Workers Evacuated

আটকে রাখা শ্রমিকদের পাঞ্জাব থেকে উদ্ধার করল সিআইটিইউ

জেলা

মঙ্গলবার ফিরিয়ে আনা শ্রমিকদের বরণ করে নিয়ে বক্তব্য রাখছেন সিআইটিঁইউ নেতা জিয়াউল আলম।

দীপশুভ্র  সান্যাল, জলপাইগুড়ি

বাগানে নতুন কাজ নেই, দীর্ঘদিন বন্ধ ১০০ দিনের কাজ কাজের তাগিদে বাগান ছেড়ে কম বয়সী ছেলে মেয়েরা চলে যাচ্ছে কাজের খোঁজে। কেউ ভাঙছে পাথর, কেউ যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল বা ভুটানে। কেউ কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে যাচ্ছে। 
ভাণ্ডীগুড়ি চা বাগানের চার যুবক বিশাল মুন্ডা (১৯), শিবা মুন্ডা (১৭), শংকর মুন্ডা (২৪) ও করণ মুন্ডা (২২)-কে  বেশি উপার্জনের লোভ দেখিয়ে  দালাল মারফত পাঞ্জাবের অমৃতসরের দাসপুর জেলার শাখা সরপঞ্চ গ্রাম পঞ্চায়েতে নিয়ে যাওয়া হয়। কৃষি কাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বছর খানেক আগে। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে বুঝতে পারেন যে তারা প্রতারিত হচ্ছেন। 
দিনে দু’বেলা খাবার দিয়ে অমানুষিক কাজ করানো হতো। অমানুষিক নির্যাতন করা হতো। মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারেননি। একবার তাঁরা পালিয়েছিলেন। কিন্তু করণ মুন্ডা ছাড়া বাকি তিন জন ধরা পড়ে যান। 
মাসে একদিন বাড়ির সঙ্গে কথা বলবার সুযোগ দিত তাও মালিকের ফোনে। এক থেকে দুই মিনিটের বেশি কথা বলতে পারতেন না। শেখানো কথা বলতে হতো, না হলেই অত্যাচার। বাড়ির লোক স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের কাছে কাকুতি-মিনতি করে ছেলেদের উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য। শেষে ভান্ডিগুড়ি চা বাগানের চা মজদুর ইউনিয়নের নেতাদের মাধ্যমে সিআইটিইউ’র সর্বভারতীয় সভাপতি কে হেমলতা ও অন্যতম সম্পাদক সুদীপ দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাঞ্জাবের সিআইটিইউ নেতা কে চন্দ্র শেখরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই শ্রমিকদের উদ্ধারের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। স্থানীয় সিআইটিইউ ও সিপিআই(এম) নেতা সাচ্ছা সিং আনজাল, হরভজন সিং জাওরা , জানাক রাজ ওলে সহ আরো অনেকের হযোগিতায় বিশাল, শিবা, শঙ্করদের উদ্ধার করে চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের নেতা বরুন ভুমিজের হাতে তুলে দেওয়া হয় শনিবার দুপুরে।  রাতে ট্রেনের চেপে জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা। মঙ্গলবার সকালে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে সিআইটিইউ নেতা জিয়াউল আলম বলেন, পাঞ্জাব, দিল্লি, বোম্বে কেন, জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের যে কোন শ্রমিক যদি কাজের তাগিদে পৃথিবীর কোন জায়গায় গিয়ে কোন বিপদে পড়েন, তাদের ঘরে ফেরানোর দায়িত্ব সিআইটিইউ নিয়ে থাকে। করোনা মহামারীর সময় আমরা এ কাজ করেছি সব সময়, আমরা এ কাজ করে চলেছি। 
শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে পাঞ্জাবে গিয়েছিলেন বরুণ ভূমিজ। তিনি বলেন, আমরা সিআইটিইউ নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ করে পাঞ্জাবে গিয়েছিলাম। সেখানকার কমরেডদের ব্যবহার, আপ্যায়ন ও ব্যবস্থাপনায় আমরা আপ্লুত। আমরা গোটা বাগানের মানুষ এই হারিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের ফিরে পেয়ে খুশি। আপনারা কাজের লোভে দালালের খপ্পরে পড়বেন। ভুলিয়ে ভালিয়ে বাগান থেকে নিয়ে যাবে তার পর কোনো দায়িত্ব নেবে না।

Comments :0

Login to leave a comment