মোদী কিংবা অমিত শাহের মুখেও আর শোনা যাচ্ছে না চারশো পারের ধ্বনি। শক্তির জায়গায় কমছে ভোটদানের হার। বাড়তি উৎসাহ নেই মতদানে। বিজেপি বিরোধী শক্তি অনেক বেশি আসনে বোঝাপড়াও করেছে। বেকায়দায় পড়েছে বিজেপি।
সোমবার এই অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসু। তাঁর ব্যাখ্যা, হরিয়ানা বা উত্তর প্রদেশের মতো নিজেদের একতরফা দাপটের এলাকাতেও বিরোধী শক্তির সমর্থন বেড়েছে রাস্তার আন্দোলনে।
বসু বলছেন, ‘‘হরিয়ানায় সংযুক্ত কৃষক আন্দোলনের প্রচণ্ড প্রভাব। বহু এলাকায় কৃষকরা বিজেপি প্রার্থীদের গ্রামে ঢুকতে দিচ্ছেন না। ধাওয়া করে বিজেপি কর্মীদের এলাকা ছাড়া করা হচ্ছে। হরিয়ানায় ১০টা আসন। গতবার বিরোধীরা একটিও আসন জেতেননি। এইবার পরিস্থিতি ভিন্ন। আসনের নিরিখে ৫০-৫০ও হতে পারে হরিয়ানায়। বিরোধীরা ৬টি আসনেও জয়ী হতে পারে।’’
হরিয়ানায় ক্ষোভ সামাল দিতে মার্চ মাসে মনোহরলাল খট্টরকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। জাতিভিত্তিক অঙ্ক করে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে নায়াব সিং সাইনি’কে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
বসু বলছেন, ‘‘সব আসনে সমঝোতা হয়নি। কিন্তু বিজেপি বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ গতবারের তুলনায় অনেক বেশি আসনে বোঝাপড়া করতে পেরেছে।’’
২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনে রাজস্থানেও কোনও লোকসভা আসন বিরোধীরা জিততে পারেনি। এইবার ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ সবথেকে বেশি কার্যকর হয়েছে যেই রাজ্যগুলিতে, তার অন্যতম হলো এই মরুরাজ্য। ভারত আদিবাসী পার্টি, সিপিআই(এম), কংগ্রেস, হনুমান বেনিওয়াল সহ সমস্ত বিরোধী শক্তি এক জায়গায় এসেছে রাজস্থানে।
রাজস্থানে বিরোধীদের সম্ভাবনাময় আসনগুলির মধ্যে রয়েছে সিকর কেন্দ্র। সেখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিপিআই(এম) রাজস্থান রাজ্য কমিটির সম্পাদক অমরা রাম। প্রাক্তন বিধায়ক লড়ছেন কংগ্রেসের সমর্থনে তিনি। বসু বলছেন, ‘‘ভোটের পর ওই অঞ্চলের কর্মীরাও জানিয়েছেন সম্ভাবনা যথেষ্টই রয়েছে।
তাঁরা মনে করাচ্ছেন, পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বাঁশওয়াড়ার সভা থেকেই উগ্র মুসলমান বিদ্বেষ ছড়ানোর পথে হাঁটা শুরু করেন নরেন্দ্র মোদী।
বসু বলছেন, ‘‘বিজেপি ভেবেছিল রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা থেকে শুরু করে বিরোধী সমস্ত ভাষ্য উড়িয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে স্পষ্ট, সেটা হওয়ার নয়। এখন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের বক্তৃতা শুনলে বোঝা যাচ্ছে, ওঁরা ইস্যু হাতড়াচ্ছেন। বুঝতে পারছে না কোন ইস্যুকে নিয়ে লড়াই করবে। তাই মিথ্যা কথা এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করছে, ধরা পড়ছে, ফের পাশ কাটিয়ে অন্য ভাবে মিথ্যা কথা বলার চেষ্টা করছেন।’’
মোদীর অসত্য ভাষণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠিও দিয়েছে সিপিআই(এম)। বিদ্বেষ ভাষণের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে পার্টি।
বসু বলেছেন, ‘‘মোদী সরাসরি মিথ্যা কথা বলেছেন। কেবল অতি ধনীদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদের উপর ১ শতাংশ হারে কর ধার্য করার কথা বলা হয়েছে। সিপিআই(এম)’র ইশ্তেহারেও এই বিষয়টি রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বর্তমানে আর্থিক বৈষম্যের হার ঔপনিবেশিক সময়ের থেকেও বেশি। এই কর ধার্য না করলে আর্থিক বৈষম্য কমানো অসম্ভব। একইসঙ্গে বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনীতিকেও প্রতি আক্রমণ করা যাবে না। মোদী বলছেন যেন সব ঘর থেকে সব সম্পদ নিয়ে নেওয়া হবে!’’
গত দুই নির্বাচনের তুলনায় এবার বিরোধী ঐক্য সূচক জোরালো। বিজেপি বিরোধী প্রধান সমস্ত দলের মধ্যে একটা বোঝাপড়া হয়েছে।
নীলোৎপল বসুর কথায়, ‘‘রাজস্থানের সিকরের মতো বিহারের খাগাড়িয়ায় আমরা জেতার জায়গায় রয়েছি। তবে খাগাড়িয়ায় বাকি দলগুলো যেভাবে টাকা খরচ করছে, সেটা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’’
খাগাড়িয়া নিয়ে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব নিজেও আশাবাদী। এই কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থীর মনোনয়নে উপস্থিতও ছিলেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘‘খাগাড়িয়ার আবহাওয়া অনুকূল। এই কেন্দ্রে সিপিআই(এম) না জিতলে অবাক হব।’’ তাঁর মত, দিল্লিতে গতবার সব আসন বিজেপি জিতলেও এবার ৫ আসনেও হারতে পারে।
বসুর কথায়, ‘‘হরিয়ানার কৃষি আন্দোলনের রেশ রাজস্থানে যেমন ছড়িয়েছে, তেমনই পশ্চিমী উত্তর প্রদেশে রয়েছে। বিজেপির অবস্থা এই অংশে ভালো নয়।’’
Comments :0