SSC SCAM

রেড রোডে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে ‘নিয়োগ চাই নিয়োগ চাই’

রাজ্য

রেড রোডের ধারে গেলে গাড়ির আওয়াজের থেকে বেশি কানে আসছে একটাই স্লোগান, ‘‘নিয়োগ চাই, নিয়োগ চাই।’’

১০০০ দিন। টানা রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন যোগ্য বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা। তারা চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেছেন। কিন্তু চাকরিটা আর হাতে পায়নি।

অপরাধ কি? তাদের নথি ঠিক নেই? না।

তাদের অপরাধ একটাই, তারা টাকা দিতে পারেননি চাকরি পাওয়ার জন্য। এক কথায় তারা ঘুষ দিতে পারেননি রাজ্যের শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের। যারা টাকা দিতে পেরেছেন তারা চাকরি পেয়েছেন। মেধা তালিকায় জালিয়াতি করে মন্ত্রী পরেশ অধিকারির মেয়েকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন অনেকে। আদালতের নির্দেশে কয়েকজনের চাকরিও গিয়েছে। কিন্তু যারা পাশ করলো তাদের কি হবে? যারা চুরি করলো তাদের কোন শাস্তি হবে না? প্রশ্ন অনেক, কোন উত্তর নেই। 

শনিবার সকালে ধর্ণা মঞ্চে এক মহিলা চাকরি প্রার্থী নিজের মাথা নেঁড়া করেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘আজ হাজার দিন হয়ে গেলো রাস্তায় বসে আছি। মুখ্যমন্ত্রী একদিনও আসেননি। আমরা চাই আমাদের নিয়োগ হোক।’’

ছেলে চাকরি প্রার্থীরা এদিন প্রতিবাদ স্বরূপ খালি গায়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

শনিবার এই অবস্থান আন্দোলনের হাজারতম দিনে তাঁদের লড়াইয়ের প্রতি সংহতি ও সহমর্মিতা জানাতে ধর্মতলায় মিছিল করবে বামফ্রন্ট। ওই দিন ধর্মতলায় লেনিন মূর্তির সামনে জমায়েত করে দুপুর ২টোয় মিছিল শুরু হবে, মিছিল গান্ধী মূর্তির সামনে গিয়ে শেষ হবে এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত সভাও হবে।

গত মার্চ মাসে কলকাতা হাইকোর্ট ৮৪২ জন গ্রুপ-সি শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল করেছে। এই শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বেআইনিভাবে হয়েছে, একথা আদালতকে জানিয়েছে খোদ স্কুল সার্ভিস কমিশন। গ্রুপ-সি পদে নিযুক্ত ৭৮৫ জনের চাকরির সুপারিশপত্র বাতিল করতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-কে নির্দেশ দিলেন কলকাতা উচ্চ আদালতের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সুপারিশপত্র ছাড়াই নিয়োগপত্র প্রাপক আরও ৫৭ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশও তিনি দিয়েছেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। 
সেই তালিকা প্রকাশ হতেই দেখা গিয়েছে, তাতে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মামাতো দাদার মেয়ে বৃষ্টি মুখার্জির নাম। তাঁর বাড়ি রামপুরহাটের কুশুম্বায়, যে কুশুম্বা গ্রামে বেড়ে ওঠার নানা কাহিনী প্রায়শই শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। সেই গ্রামেই রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর মামার বাড়ি। সেখানে পরিবার নিয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রীর মামা অনিল মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে নীহার মুখোপাধ্যায়।
এই নীহার মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে বৃষ্টি মুখোপাধ্যায় গ্রু-সি পদে চাকরি পেয়েছিলেন বোলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। অবশ্য তিনি দিন কয়েক স্কুল গিয়ে আর চাকরি করেননি। 

আদালতের নির্দেশে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করছে সিবিআই এবং ইডি। প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে। তার বান্ধবীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। একাধিক তৃণমূল বিধায়ক জেলে। শিক্ষা দপ্তরের একাধিক আধিকারিক জেলে। কিন্তু তাও এখনও তদন্তের কিনারা করতে পারলো না সিবিআই। আদালতের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তদন্ত শেষ করার। এখন দেখার তা কোন ভাবে শেষ হয় কি না।  

 

Comments :0

Login to leave a comment