মুক্তধারা : গল্প
সব চরিত্র কাল্পনিক
সৌরভ দত্ত
–কথার মাঝখান দিয়ে উড়ে যাচ্ছে কত কথা।সবটা ধরা যাচ্ছে না ক্যালাইডোস্কোপে।
–তারমাঝে দু-বন্ধু অস্থির সময়ের চিত্রে মাতে।দেখতে পায় একটা নাট্য মঞ্চ ও নাটকের যবনিকা। স্বৈরতন্ত্রের পতন।অনেকটা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ফুলদি চরিত্রের মতো…
–আমি তো বলেছি ,ওরা যদি চায় আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি।
–কথাটা বলতেই আর.জি.করের বিড়ালটা ম্যাও করে উঠলো।
–বিড়ালটা এঁটো-কাঁটা খায়।গায়ের লোম অর্ধেক উঠে গেছে।
–ওরা কারা?পদত্যাগ! কি সব বলছেন আপনি। চ্যাপলিনের পর এত ভালো কমেডি বাঙালি দেখেনি।
–একবার বলছেন উৎসব করতে , একবার বলছেন ওরা বিচার চায় না চেয়ার চায়!
–কিসের চেয়ার?এতো পুরো মিউজিক্যাল চেয়ার হচ্ছে মাইরি।
–তিলোত্তমার হত্যার পর যা যা ঘটল অবিশ্বাস্য।এক অনিবার্য স্বাধীনতা আন্দোলন।চৌর্য্য সাম্রাজ্য পতনের ইতিবৃত্ত।
–তার মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে কিছু গিমিক ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী ধর্নায় বসছেন।
–হল্লা রানির সঙ্গে অবস্থান মঞ্চে নির্যাতিতার ফাঁসি চাই বলে হুক্কা হুয়া চেঁচিয়ে উঠছে শৃগাল দল।
–একুশে আইন নিয়ে কোকিল শৃগাল শেয়াল পণ্ডিত সেজে সওয়াল করছেন অপরাধীদের পক্ষে।
–বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে।
–প্রমাণ ট্যাম্পারিং, থ্রেট কালচার,চটিচাটা,লাইভ স্ট্রিমিং কত নতুন নতুন শব্দ আবিষ্কার হল। একদিন হয়ত অভিধানে স্থান পেয়ে যাবে।
–যেভাবে আপনি তালগোল পাকিয়ে আবিষ্কার করে ফেললেন ক্যাথিড্রাল।যা শুনে মর্গ থেকে মৃত মানুষ ও হেসে উঠে বসে পড়লো। সমাজের মুখে কেউ যেন ক্যাথিটার লাগিয়েদিল ।
–বরখদার নতুন স্লোগান জন্ম নিল–উই ওয়িন্ট জাস্টিস।যা ছড়িয়ে পড়ল ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে মেলবোর্ন, পেনসিলভানিয়া, সুইডেন,মার্কিন মুলুকে্
–খেলা হবের পাশে হঠাৎ সিঁদুরে মেঘ দেখে একটা না বসে গেল।মোহবাগানের কাঁধে ইস্টবেঙ্গল, ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে মহামেডান এর গ্রেট ডার্বিটা জিতে নিল জনতা।
–মেয়েরা রাত দখল করল। পাঁজর ফাটিয়ে বলল–দড়ি মারো টান রানি হবে খান খান।
–এসব দেখে থাকতে না পেরে গান লিখে নিজেকে রীতিমতো ভাইরাল করে ফেললেন অরিজিৎ সিং।
–পথে এবার নামো সাথী,ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা সরিয়ে প্রমুখ গানের সুরের সাথে আন্দোলনের থিম সঙ হয়ে উঠল–আর কবে আর কবে চিত্ত স্বাধীন হবে।
–স্কুলে স্কুলে প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলাল খুদেরদল থেকে গ্রামবাসী।শোকজ হল কিছু স্কুল।যার প্রতিবাদ কড়া ভাষায় এক দিদিমণি বললেন–রাষ্ট্র যখন ভেঙে পড়ে তখন আঠারো বছরের নিচের ছেলেমেয়েটাকেও সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
–এদিকে তদন্ত হচ্ছে ঢিমেতালে। রাঘববোয়াল ধরা চুলোয় গেল চুনোপুটি ধরে হাতধুতে চাইছে সি.বি.আই।
–জুনিয়ার ডাক্তাররা অনড় কঠোর অবস্থানে।প্রতীকি পেন ডাউন হল।
–এসব ঘটতই না যদি বুদ্ধবাবুর সৎকার সেরে ফেরার পথে হেনস্থা হতে হতেও মীনাক্ষী, কলতানরা মেয়েটার নিথর দেহটাকে না আটকাত।
–পেগাস্যাস দিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় ধড়পাকড় চলল প্রতিবাদীদের। কলকাতার কলতান তবু স্তব্ধ হবে না।
–এর পরেও বারংবার বৈঠক। সমাধান সূত্রের মাঝে সমঝোতার কূটনীতি।চায়ে পে চর্চা । মিথ্যা স্তোক ধ্বনি।
–একটা জেনারেশন এর কাছে ১৯৪৭ আর ২০২৪ কোন অংশে আলাদা নয়। সমস্ত সেক্টরের মানুষ এসে মিশল এ মিছিলে। বিভিন্ন স্কুলের প্রাক্তনীরা এল, প্রাক্তন সেনা কর্মীরা জাতীয় পতাকা হাতে হাঁটল বহুদূর।যৌন কর্মীরা মিছিল করল কলকাতার রাজপথে।
–মৌন প্রতিবাদে নিভে গেল সব রঙিন বারান্দার আলো। আবার উই ওয়ান্ট জাস্টিসের সুরে জ্বলে উঠল মোমবাতি শিখার আগুন।
–মোমবাতি হাতে উলঙ্গ রাজা কবিতার সরল,সাহসী শিশুটাও হেঁটে চলেছে। জাতীয় পতাকা নিয়ে হলুদ জামা পরিহিতা বাচ্চাটি দুপা মেলে এগিয়ে চলেছে সঠিক বিচারের দাবিতে।
–কতজন ফিরিয়ে দিল নাট্য আকাদেমি, সাহিত্য আকাদেমির পুরস্কার।
–জুনিয়র ডাক্তাররা রাস্তায় এক একটা দিন এক একটা মাস।
–আইনজীবীরা ধিক্কার দিয়ে উঠল সত্য গোপন এর জন্য।টানা রিক্সাওয়ালারা এগিয়ে এল অসুর দমনে।
–আর এরমাঝে আমরা যারা শাসকের ভয়ে চুপ করে রইলাম।ছবি আঁকতে ভয় পেলাম,কলম দিয়ে বেরিয়ে এলনা কোনো তীক্ষ্ণ কবিতার স্বর।তারা একদিন এই সময়টাকে আর পাবে না ফিরে…স্বাধীনতার দ্রোহে-বিদ্রোহে।
–টুবাই বলল–পৃথিবীতে নিরপেক্ষ বা অরিজনৈতিক আন্দোলন বলে কিছু হয় না!
–এরমাঝে সত্যান্বেষী বলল–চল এ পথে নামতে হবে…
Comments :0