অনির্বাণ দে
তিনি বলেছিলেন, লেবু জল খাওয়াবেন। আমরা বলেছিলাম দেখা যাবে। মাথা ঠান্ডা করেই এগিয়েছিলাম। এখন সেই নেতা আর এলাকায় আসেন না। আগে যার নামে মানুষ ভয় পেত, এখন কেউ তার নাম মুখেও আনেনা। স্পষ্টই জানালেন রানিনগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আয়েশা সিদ্দিকি । স্থান, মুর্শিদাবাদের রানিনগর ডিএন ক্লাব। ব্লকের নাম, রানিনগর ২।
এই ব্লকের মানুষ দেখেছেন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রায় দশ মাস আগে থেকে হামলা, মিথ্যা মামলা আর পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে দুঃসাহসী লড়াই। মাসের পর মাস ঘরছাড়া থেকেছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। জেল খেটেছেন অনেকেই। তৃণমূল আর অত্যাচারের জবাব দিয়েছে রানিনগরের মানুষ।
রানিনগর ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি, সহ সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেস ও বামপন্থীরা। এই ব্লকের ৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬ টিই তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। গঠিত হয়েছে মানুষের বোর্ড।
মানুষের উত্তর পেয়ে এলাকা ছেড়েছেন একদা দাপুটে সেই তৃণমূল নেতা, শাহ আলম সরকার । সেই সুযোগে মাথাচাড়া দিচ্ছে এলাকার বিধায়ক সৌমিক হোসেন । ঘুরপথে চলছে পঞ্চায়েত সমিতি দখলের চেষ্টা।
বৃহস্পতিবার ইনসাফ যাত্রায় শামিল ডিওয়াইএফআই কর্মীরা রানিনগর ডিএন ক্লাব ময়দানে এসে পৌঁছালে তাদের বরণ করে নেন রানিনগর ২ ব্লকের মানুষ। মাঝে রানিনগর ১ ব্লকের সীসাপাড়া মোল্লাডাঙ্গা, দাড়কাটি মোড়ে পদযাত্রীদের ফুল, মালা দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হয়।
এদিন সকালে ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ শহরে পদযাত্রা হয়। এরপর ভগবানগোলা ২ ব্লকের রানীতলা থেকে ফের শুরু হয় পদযাত্রা। পদযাত্রাকে স্বাগত জানিয়েছেন রাস্তায় মোড়ে মোড়ে জমায়েত হওয়া মানুষ। সভা হয় জাফরের মোড়ে। এরপর রানিনগর ডিএন ক্লাব ময়দান থেকে থেকে শুরু হয় মিছিল।
রানিনগর ডিএন ক্লাব ময়দান থেকে প্রায় আট কিলোমিটার হেঁটে ইনসাফ যাত্রা পৌঁছায় নবীপুরে। সেখানে সমাবেশে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, “ইনসাফ যাত্রা রানিনগরের মানুষকে কুর্নিশ জানাচ্ছে। রানীনগরের মানুষ দেখিয়েছেন, কীভাবে ভয়ের ঘরে ভয় ঢোকাতে হবে। মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নামলে কীবভাবে জয় আসে। যারা এখনও লাফাচ্ছেন, তারাও সামলে যান”।
এদিন নবীপুরে সমাবেশে ডিওয়াইএফআই এর প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “ভারত সব সময় প্যালেস্তাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী জুলুমের বিরুদ্ধে থেকেছে দেশ। স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তরাধিকারের সাথে বেইমানি করেছেন নরেন্দ্র মোদী। দেশের অবস্থান থেকে সরে এসে ইজরায়েলকে সমর্থন করলেন মোদী। আর মমতা ব্যনার্জি ইজরায়েলের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলতে পারে না।এখানেই পরিষ্কার তিনি অন্যায়ের পক্ষে, সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে” ।
নবীপুরের সমাবেশে মহম্মদ সেলিম রেশন থেকে শিক্ষা দুর্নীতি ইস্যুতে বিজেপি, তৃণমূলকে নিশানা করেছেন। ইনসাফ যাত্রায় গ্রামের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
মহম্মদ সেলিম বলেছেন, লুট থেকে নজর সরাতে ধর্মের নামে,জাত পাতের নামে মানুষকে ভাগ করা হচ্ছে । আর মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী পরিবারের লোকেরা কোটি কোটি টাকা লোপাট করছে । রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির কারণে স্কুল,মাদ্রাসা ধুঁকছে। এর বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। বিজেপি এই লড়াইকে দুর্বল করত হিন্দু মুসলমানে ভাগ করছে।
মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ভাগাভাগিতে দুর্নীতি আর দুষ্কৃতি রাজ কায়েম হয়েছে। আইসিডিএস- মিড ডে মিলে পচা গম খাইয়েছেন খাইয়েছেন মমতা ব্যানার্জি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এর জবাব দিতে হবে ওঁদের।
আম, লিচু, জাতীয় সড়ক, পদ্মা, গঙ্গা এতোকিছু থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে থাকবে কেন মুর্শিদাবাদের মতো জেলা । প্রশ্ন করেছেন মীনাক্ষী মুখার্জি। মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, মানুষের দাবি নিয়ে সোচ্চার হচ্ছেন যুবরা। সাড়া দিচ্ছেন গ্রামের মানুষ। ব্রিগেডের সমাবেশে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়েই জবাব দিতে হবে তৃণমূল, বিজেপিকে।
এদিন সন্ধ্যায় সমাবেশ হয় ধনীরামপুর বাজারে । সেই সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেছেন, আরএসএস বাংলার ঘরে ঘরে বিদ্বেষের বার্তা দিচ্ছে। তৃণমূল সাহস যোগাচ্ছে বিজেপিকে। তৃণমূল কংগ্রেসের পুলিশ দাঙ্গা, হাঙ্গামার জন্য একজনের বিরুদ্ধেও কোন মামলা করেছে ?
এদিন মীনাক্ষী মুখার্জির হাতে নিজেদের যন্ত্রানার চিরকুটে লিখে দিয়েছেন ভিলেজ রিসোর্স পার্সনরা। কেন বেতন দেওয়া হচ্ছে না তাদের ? প্রশ্ন করেছেন মীনাক্ষী। প্রকল্প কর্মীদের ন্যায্য বেতনের দাবিতেও সরব হয় ইনসাফ যাত্রা। এদিন ইনসাফ যাত্রায় ছিলেন ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক জামির মোল্লা, যুব নেতা সন্দীপন দাস, সৈয়দ নুরুল হাসান প্রমুখ।
Comments :0