Pulwama attack

আজও তিনি যুদ্ধ জিগিরের বিরুদ্ধেই

জাতীয় রাজ্য

Pulwama attack conspiracy bjp narendra modi bengali news

স্বামীকে হারিয়ে সেদিনও যুদ্ধ জিগির তোলা নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন। চার বছর পর নিজের অবস্থানে একইভাবে অনড় থেকে তিনি জানিয়ে দিলেন, ‘‘পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে রাজনীতি তো হয়েইছিল। ওই সময় পুলওয়ামার ঘটনাকে নিয়ে ভোটে বেশ ভালোই প্রচারে লাগানো হয়েছিল। তবে এখন আর এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না।’’


২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামাতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর গতকালই সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন ওই সময়কার জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে বিস্তারিত জানিয়েছিলেন সত্যপাল মালিক। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছিল সেদিন, তা সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দিয়েছেন তৎকালীন রাজ্যপাল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যর্থতার সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারির খামতির কথাও সত্যপাল মালিক প্রধানমন্ত্রীকে সেদিন জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তাঁর সঙ্গে কথোপকথন পর্বে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে মুখ না খোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। 

শনিবার সংবাদপত্রে প্রকাশিত এই রিপোর্ট পড়েছেন পুলওয়ামায় শহীদ সিআরপিএফ জওয়ান বাবলু সাঁতরার স্ত্রী মিতা দেবী। তবে চার বছর আগের এই ঘটনা নিয়ে এখন আর বেশি ভাবতে চাইছেন না। ‘‘আসলে অনেকগুলো দিন তো পার করে এসেছি। এখন নিজের জীবনযুদ্ধে এতটাই জড়িয়ে গেছি, এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় বা ইচ্ছা কোনোটাই আর পাই না।’’ মোবাইলে ধরা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল এটাই। 


পুলওয়ামার সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহীদের মৃত্যুবরণ করেছিলেন। শহীদের তালিকায় ছিলেন হাওড়ার চেঙ্গাইল গ্রামের যুবক বাবলু সাঁতরা। পুলওয়ামার ঘটনার পর যুদ্ধ জিগির তোলা হয়েছিল। হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডবে দেশের নানা প্রান্তে আক্রান্ত হতে শুরু করেছিলেন কাশ্মীরী জনতা সহ সংখ্যালঘুরা। ভোট প্রচারে বিজেপি’র পক্ষ থেকে আনা হয়েছিল পুলওয়ামার ঘটনাকে। সেদিনও কফিনবন্দি হয়ে ঘরে ফিরে আসা স্বামীর মৃতদেহের সামনে যুদ্ধ বিরোধী অবস্থানের পক্ষে মত দিয়েছিলেন নিহত জওয়ানের পত্নী। 

মডার্ন হিস্ট্রি’র মাস্টার্স মিতা দেবী শ্বশুরবাড়ি চেঙ্গাইলের একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। সেদিন স্বামীকে হারিয়ে তাঁকে বেশি ভাবিয়েছিল শিশুদের মধ্যে যদি ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধ উন্মাদনা। একমাত্র সন্তানকে আগলে নিয়ে চার বছর আগে মিতা সাঁতরা বলেছিলেন,‘‘শিশুদের মধ্যে ভেদাভেদের বিষ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেটা আমাকে দেখতেই হবে। ধর্মের ভেদাভেদ তো কোনোভাবেই নয়।’’ 

চার বছর পার হওয়ার পরও তিনি নিজের অবস্থানে স্থিত। প্রিয়জনকে হারিয়ে তাঁর যুদ্ধবিরোধী অবস্থানের জন্য চরিত্র হনন পর্যন্ত করা হয়েছিল। চার বছর পার করে তিনি এখনও মনে করেন, ‘‘যুদ্ধ নয়, শান্তিই শেষ কথা। যাঁকে হারিয়েছি, তাঁকে আর কোনোদিন ফিরে পাব না। তবু এখনও বলব, শান্তি দরকার।’’ 


মৃত জওয়ানের পরিবারের সদস্য হিসাবে মিতা দেবী এখন রাজ্য সরকারের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরে চাকরি করেন। তবে এখানেও তাঁর মনোভাব খুবই স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির জন্য আবেদন পূরণও করেছিলেন। কিন্তু ওই চাকরি গ্রহণ করলে গোটা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তাঁকে বদলি হতে হতো। পুলওয়ামাতে ৪০ জন মৃতের পরিবারের সবাইকেই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার চাকরি দিয়েছে। বাড়ি থেকে ৩ কিমি দূরত্বের মধ্যে চাকরি করেন দেশের বাকি রাজ্যের নিহত সিআরপিএফ পরিবারের সদস্যরা। মিতা দেবীকে বর্তমানে উত্তরপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর হয়ে কাঁকুড়গাছিতে দৈনিক যাতায়াত করতে হচ্ছে। 

‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির ফরম পূরণ করেও ফেলেছিলাম। কিন্তু সিআরপিএফ আধিকারিকরা আমাকে বলেছিলেন, কেন বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন? আমার এই চাকরির জন্য সিআরপিএফ আধিকারিকদের ভূমিকা ছাড়া সম্ভব হতো না।’’ 


এরাজ্যে চাকরির পরিস্থিতি কী নিজের অভিজ্ঞতা আছে। প্রাইমারি টেট পরীক্ষা পাশ করার পরেও তাঁর কাছেও শিক্ষকতার জন্য টাকার টোপ এসেছিল। ‘‘কিন্তু ওই যে বললাম, শিরদাঁড়াটা সবসময় সোজা রাখার চেষ্টা করে গেছি বলে টাকার বিনিময়ে চাকরি নিতে চাইনি।’’ জানিয়েছেন শহীদ পত্নী।
 

Comments :0

Login to leave a comment