ODISHA RAIL ACCIDENT

ইস্তফার দাবি নয়,
রেলমন্ত্রীর পাশেই মুখ্যমন্ত্রী

জাতীয় রাজ্য

odisha rail accident coromondal express bengali news

রেলের বিরুদ্ধে দুর্ঘটনায় মৃতদেহ লোপাটের মারাত্মক অভিযোগ এনেও রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উড়িয়ে দিলেন মমতা ব্যানার্জি!

রবিবার কিছুটা আকস্মিকভাবেই মুখ্যমন্ত্রী বাড়ি থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন নবান্ন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব থেকে প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। দল নয়, সরকারি তরফে আয়োজিত এই সাংবাদিক বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘নিজেকে (রেলমন্ত্রী) বাঁচানোর জন্য আপনাকে কিছু করতে হবে না। আমি তো আপনার পদত্যাগ দাবি করছি না। রাজনৈতিক দল করতে পারে। কিন্তু আমি তো বলছি না।’’ 

এমনকি দুর্ঘটনায় মৃত্যু মিছিলের দায়িত্ব পর্যন্ত মোদী সরকারের সঙ্গে ভাগ করে নিতে রাজি মমতা ব্যানার্জি। ক্ষমতায় আসার পর চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির সময় ‘যা গেছে তা গেছে’র মতোই এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘‘যা ঘটেছে, তা ঘটেছে। এখন সবাইকে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’’

উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার পর দলের তরফে তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বিতীয় ব্যক্তি অভিষেক ব্যানার্জি গত শনিবারই রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। সেই দাবি শুধরে নিয়ে এদিন মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি থেকে সরে আসার বার্তা দিয়ে রাখলেন। 

নিজে থেকে মমতা ব্যানার্জির এহেন বার্তার পরও সাংবাদিকদের তরফ থেকে তাঁর কাছে নির্দিষ্টভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার দায় মেনে আপনি কি রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছেন?

মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট জবাব ছিল, ‘‘আমি এ নিয়ে কোনও জবাব দেব না। আমি এই প্রশ্নের উত্তরে নীরব থাকছি।’’ 


নিজে তিন দফায় রেলমন্ত্রী ছিলেন। তাহলে কি প্রাক্তন হিসাবে তিনি বর্তমানের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন, না কি এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উড়িয়ে দিয়ে আরও একবার মমতা ব্যানার্জি মোদীর কাছে পাশে থাকার বার্তা পৌঁছে দিলেন। 

ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার পর থেকে রেল মন্ত্রকের বিরুদ্ধে দেশের বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দল থেকে সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। ভারতীয় রেলের বেসরকারিকরণ, ঠিকাদারদের হাতে রেলের যাত্রী সুরক্ষার মতো কাজ তুলে দেওয়া, লক্ষাধিক শূন্যপদ ফেলে রাখা সহ একাধিক কারণ উঠেছে। রেল মন্ত্রকের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ এড়াতে পারেননি মমতা ব্যানার্জিও। 

তিনিও এদিন বলেছেন, ‘‘ গোটাটাই হয়েছে গাফিলতির জন্য। না হলে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। ভারতীয় রেলটাকে বিক্রি করার জন্য রাখা হয়েছে।’’ এই অভিযোগের পরও রেলমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে মোদী সরকারের কাছে মমতা ব্যানার্জির বার্তা, ‘‘যেটা ঘটেছে, সেটা ঘটেছে। দায়িত্ব তো কাঁধে নিতে হয়। সবাই মিলেই কাঁধে নিতে হয়।’’


নাম না করে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে টেনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রীকেও। নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে আপনাদের ঝগড়া করার অনেক সময় আছে। আপনি (মোদী) বলবেন। আমি রিপ্লাই করবো। কিন্তু সরাসরি কথা হবে। মাঝখানে কোনও মিডলম্যানের মাধ্যমে হবে না।’’ 

এর আগে দিল্লিতে গিয়ে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়ে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেখানে গিয়ে বাংলার দাবি, ১০০ দিনের কাজ নিয়ে প্রতিবাদ করবেন বলেও শেষ পর্যন্ত যাননি নীতি আয়োগের বৈঠকে। কিন্তু না যাওয়ার কারণ এখনও প্রকাশ্যে আনেননি মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলের মত, দিল্লি গিয়ে শুধু নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়ে ফিরে আসার পাশপাশি আলাদা করে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় না পাওয়ার জন্যই মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাত্রা বাতিল করেন। 


এদিন নিজে থেকেই দুর্ঘটনা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে টেনে আনেন এরাজ্যের ১০০ দিনের বকেয়া ৭ হাজার কোটি টাকা পাওনার প্রসঙ্গকে। আসলে এখনও পর্যন্ত শুধু পশ্চিমবঙ্গেরই ৬২ জনের মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আরও ১৮২টি মৃতদেহ পড়ে আছে। রাজ্য প্রশাসন মনে করছে, অধিকাংশ অশনাক্ত দেহ এরাজ্যেরই। দুর্ঘটনায় আহতদের ২০৬ জনের চিকিৎসা চলছে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে। গুরুতর আহত হয়ে ওডিশার হাসপাতালে ভর্তি আছে ৭৩ জন। 

এরাজ্যে কাজের আকালের জন্যই যে শয়ে, শয়ে গ্রামের মানুষ ভিনরাজ্যে চলে যাচ্ছে তা সরকারের অজানা নেই। তাই আগামী পঞ্চায়েত ভোটের আগে দুর্ঘটনায় আহতদের কাছে অনুদান তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল রাজ্য সরকার। 

এদিন আহত হননি, সুস্থ কিন্তু দুর্ঘটনায় মধ্যে পড়ে মানসিক আতঙ্কে আছেন তাঁদেরও সাহায্য করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের সরকার এককালীন ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে আগামী তিন মাস প্রত্যেক আহতদের মাসে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।

 

Comments :0

Login to leave a comment