অবৈধ নির্মাণ আটকাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়লেন কলকাতা কর্পোরেশনের মহিলা ইঞ্জিনিয়ার। তাঁকে হেনস্থা করা হয়। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পুলিশ থাকলেও নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে নীরব ভূমিকা পালন করে তারা। এমনই অভিযোগ করছেন কলকাতা কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়াররা।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার। কলকাতা কর্পোরেশনের ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত ৭৫ প্রিন্স রহিমুদ্দিন লেনে একটি অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়েছিলেন কর্পোরেশনের তিনজন ইঞ্জিনিয়ার। অভিযোগ, সেই নির্মাণ ভাঙা আটকাতে দুষ্কৃতিদের নিয়ে চড়াও হয় তৃণমূল ঘনিষ্ঠ প্রমোটার। মহিলা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে অভব্য আচরণ করা হয়।
ডেমোলিশন ওয়ার্ক বা বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গেলে কর্পোরেশনের আধিকারিকদের সঙ্গে পুলিশ থাকা বাধ্যতামূলক। এই ক্ষেত্রেও তাই ছিল। কিন্তু ঘটনা মাত্রা ছাড়ালেও তৎপরতা দেখায়নি পুলিশ। এমনই অভিযোগ ইঞ্জিনিয়ারদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিলা ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্য, ‘‘প্রোমোটারের নির্দেশে ২০-৩০জন মহিলা আমাদের ঘিরে ধরে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। আমার নিরাপত্তার জন্য ১জন মাত্র মহিলা পুলিশকর্মী ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনও হস্তক্ষেপ করেননি।’’
এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার কলকাতা কর্পোরেশনের মূল ভবনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে কেএমসি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন। বৃহস্পতিবার মেয়রকে সংগঠনের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘কয়েকদিন আগে এন্টালি অঞ্চলে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন ইঞ্জিনিয়াররা। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার তুলে ইঞ্জিনিয়ারদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়। বুধবার ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডে একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। ইঞ্জিনিয়াররা আক্রান্ত হয়েছেন।’’
এই প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানস সিনহা বলেছেন, ‘‘বুধবার থেকে বেআইনি নির্মাণ ভাঙার বা ডেমোলিশনের কাজ বয়কট শুরু করেছেন ইঞ্জিনিয়াররা। যতদিন না আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, ততদিন আমরা বয়কট চালিয়ে যাব।’’
প্রসঙ্গত, ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনার একটি ভিডিও গণশক্তির হাতে এসেছে। সেখানে অভিযুক্ত প্রমোটারকে স্পষ্ট বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি বাড়ি ভাঙতে দেব না। আপনারা কি করতে পারেন করে নিন।’’
প্রমোটার যখন এই সুরে কথা বলছেন, তখন কলকাতা পুলিশের উর্দি পরে একাধিক পুলিশ অফিসারকে সেই ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আইনি নোটিশ থাকা সত্ত্বেও এই হুমকি দেওয়ার অপরাধে অভিযুক্তকে হেফাজতে না নিয়ে, তাঁরা ব্যস্ত ছিলেন তাঁর সঙ্গে ‘ডিল’ করতে। এই ঘটনার ২টি ভিডিও গণশক্তির হাতে এসেছে। দুটিতেই ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি আক্রোশ দেখা গিয়েছে প্রমোটার এবং তার দলবলের গলায়।
প্রসঙ্গত, ১৭ মার্চ গার্ডেনরিচে বেআইনি ভাবে নির্মীয়মাণ একটি বাড়ি আশেপাশের টালির বাড়ির উপর ভেঙে পড়ে। সেই ঘটনায় ১২ জন প্রাণ হারান। গুরুতর আহত হন ২০ জনের বেশি। ঘটনার পরে উঠে আসে, কীভাবে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর, বিধায়ক এবং স্থানীয় থানাকে টাকা দিয়ে শহর জুড়ে বেআইনি নির্মাণ হয়ে চলেছে। সমালোচনার ঝড় ঠেকাতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়ার সেই ডাক যে কেবলই লোক দেখানো, তা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অপর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে।
Comments :0