কোটাবিরোধী আন্দোলনের হিংসার রেশ এখনও মিলিয়ে যায়নি বাংলাদেশ থেকে। এরইমাঝে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ‘‘দেশজুড়ে নাশকতা ও সন্ত্রাস চালানোর জন্য মৌলবাদী সংগঠন জামাতে ইসলামি ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।’’
সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বা গণভবনে বৈঠকে বসে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের জোটের নেতৃত্ব। সেখানে হাসিনা জানান, ‘‘জামাতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’’
প্রসঙ্গত, ১৯ জুলাই রাতে গণভবনে বৈঠকে বসেছিল ১৪ দলীয় জোট। সেখান থেকেই কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া হিংসার মোকাবিলায় দেশজুড়ে কার্ফু জারি ও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই বৈঠকের ১০ দিনের মাথায় ফের গণভবনে বৈঠক ডাকা হয়, এবং সেখান থেকে জামাতকে নিষিদ্ধ করার মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করে গণহত্যা চালানো যুদ্ধপরাধীদের বিচার হয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে। ট্রাইবুনালের রায়ে জামাতের স্বীকৃতি বাতিল করে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন। কিন্তু সংগঠন হিসেবে তাদের বৈধতা তখনও কেড়ে নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, মৌলবাদী সংগঠন জামাতে ইসলামি স্বাধীন বাংলাদেশ আদর্শের সরাসরি বিরোধী। স্বাধীন বাংলাদেশের গঠন আটকাতে পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে মিলিত হয়ে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ রয়েছে জামাতের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে। স্বাধীন বাংলাদেশপন্থী বিদ্বজ্জনদের খুনের পাশাপাশি ভারতের সহযোগী চিহ্নিত করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকেও খুনের অভিযোগ রয়েছে জামায়াতের কর্মী বাহিনীর বিরুদ্ধে। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের বিচারে এমন বহু অভিযোগের সত্যতাও প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্রের খবর, ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে হাসিনা বলেছেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যে নাশকতা, আগুন দেওয়ার ঘটনা ও পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে, এর পেছনে জামাত-শিবির রয়েছে। এই বিষয়ে আমার কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামাত-শিবিরের প্রশিক্ষিত লোকজনকে ঢাকায় জড়ো করা হয়। তাঁরাই এসব অপকর্ম করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে হলে তাদের বিষয়ে কড়া সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
প্রসঙ্গত, কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুশো’র বেশি মানুষ বাংলাদেশে প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতের তালিকায় পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী, বিক্ষোভকারী, পুলিশকর্মী, আওয়ামি লিগ কর্মী সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ রয়েছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী সহ বহু শহরে ব্যপক নাশকতা চালানো হয়। বাংলাদেশ প্রশাসন সূত্রে খবর, নাশকতার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র ঢাকায় ২০০টি মামলা করা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ১৩ হাজারের বেশি। গত ১৩ দিনে ঢাকা সহ গোটা বাংলাদেশ জুড়ে সাড়ে ৯ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় পাঁচশোর কাছে মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে।
অপরদিকে সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জামাতে ইসলামি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, জামাত নিষিদ্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বেআইনি, এক্তিয়ার বহির্ভূত ও সংবিধান বিরোধী।
জামাতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘‘একটি রাজনৈতিক দল বা জোট অপর একটি রাজনৈতিক দলের বৈধতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান এই অধিকার তাদের দেয়নি।’’
Comments :0