩০ মিনিট খোঁজাখুঁজির পর উদ্ধার হয় শিশুর নিথর দেহ। কোলে করে ঐ শিশুকে রাস্তা অবধি নিয়ে আসেন গ্রামের মানুষ। ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে ওই শিশুর। বড়ঞা ব্লকের বিডিওকে সামনে পেয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামের মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা সেখ আফসার, পলাশ বাগদীরা জানান  , রাত থেকেই বারবার ব্লক অফিসে, পঞ্চায়েতে জানানো হচ্ছিল। নৌকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছিল, নৌকা পাওয়া যায় নি। নৌকার ব্যবস্থা থাকলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।
এদিন শিশুর দেহ কান্দি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই হয় ময়নাতদন্ত। শিশুর বাবা, পেশায় খেতমজুর বাবলু বাগদী বলেন, “ রাস্তায় চাল দিচ্ছিল। মেয়েও গ্রামের আত্মীয়দের সঙ্গে গিয়েছিল। জলের টানেই মেয়ে পড়ে যায়”। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শিশুর মা অপর্ণা বাগদীও।
দুপুরেই গ্রামে যান সিপিআই(এম) নেতা আবুল খায়ের, সৈয়দ জওহর আলি, গোলাম এলিহা, নুর আলম। সিপিআই(এম) নেতৃত্বের অভিযোগ, গ্রামে ত্রাণ শিবির, স্পিড বোটের কোন ব্যবস্থা নেই। যে কোন সময় বড় বিপদ ঘটতে পারে।
এদিন দুপুরে সরকারি গাফিলতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বড়ঞা ব্লকের বিডিও ‘র গোবিন্দ দাস। তিনি বলেন, “ স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। স্কুলে আসছেন না। ত্রিপল, চালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি বোট পেয়েছিলাম সেটা বযাওয়া সম্ভব হয় নি। গাড়ি পাওয়া যায় নি। আমরা স্পিড বোট আনাচ্ছি”। বিডিওর দাবি, ঘটনার সময় খুব বেশি জল ছিল না। কোনভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও স্থানীয়রা বারবার বলছেন, সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিলে এই ঘটনা ঘটত না।
শুধু বড়ঞা নয়। বন্য পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে খড়গ্রাম ব্লকের একাংশেও। দ্বারকা নদীর জল উপচে ভেঙেছে বাঁধ। বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত খড়গ্রামের ঝিল্লি, পদমকান্দি, জয়পুর এলাকার বেশকিছু গ্রাম। বন্যার জল ঢুকেছে বিশ্বনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। বন্যার জেরে স্কুলে পড়াশোনা ব্যহত হচ্ছে। ঝিল্লিগ্রাম পঞ্চায়েতে যাদবপুরে ব্রাহ্মণী নদীর বাঁধ ভেঙে  বিস্তীর্ণ চাষজমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। নষ্ট হচ্ছে ধান, পলুপাতা। খড়গ্রামের পদমকান্দি এলাকার সর্বমঙ্গলাপুর, ঝাঁঝরা, কাজিপুর গ্রাম জলমগ্ন। পদমকান্দি, সাদাইপুর, বিশ্বনাথপুরে চাষজমি জলের তলায় চলে গিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment