SITARAM YECHURY

দেশে বিজেপি, বাংলায় তৃণমূলকে হটানোর লড়াই চলবেই, স্পষ্ট ইয়েচুরি

জাতীয়

ফাইল চিত্র

‘ইন্ডিয়া’ নামকরণ কিভাবে? বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই, বেঙ্গালুরুতে এক মঞ্চে কেন? বিরোধীদের মুখ কে? এমন একাধিক প্রশ্নের জবাব দিলেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র বরিষ্ঠ সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাইয়ের সঙ্গে সেই সাক্ষাৎকারের অংশ।


রাজদীপ সারদেশাই : প্রথমেই যেই প্রশ্নে যাওয়া যেতে পারে তা হলো, অনেক জায়গায় শুনতে পাওয়া যাচ্ছে যে বহু নেতার মধ্যে এই ‘ইন্ডিয়া’ নাম নিয়ে আপত্তি ছিল। আপনি তাঁদের মধ্যে একজন, এই বিষয়টা কি সত্যি?
সীতারাম ইয়েচুরি : সেই ভাবে কোন আপত্তি কারও ছিল না। নাম ঠিক করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি প্রস্তাব করেছিলাম যে আমরা আমাদের ‘উই ফর ইন্ডিয়া’ বলে পরিচয় দেবো। অনেকে সেই নামকে সমর্থন করেন। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ভারত ভাবনাকে বিকশিত করা। তাই ‘ইন্ডিয়া’ নামে সবাই সম্মতি জানিয়েছেন। 
রাজদীপ সারদেশাই: আপনি চেয়েছিলেন যে বিরোধী ঐক্যের নাম হোক ‘উই ফর ইন্ডিয়া’। অন্যদিকে বিজেপি দাবি করছে যে বিরোধীরা ‘ইন্ডিয়া’ নামটিকে হাইজ্যাক করতে চাইছে। দেশের নাম ব্যবহার করে কী ভাবে একটা রাজনৈতিক মঞ্চের বা ঐক্যের নাম দেওয়া যেতে পারে? এই বিষয় বিরোধীদের সিদ্ধান্তকে আপনি কী ভাবে দেখছেন?
সীতারাম ইয়েচুরি : বিজেপি’র নির্বাচনী প্রতীক কী? আমাদের জাতীয় ফুল পদ্ম। তারা কি করে অভিযোগ করতে পারে এই বিষয়। 

রাজদীপ সারদেসাই : আপনাদের বাধার মুখে দাঁড় করাতে পারে আসন সমঝোতা। আপনি আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে আপনারা কোনওভাবে আসন ভাগাভাগিতে যাবেন না। (কিন্তু) আপনারা বেঙ্গালুরুর হোটেলে একসাথে নৈশভোজ করছেন আর কলকাতায় লড়াই করছেন। আপনার দলের কর্মীদের কী ধারণা হবে? 
সীতারাম ইয়েচুরি : বেঙ্গালুরু কলকাতা থেকে অনেক দূরে। তার চেয়ে বেঙ্গালুরুর কাছে কেরালা। আর কেরালায় সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস একে অপরের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করছে। সেই জন্য কেরালায় বিজেপি’র কোনও বিধায়ক নেই। তাহলে কী কেরালায় কংগ্রেস লড়াই বন্ধ করে দেবে? রাজ্য ভিত্তিক পরিস্থিতি আলাদা। 
রাজদীপ সারদেশাই : বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। সেখানে আপনারা এবং তৃণমূল মুখোমুখি লড়াই করেছেন। তারপর হঠাৎ বেঙ্গালুরু বৈঠকে আপনারা সিদ্ধান্ত নিলেন সিপিআই(এম) এবং তৃণমূল এক মঞ্চে থেকে লড়াই করবে। 
সীতারাম ইয়েচুরি : আপনাদের একটা বিষয় বুঝতে হবে। এটা অসাম্প্রদায়িক দলগুলির একটি মঞ্চ। যেখানে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে যাতে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা যায়, এই ঘোষণা নিয়ে। তা থেকে এমন সিদ্ধান্তে আসা অনুচিত যে বেঙ্গালুরুতে একসঙ্গে নৈশভোজ হচ্ছে আর কলকাতায় একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। লড়াই চলছে, তা চলবেও। রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতি আলাদা। কেরালায় এক রকম পরিস্থিতি, বাংলায় এক রকম। এটা নতুন কিছু নয়। আপনার মনে থাকবে ২০০৪-এর নির্বাচনের কথা। ৬১ জন বামপন্থী সাংসদ লোকসভায় নির্বাচিত হন। ৫৭ জন কংগ্রেসকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। তারপর আমরা মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস জোট সরকারকে সমর্থন করি দেশের স্বার্থে।
রাজদীপ সারদেশাই : তখন ছিল নির্বাচনী পরবর্তী বোঝাপড়া। কিন্তু এবার নির্বাচনের আগেই বোঝাপড়া হচ্ছে। আপনারা বলছেন যে আপনারা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন বাংলায়, তারপর নির্বাচনের পর আপনারা একসঙ্গে হবেন জাতীয় স্তরে, এটাই বোঝাতে চাইছেন?


সীতারাম ইয়েচুরি : ভোটের পরের পরিস্থিতি দেখা যাবে বাস্তবের ওপর দাঁড়িয়ে। আপনি হয়ত ভুলে যাচ্ছে ২০০৪ সালে নির্বাচনেও (বিজেপি’কে কেন্দ্র থেকে হটানোর প্রশ্নে) বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিল। আজকে দেশের সামনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্রকে বাঁচানো। তার জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন বিজেপি’কে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা। যার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়েছে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কোনও নির্বাচনী জোট বা আসন বোঝাপড়া হচ্ছে না। 
রাজদীপ সারদেশাই : আপনি বলতে চাইছেন যে আপনারা তাহলে একা লড়বেন রাজ্যে, তৃণমূলের সঙ্গে আপনারা যাবেন না। যা হবে নির্বাচনের পর। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী বলছেন আপনাদের জোটের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে যে আপনাদের একটিই লক্ষ্য, মোদীকে হারানো। তিনি বলছেন যে এটি একটা নেতিবাচক জোট।
সীতারাম ইয়েচুরি : ন’বছর পর হঠাৎ করে এনডিএ’র বৈঠক কেন ডাকতে হচ্ছে, নতুন করে গঠন করতে হচ্ছে? কোথায় গেলো সেই অহংকার যে তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠ। যেদিন ২৬টি বিরোধী দল বৈঠক করছে সেদিনই কেন ৩৮টি দল নিয়ে এনডিএ’র বৈঠক করতে হচ্ছে? বোঝাই যাচ্ছে যে ভয় পেয়ে বিজেপি এই এই বৈঠক ডেকেছে। 
রাজদীপ সারদেশাই : আপনাদের এই মঞ্চের নেতা কে হবে? মুখ কে? টিম ইন্ডিয়াকে কে নেতৃত্ব দেবে? কে আহ্বায়ক হবে, যাকে প্রধানমন্ত্রী মুখ হিসাবে সামনে রাখা হবে?
সীতারাম ইয়েচুরি : অটলবিহারী বাজপায়ী নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময়ও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল বিরোধী জোটের মুখ কে হবেন। নির্বাচনের পর আপনারা দেখেছেন যে মনমোহন সিং-কে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। দশ বছর সেই সরকার আসীন থেকেছে। 


রাজদীপ সারদেশাই : নরেন্দ্র মোদী বলছেন এই জোট দুর্নীতিগ্রস্তদের এবং পরিবারতন্ত্রের। 
সীতারাম ইয়েচুরি : বিজেপি এটা প্রথম বলছে না। এই কথা প্রচার করে যাচ্ছে আর বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন হারছে। কর্ণাটক, হিমাচলে তা-ই হয়েছে।
রাজদীপ সারদেশাই: তা’হলে আপনাদের কোনও প্রধানমন্ত্রী মুখ থাকবে না? 
সীতারাম ইয়েচুরি : ভারতে সংসদীয় নিয়মে জনতা প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন। প্রিতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করে না। যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তাদের একজনকে নেতা হিসাবে বেছে নেয়। 
রাজদীপ সারদেশাই : আপনারা কি অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি এবং অভিন্ন প্রচার মানুষের সামনে রাখবেন, নাকি তা-ও ঠিক হবে নির্বাচনের পর?
সীতারাম ইয়েচুরি : অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি হয় সরকার গঠন হলে। আমরা চাইছি অভিন্ন প্রচারের বিষয় ঠিক করতে। এটি অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি নয়।
রাজদীপ সারদেশাই: আপনার কাছে শেষ প্রশ্ন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে যে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে একই টেবিলে নৈশভোজ করেছেন। তাই জানতে চাইছি সেখানে কী কথা হয়েছে আপনাদের মধ্যে?


সীতারাম ইয়েচুরি : প্রথম কথা বলতে চাই যে মমতা ব্যানার্জি আর আমি একই টেবিলে ছিলাম না। আমি, সোনিয়া গান্ধী, সিদ্দারামাইয়া, লালু প্রসাদ যাদব, মেহবুবা মুফতি, নীতিশ কুমার- এই ছ’জন ছিলাম একটি টেবিলে। আমি জানিনা কোথা থেকে এই তথ্য আপনারা পেয়েছেন।
রাজদীপ সারদেশাই : আমি শুনেছি যে আপনাদের মধ্যে কিছু কথা বার্তা হয়েছে।
সীতারাম ইয়েচুরি : আমি জানিনা কে আপনাকে এই তথ্য দিয়েছে। বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের যে কথা আমি যা বলেছি (পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়বে বামফ্রন্ট) তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জি আপত্তি জানিয়েছেন বৈঠকে। কিন্তু আমি আমার কথায় অনড় থেকেছি। বাংলায় আমরা কংগ্রেস সহ সব ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ব।
রাজদীপ সারদেশাই : আপনাদের টিমে কোন ক্যাপ্টেন নেই। আহ্বায়ক কি থাকবে?
সীতারাম ইয়েচুরি : আবার বলছি, আপনারা ‘টিম’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। আমরা বলছি দেশাত্মবোধক দলগুলির একটি বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’ যা ভারতের গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে রক্ষা করার জন্য গড়ে উঠেছে।

Comments :0

Login to leave a comment