INDIA TELECOM RECHARGE

৩৪ হাজার কোটির বাড়তি শুল্ক জিও-এয়ারটেলের, প্রতিবাদ সর্বত্র

জাতীয়

telecom

টেলিকম ক্ষেত্রে পরিষেবার মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল বিএসএনএল। বিএসএনএলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে বেসরকারি টেলিকম সংস্থাগুলি বাধ্য হতো পরিষেবার দাম কমিয়ে রাখতে। কিন্তু কেন্দ্রের নীতির ফলে ৪জি এবং ৫জি পরিষেবা দিতে পারছে না বিএসএনএল। তার ফলে একচেটিয়া বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বেসরকারি সংস্থাগুলি। লাগামছাড়া হারে পরিষেবার মাশুল বাড়িয়ে চলেছে। তাই অবিলম্বে বিএসএনএলকে ৪জি এবং ৫জি পরিষেবা দেওয়ার ছাড়পত্র দিতে হবে।

দুই বড় মোবাইল সংস্থার মাশুল বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে এই দাবি জানালেন রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএলর কর্মীরা। ৩৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বাড়তি শুল্ক আদায়ের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে দুই সংস্থাকে। এই দুই সংস্থার হাতে প্রায় ৯২ শতাংশ বাজার। দুই সংস্থাই বিপুল মুনাফা করছে বলে জানিয়েছে বিএসএনএলর কর্মী ইউনিয়ন।

সম্প্রতি নিজেদের ৪জি এবং ৫জি পরিষেবার দাম বাড়িয়েছে এয়ারটেল এবং জিওর মত বেসরকারি টেলিকম সংস্থা। তারই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে চিঠি দিল বিএসএনএলর কর্মচারী ইউনিয়ন। সেখানে এমনই দাবি তুলে ধরা হয়েছে। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পি অভিমন্যু চিঠিতে লিখেছেন, সম্প্রতি রিলায়েন্স জিও পরিষেবার দাম ১২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছে। এয়ারটেল ১১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করেছে ২১ শতাংশ। এর মাধ্যমে সংস্থা দুটি ২০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করতে চলেছে। সংস্থাগুলির দাবি, ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে তাঁরা পরিষেবা মূল্য বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালে ২০ হাজার কোটি টাকার মুনাফা করেছে জিও। এয়ারটেলের ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ ৭ হাজার কোটি টাকা। তাই এমন পরিমাণে পরিষেবা মূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বেন। 

ইউনিয়নের তরফে বলা হয়েছে, বিএসএনএলকে ৪জি এবং ৫জি পরিষেবা দেওয়ার ছাড়পত্র না দেওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণে গ্রাহক হারিয়েছে কেন্দ্রীয় এই টেলিকম সংস্থা। সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে বিএসএনএলের হাত পা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে বিএসএনএল ১.৮ কোটি গ্রাহক হারিয়েছে। তাঁদের সিংহভাগ গিয়েছে জিওতে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসেই ২৩ লক্ষ গ্রাহক হারিয়েছে কেন্দ্রীয় এই সংস্থা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ২০২৩ সালের ২৪ মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ৪জি পরিষেবা চালু করতে পারবে বিএসএনএল। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ৫জি পরিষেবা চালুর ছাড়পত্রও দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএসএনএলকে সফ্টওয়্যারের আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ৩জি থেকে ৪জিতে উত্তরণ করতে দেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে এয়ারটেল ও জিওর মতোই আন্তর্জাতিক টেলিকম ভেন্ডরদের থেকেও ৪জি সরবরাহের উপযোগী যন্ত্রাংশ আমদানি করতে দেওয়া হয়নি। বাধ্য করা হয়েছে কেবলমাত্র দেশী সংস্থাগুলির থেকে যন্ত্রাংশ কিনতে। ফলে ৪জি এবং ৫জি পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনাবশ্যক দেরি হচ্ছে। ভোডাফোন আইডিয়া সংস্থার সিংহভাগ শেয়ারের মালিক কেন্দ্রীয় সরকার। ভোডাফোন আইডিয়ার পরিকাঠামো ব্যবহার করেও গ্রাহকদের ৪জি পরিষেবা দিতে দেওয়া হয়নি বিএসএনএলকে। 

জিও এবং এয়ারটেলের পরিষেবা মূল্য বৃদ্ধিকে ছাড়পত্র দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছে কংগ্রেসও। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা সরকারকে একগুচ্ছ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বেসরকারি টেলিকম কোম্পানিগুলি, যাঁরা বাজারের ৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন, কিভাবে একতরফা পরিষেবা মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? ৩৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকারও বেশি বাড়তি শুল্ক আদায় হবে সংস্থাগুলির, আর সমস্যায় পড়বেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।’’

কংগ্রেসের অভিযোগ, ১০৯ কোটি মোবাইল গ্রাহকের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা দেখায়নি কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় টেলিকম নিয়ামক সংস্থা ট্রাই। 

একইসঙ্গে কংগ্রেসের অভিযোগ, দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়ে গেলেও, নির্বাচনের জন্য সেটি স্থগিত ছিল। কারণ মোদী সরকার জানত, ভোটের আগে মোবাইল পরিষেবার দাম বাড়লে নির্বাচনে খেসারত দিতে হবে। বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে মিলে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়েছে বিজেপি। 

Comments :0

Login to leave a comment