ODISHA RAIL ACCIDENT

হঠাৎ ঘোষণা সিবিআই তদন্তের

জাতীয়

odisha rail accident cbi indian rail coromondal express bengali news

বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনার সিবিআই তদন্ত হবে। রবিবার সন্ধ্যায় ভুবনেশ্বরে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রেল বোর্ড এই ঘটনার সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে। 

অথচ এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই রেলমন্ত্রী নিজে ও রেল বোর্ডের তরফে সাংবাদিক সম্মেলন করেই জানানো হয়েছিল, দুর্ঘটনার মূল কারণ ও কারা দায়ী তা চিহ্নিত করা গেছে। চিহ্নিতই যখন করা গেছে, তখন হঠাৎই সিবিআই তদন্তের সুপারিশ কেন, তার কোনও উত্তর মেলেনি। রেলমন্ত্রী নিজে এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে চলে গেছেন। 


শুক্রবারের দুর্ঘটনার স্বাভাবিক তদন্ত করছিলেন রেল নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা। বালেশ্বরে স্বয়ং রেলমন্ত্রী রবিবার দুপুরে বলেছিলেন, এই দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ হয়েছে। কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটি রিপোর্ট দিলেই বিশদে জানা যাবে। মূল কারণ ও কারা এর জন্য দায়ী তা চিহ্নিত করা গেছে। আমি বিশদে বলব না তবে এটুকু বলতে পারি কারণ জানা গেছে। 

‘বিশদে বলব না’ বলেও রেলমন্ত্রী বলেন, সমস্যা হয়েছে ইলেকট্রনিক পয়েন্ট মেশিনে। ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিংয়ে কী পরিবর্তন করা হয়েছিল তা চিহ্নিত করা গেছে। পয়েন্ট মেশিনের সেটিংয়ে পরিবর্তন করা হয়েছিল। কী কারণে এই পরিবর্তন তা তদন্তে রিপোর্টে জানা যাবে। 

রেলওয়ে বোর্ডের তরফ থেকে নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বিশদে দুর্ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানানো হয় কীভাবে তা ঘটল তা জানা গেছে। বোর্ডের অপারেশন ও বিজনেস ডেভেলপমেন্ট সদস্য জয়া ভার্মা সিনহা ও প্রিন্সিপাল এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সন্দীপ মাথুর সাংবাদিকদের বলেন, বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসই দুর্ঘটনায় পড়েছে, বাকি তার ফলাফল। করমণ্ডল সবুজ সিগনাল পেয়েই যাচ্ছিল। তার গতিও নির্ধারিত গতির থেকে বেশি ছিল না। মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। 


দুই বোর্ড সদস্য ইন্টারলকিং ব্যবস্থার বিশদ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, সবুজ সিগনালের অর্থ রেলের চালক জানেন তাঁর সামনের পথ পরিষ্কার, তিনি তাঁর অনুমোদিত গতিতেই যেতে পারেন। এই সেকশনে অনুমোদিত গতি ঘণ্টায় ১৩০  কিলোমিটার, ট্রেন চলছিল ১২৮ কিলোমিটার গতিতে। লোকো লগ থেকে তা জানা গেছে। সিগনালিং সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হয়েছিল। শুধু করমণ্ডলেরই দুর্ঘটনা ঘটেছে। 

করমণ্ডল মালগাড়িতে ধাক্কা মারে। করমণ্ডলের কামরা মালগাড়ির ওপরে উঠে যায়। মালগাড়িতে লৌহ আকরিক ছিল, তাই ট্রেন ভারী ছিল। তাই ধাক্কার সমস্ত প্রভাব করমণ্ডলেই পড়েছে। এই দুই বোর্ড সদস্যের কথায় ইঙ্গিত মেলে, করমণ্ডলের চালকের কোনও দোষ ছিল না। 

সন্দীপ মাথুর বলেন, ট্রেনকে যদি লুপ লাইনে যেতে হয় তাহলে পয়েন্ট মেশিন চালাতে হবে। সামনের ট্র্যাক ফাঁকা কি না, তা দেখতে হয়। সিগনাল এমনভাবেই ইন্টারলক করা থাকে যে বোঝা যাবে সামনের লাইন ফাঁকা না সেখানে কোনও ট্রেন আছে। এও জানা যাবে পয়েন্ট কি ট্রেনকে সোজা নিয়ে যাচ্ছে না লুপ লাইনে নিয়ে যাচ্ছে। যখন পয়েন্ট দেখায় সোজা এবং ফাঁকা লাইন তখন সবুজ সিগনাল হয়। যদি লুপ লাইনে নেয় এবং লাইন ফাঁকা থাকে তাহলে হলুদ সিগনাল হয়। এই ব্যবস্থা ‘ফেইল সেফ’। যদি তা কোনও কারণে ঠিকভাবে না-ও চলে তাহলে সব সিগনালই আপনা থেকে লাল হয়ে যাবে এবং সব ট্রেনই থেমে যাবে। 

জয়া ভার্মা সিনহা এর পরেই একটি ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেন। সিগনাল ব্যবস্থার কোনও সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। এটি যান্ত্রিক ভুল নয়, তা হতে পারে। মনে করুন কেউ কোনও খোঁড়াখুঁড়ি করল অথচ কেবল কোথায় আছে তা না দেখেই করল। 

সিনহা অবশ্য এই সঙ্গেই দাবি করেন, কেউ কেউ বলছেন বন্দে ভারতকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে রেল নিরাপত্তার প্রশ্ন অবহেলা করছে। এটি ঠিক নয়। রেলের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিরাপত্তাই। 


স্বয়ং রেলমন্ত্রী ও রেল বোর্ডের সাংবাদিক সম্মেলনের কিছুক্ষণ পরেই সন্ধ্যায় রেলমন্ত্রী জানান, সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। 

প্রশ্ন উঠেছে, রেলের সেফটি কমিশনার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবার আগেই সিবিআই তদন্ত কেন? এই দুর্ঘটনার সূত্রে প্রশ্ন উঠছে রেলওয়ে ট্র্যাক ও সিগনাল ব্যবস্থার তদারকিতে চরম অব্যবস্থা চলছে। এর জন্য বরাদ্দ অর্থ ছাঁটাই করা হয়েছে। প্রায় ৭৯ শতাংশ বরাদ্দ ছাঁটাই করা হয়েছে বলে সিএজি’র রিপোর্ট থেকেই জানা যাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে না। 

বালেশ্বর দুর্ঘটনায় যান্ত্রিক ত্রুটি প্রকাশ্যে এলে সরকার অস্বস্তিতে পড়বে বলেই কি রেলের বিশেষজ্ঞদের হাত থেকে তদন্ত সরিয়ে নেওয়া হলো? দাবি উঠছে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের, সরকারের দায়িত্ব নেবার। এইসব ধামাচাপা দিতেই কি সিবিআই তদন্তের আদেশ দেওয়া হলো, এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। 

তার থেকেও গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেছে। এই দুর্ঘটনায় ‘নাশকতার’ সন্দেহ করা হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। সিগনালিং ব্যবস্থা বা ইন্টারলকিংয়ে কেউ সচেতনভাবেই হস্তক্ষেপ করায় গন্ডগোল হয়েছে, এমন আভাসও রেল সূত্রে ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। 

‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ রেল কর্তাদের সূত্রে এমন সন্দেহের কথা সামনে আনা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই দুর্ঘটনাকেও কোনও ‘ভাবাবেগ’ তৈরির কাজে লাগানো হতে পারে, তার বেশ কিছু লক্ষণ এদিন দেখা গেছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment