Tea Garden Workers

এবার ১২০০ টাকা কম বোনাস চা শ্রমিকদের

রাজ্য জেলা

তরাই ও ডুয়ার্সের ১৭৬টি চা বাগানের প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ বাগিচা শ্রমিকের উৎসব বোনাসের মীমাংসা হলো শুক্রবার।
উল্লেখ্য পঞ্চম দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বৃহস্পতিবার রাত ১১ টায় স্থগিত হয়ে যায়। শ্রমিক ইউনিয়ন সমূহের প্রতিনিধিরা এবং মালিকদের সংগঠন ঐক্যমত্যে পৌঁছোতে পারছিল না। ওই রাতেই ঠিক হয় বাগানের স্বার্থে অতিরিক্ত দিন অর্থাৎ শুক্রবার ফের বৈঠক হবে। অবশেষে এদিনের বৈঠকে চূড়ান্ত হয় মালিক পক্ষ ১৬ শতাংশ হারে বোনাস দেবে শ্রমিকদের। অর্থাৎ চা বাগিচা শ্রমিকরা গতবারের তুলনায় ৩ শতাংশ হারে বোনাস কম পেতে চলেছে।
সিআইটিইউ অনুমোদিত চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা বিকাশ মোহালি শুক্রবার বৈঠক থেকে বেরিয়ে বলেন, গতবারের তুলনায় বোনাস কমে যাওয়ায় একজন শ্রমিক অন্তত ১২০০-১২৫০ টাকা কম বোনাস পেতে চলেছেন। এটা অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু বাগানের স্বার্থে শ্রমিকেরাই ফের নিজের প্রাপ্যের চেয়ে অনেক কম বোনাস নিতে রাজি হয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ৫ সেপ্টেম্বর অনলাইনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মধ্য দিয়ে বোনাস নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপর ৯-১০ সেপ্টেম্বর এবং ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় বৈঠক করেও বোনাসের রফাসূত্র বের করা যায়নি। মালিক পক্ষ প্রথম থেকেই দাবি করতে শুরু করে এ বছরে পাতার উৎপাদন কম হয়েছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিতে পাতার মান ভালো হয়নি। তা ছাড়া যে সময়ে পাতা তোলা শেষ হয় তার চেয়ে একমাস আগে অর্থাৎ চলতি বছরের নভেন্বরের পরে পাতা তোলা বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে চা পর্ষদ। 
সে কারণে গতবারের তুলনায় কম বোনাস দেওয়া হবে। যদিও সিআইটিইউ অনুমোদিত চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা বিদ্যুৎ গুন বলেন, ‘‘মালিকদের দাবির সামান্য অংশই কেবল সত্যি। বাকি সবটাই ভুলে ভরা। উৎপাদন কম হলেও কলকাতা এবং শিলিগুড়ির চা নিলাম কেন্দ্রে চলতি বছরে চা পাতার ভালো দাম পেয়েছে মালিকেরা। প্রথম ফ্ল্যাশ বাজারে আসার পর খোলা, বাজারে চায়ের দাম বেড়ে যায়। চা পাতার দাম বেড়ে যাওয়ায় মালিকদের মুনাফায় কিন্তু এতটুকুও টান পড়েনি। আর চায়ের গুনগত মান ভালো হওয়ার পেছনে শ্রমিকদের অবদান মালিক শ্রেণি অস্বীকার করে কী করে!’’
এদিকে কলকাতার বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাকক্ষে তরাই ও ডুয়ার্সের ১৭৬ টি বড় চা বাগানের বোনাস ইস্যুতে মালিক ও শ্রমিকদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরেই এই দুই এলাকার ৫৫ টি ছোট চা বাগানের মালিকদের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়নগুলির বোনাস সংক্রান্ত বৈঠক শুরু হয় এদিনই। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় দুর্বল বাগানের মালিকদের প্রতিবারের মত এবারেও ‘‘কনসেশন’’ দেওয়া হবে। তারা গতবারের নিরিখে শ্রমিকদের বোনাস দেবে। সব মিলিয়ে ‘দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত বাগান গুলির শ্রমিক সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি।
এদিকে বোনাস মীমাংসার খবর তরাই ও ডুয়ার্সের বিভিন্ন বাগানে পৌঁছুতেই গতবারের তুলনায় কিছুটা বোনাস কম পেলেও শ্রমিকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
অন্যদিকে তরাই ও ডুয়ার্সের প্রায় ১৫ টি বাগান বন্ধ রয়েছে। এসব বাগানের শ্রমিকদের বড় অংশ এখন ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। বন্ধ বাগানে রয়ে গেছেন শুধু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, মহিলাদের একাংশ আর শিশুরা। এদের জীবনে এখন আর উৎসব নেই। নেই বোনাসের উচ্ছ্বাস। সরকারি ১৫০০ টাকা ভাতা নিয়েই ওঁদের অপেক্ষা ফের কবে বাগানে আসবে নতুন মালিক। ফের বাগানে বাজবে সাইরেন।

Comments :0

Login to leave a comment