ISRAEL PALESTINE CONFLICT

লিখতে শেখাতেন প্যালেস্তাইনের কথা, বোমায় ছিন্নভিন্ন সেই রিফাতের শরীর

আন্তর্জাতিক

israel palestine conflict hamas usa israel iran india bengali news গত গ্রীষ্মে স্ট্রবেরি চাষে মগ্ন রিফাত। প্যালেস্তিনীয় কবি মোসাব আবু তোহা’র ইন্সটাগ্র্যাম পোস্ট থেকে সংগৃহীত।

ইজরায়েলের বিমান হানায় মৃত্যু হল প্যালেস্তিনীয় কবি ও সাহিত্যিক রিফাত আল-আরিরের। শুক্রবার আল-জাজিরা জানিয়েছে, গাজা শহরের সুজায়েয়া অঞ্চলে আল-আরির বাড়িতে বিমান থেকে ক্ষেপনাস্ত্র ছোঁড়ে ইজরায়েল। আল-আরির পাশাপাশি তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্য এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। 

আল-আরির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ক্ষোভ এবং শোকের প্লাবন বইতে শুরু করে। গাজা ভূখণ্ডের অপর কবি মোসাব আবু তোহা সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে আল-আরির স্ট্রবেরি চাষের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘‘আমার হৃদয় অজস্র টুকরোয় ভেঙে গিয়েছে। আমার বন্ধু ও সহকর্মী রেফাত আল-আরির এবং তাঁর পরিবার কিছুক্ষণ আগে প্রাণ হারিয়েছেন। রেফাত গাজা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং লেখক এবং ‘গাজা রাইট্‌স ব্যাক’ পত্রিকার সম্পাদক। আমি এই খবর বিশ্বাস করতে চাইনা। আমরা দু’জনেই স্ট্রবেরি চাষ করতে ভালোবাসতাম। গত গ্রীষ্মে আমরা একসঙ্গে স্ট্রবেরি চাষ করেছি। শেষবারের মত সেই ছবি ব্যবহার করছি। এটা ভয়াবহ।’’

৪৪ বছর বয়সী আল-আরির গাজা’র ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ইজরায়েলের দাবি, এই বিশ্ববিদ্যালয় হামাস চালায়। ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়কে বোমা বর্ষণ করে গুড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েলী হানাদার বাহিনী। এবার শুরু হয়েছে অধ্যাপকদের হত্যা। 

আল-জাজিরা লিখছে, ইজরায়েল গাজা’র মাটির কথা বলা বুদ্ধিজীবীদের নিশানা করতে শুরু করেছে। আল-আরির ‘আমরা কেবলমাত্র সংখ্যা নই’ নামে একটি প্রকল্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই প্রতিষ্ঠান গাজার নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল লেখার তালিম দিয়ে থাকে। এই সংস্থার অপর প্রতিষ্ঠাতা পাম বেইলি আল-জাজিরাকে জানিয়েছেন, ‘‘এই ক্ষতির কোনও পরিভাষা নেই।’’

৭ অক্টোবর ইজরায়েলে ঢুকে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে হামাসের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ওয়ারশ ঘেটো’র গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন আল-আরির। আল-জাজিরার দাবি, তারপরেই ইজরায়েলের হিটলিস্টে উঠে আসেন আল-আরির। 

আল-জাজিরা লিখছে, আল-আরির বহু শুভাকাঙ্খি তাঁকে সুজায়েয়া ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু ইজরায়েলের বোমাবর্ষণের মাঝেও নিজের মাটি ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘সুজায়েয়া হল পুনরুত্থানের কেন্দ্রস্থল। এই পুনরুত্থান ইজরায়েলী বর্বরতার কাছে হাঁটু মুড়ে আত্মসমর্পনের সমস্ত প্রস্তাবকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।’’

নিজের মৃত্যুর কয়েকদিন আগে এক্সে একটি কবিতা পোস্ট করেন আল-আরির। তিনি লেখেন, ‘‘আমার মৃত্যুর খবর পর্যবাসিত হোক উপখ্যানে’’।

ইউনাইটডে ভয়েস ফর আমেরিকা নামের একটি এনজিও’র কর্ণধার আহমেদ বেদিয়ের আল-জাজিরাকে বলছেন, ‘‘আল-আরির ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের মানুষের যন্ত্রণা প্রতিদিন পশ্চিমী বিশ্বের সামনে তুলে ধরতেন। তাই ইজরায়েল ওঁকে চিরদিনের মত চুপ করিয়ে দিল।’’

বেদিয়ের’র মতে, ‘‘বিশ্বজুড়ে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ইজরায়েল গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ঠিক কী করে চলেছে। জনমত ওদের থেকে সরে গিয়েছে। তাই ওরা চেষ্টা করছে, সমস্ত ভিন্নমতকে মুছে দিতে। নইলে আর বেশিদিন ওদের পক্ষে এই বর্বরতা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’’

যদিও আল-আরির ছাত্ররা তাঁদের প্রিয় অধ্যাপকের চেতনা বাঁচিয়ে রাখতে তৎপর। আল-আরির প্রাক্তন ছাত্র এবং পরবর্তীতে বন্ধু আহমেদ নেহাদ বলছেন, ‘‘আল-আরির উত্তরাধিকার আমাদের মধ্য দিয়ে চিরদিন বহমান থাকবে।’’

নেহাদ জানাচ্ছেন, ‘‘আল-আরির গাজার তরুণ প্রজন্মের হাজার হাজার ছেলে-মেয়েকে শেখাতেন কীভাবে প্যালেস্তাইনের কথা লিখতে হবে। কীভাবে আমাদের যন্ত্রণার কথা গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমার এখনও মনে আছে আল-আরির কীভাবে আমায় হাতে ধরে কবিতা লেখা শিখিয়েছিলেন।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment