আর কয়েকটা ঘন্টা। তারপরেই ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা এবং ক্রোয়েশিয়া। এবারের বিশ্বকাপ জুড়ে কেমন ছিল মেসিদের পার্ফমেন্সের গ্রাফ? মাঠের লড়াই শুরুর আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক সেইদিকে।
প্রথমেই আসা যাক আর্জেন্টিনার প্রসঙ্গে। ২০২২ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ছিল গ্রুপ সি’তে। এই গ্রুপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলে পরাজিত হন মেসিরা। বিশ্বকাপ অভিযানের শুরুতেই এই ধাক্কার ফলে প্রশ্ন উঠে যায় আর্জেন্টিনা শিবিরকে নিয়ে। তাহলে কি এবারেও স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে?
কিন্তু না। স্বপ্নভঙ্গ হয়নি। কারণ সামনে থেকে দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন মেসি। ২০০৬ থেকে বিশ্বকাপ খেলছেন লিও। কিন্তু কোনওবারই তাঁর বিশ্বকাপের ট্র্যাকরেকর্ড আহামরি কিছু নয়। ২০০৬ এবং ২০১০ বিশ্বকাপ মিলিয়ে তাঁর করা গোলের সংখ্যা ছিল মাত্র ১! ২০১৪’র ব্রাজিল বিশ্বকাপে গিয়ে পরিস্থিতির কিছুটা বদল ঘটে। সেবার ৩টি গোল করেন মেসি। এবং আর্জেন্টিনা ফাইনালেও পৌঁছয়।
ফাইনালে পৌঁছলেও সেবারের আর্জেন্টিনা অত্যধিক মেসি নির্ভর হয়ে পড়ে। ক্লাব ফুটবলের নিরিখে সেই সময় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের নাম লিওনেল মেসি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ছিল প্রচন্ড প্রত্যাশার চাপ। সব মিলিয়ে ২০১৪’র বিশ্বকাপেও ঠিক ছন্দে ছিলেন না মেসি। ২০১৮’র বিশ্বকাপেও ছিল যেন ২০০৬’র রিপিট টেলিকাস্ট। জার্মানি বিশ্বকাপের মতো রাশিয়াতেও মাত্র ১টি গোল আসে লিও মেসির পা থেকে।
সেদিক থেকে দেখতে গেলে ২০২২’র কাতারে দেখা মিলেছে অন্য এক মেসি। একইসঙ্গে বদল এসেছে আর্জেন্টিনা দলের মানসিকতাতেও। এই আর্জেন্টিনা অত্যধিক মেসি নির্ভর নয়। কিন্তু গোটা দলটাই যেন মেসির জন্যই খেলছে। গোটা দলটা চাইছে এবার অন্তত ক্যাপ্টেনের হাতে কাপটা উঠুক। এবং এই টিম স্পিরিটের ফলে অনেকটাই চাপমুক্ত ভাবে খেলতে পারছেন মেসি, যার প্রভাব পড়ছে একের পর এক ম্যাচে। চলতি বিশ্বকাপে এখনও অবধি ৪ গোল করেছেন মেসি। এবারের বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল জেতার অন্যতম দাবিদারও তিনি। ৫ গোল করে সামনে রয়েছেন কেবলমাত্র কিলিয়ান এমবাপ্পে।
গ্রুপ পর্যায়ের প্রথম ম্যাচে হারের পরেই ঘুরে দাঁড়ায় আর্জেন্টিনা। মেক্সিকো’কে ২-০ গোলে হারায় ডি’মারিয়ারা। এই ম্যাচের প্রথম গোলটিও আসে মেসির পা থেকে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ শীর্ষে থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়ার টিকিট নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেন মেসি। নইলে হয়ত এতক্ষণে ছুঁয়েই ফেলতেন এমবাপ্পেকে।
নক আউটের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জয় পায় আর্জেন্টিনা। এবারেও দলের হয়ে ম্যাচের প্রথম গোলটি করেন মেসি। একইসঙ্গে গোটা মাঠ জুড়ে চোখ জুড়ানো ফুটবল খেলেন তিনি। একদমই চেনা ছন্দের মেসি। সেই অনবদ্য ড্রিবল, ওনান টু ওয়ান খেলে প্রতিপক্ষ মার্কারকে এড়িয়ে যাওয়া। গত ৪ বিশ্বকাপে জমা হওয়া সমস্ত আক্ষেপ যেন নিজের শেষ(?) বিশ্বকাপে এসে পুষিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৩৫ বছরের ক্যাপ্টেন আর্জেন্টিনা।
কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয় নেদারল্যান্ডসের। এই ম্যাচকে এবারের বিশ্বকাপের সবথেকে উত্তেজক ম্যাচ বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। অতিরিক্ত সময় গড়িয়ে ম্যাচের মীমাংসা হয় পেনাল্টি শুট আউটে। এই ম্যাচেও গোল করেন মেসি। পেনাল্টি থেকে।
Comments :0