ISRAELI AUTHORS AGAINST WAR

যুদ্ধ সমাধান নয়, সরব ইজরায়েলের লেখকরাও

আন্তর্জাতিক

ISRAELI AUTHORS AGAINST WAR

সৌরভ গোস্বামী

ইজরায়েল প্যালেস্তাইন সংঘাতের ইতিহাসে সবচেয়ে বিপর্যয়কর সংঘর্ষের আবহে এবার মুখ খুললেন ইজরায়েলের বিশিষ্ট লেখকরা। গত ৭৫ বছরের দখলদারি এবং হিংসাশ্রয়ী জুলুমবাজীর পাল্টা প্রতিঘাত করেছে হামাস। হামলা পাল্টা হামলায় বাতাসে বারুদের গন্ধ, রক্তস্নাত ভূখন্ড। 

এই পরিস্থিতিতে এবার প্রতিবাদ ধ্বনিত হল খোদ ইজরায়েলী দখলদারির বিরুদ্ধেই, খোদ ইজরায়েলের মাটি থেকেই। ‘‘ ইজরায়েল একটি ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর আগে কখনও এমন  ঘটেনি। এটা আমাদের সকলের সংবেদনশীলতার পক্ষে সত্যিই খুব কঠিন সময়।’’ প্রতিক্রিয়া ইজরায়েলি লেখক ইশাই সারিদের। শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং সাধারণ নাগরিকদের উপর মারাত্মক হামলা ও অপহরণের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। 

‘‘এটি কোন অর্থেই গ্রহণযোগ্য নয়, আপনারা জানেন,’’ তিনি বলেছেন।

তাঁর সাতটি উপন্যাসে সারিদ প্রায়ই এই সংকটের মনস্তাত্বিক দিক মোকাবেলা করেছেন। ভিক্টরিয়াসতার সাম্প্রতিক বইগুলির মধ্যে একটি, যেটি ২০২২ সালে দ্য মেমরি মনস্টার-র আন্তর্জাতিক সাফল্যের পরে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছিল। বইটিতে ইজরায়েলি সেনার এবং সমাজের মনস্তত্বের কথা তুলে ধরা হয়, যেহেতু কার্যত প্রত্যেককেই সামরিক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয়। 

‘‘যুদ্ধের হুমকি, হিংস্রতার ব্যবহার, ভয়: এটি আমাদের মনোবিজ্ঞানের, আমাদের জাতীয় এবং ব্যক্তিগত আত্মার একটি কেন্দ্রীয় অংশ। এটা একটা অন্ধকার ছায়া যা আমাদের ওপর সব সময় খাঁড়ার মতো ঝুলে থাকে’’, বলেছেন ইশাই সারিদ।

এই বছরের শুরুতে যখন সারিদ লেভি এশকোল সাহিত্য পুরস্কার জিতেছিলেন, তখন তিনি ৪০,০০০ ইসরায়েলি শেকেল পুরস্কারের অর্থ দান করেছিলেন একটি সংস্থাকে যারা প্যালেস্তাইন এবং ইজরায়েলি পরিবারগুলির সঙ্গে কাজ করছে যারা সংঘর্ষের কারণে পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছে। এই ধরনের সংস্থাগুলি মানবিক সংযোগের প্রতীক হিসাবে কাজ করতে পারে। ‘‘কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এটি শত্রুতা এবং হিংসা এবং যুদ্ধের সমুদ্রের মধ্যে একটি ছোট দ্বীপ হয়ে আছে,’’ সারিদ যোগ করেন।

ঔপন্যাসিক, যিনি একজন আইনজীবীও, তিনি হিংসার বর্তমান প্রাদুর্ভাবকে বিশেষ করে ‘‘যন্ত্রণাদায়ক’’ বলে মনে করেন, কারণ এটি মূলত সংঘাতের হাত ধরে সমাধান খুঁজে বের করা ‘‘যে কোনো আশাকে হত্যা করে’’। তিনি সেই সংখ্যালঘু ইজরায়েলিদের একজন যিনি মনেপ্রাণে চান প্যালেস্তিনীয়দের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে, চান একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান অনুসারে ১৯৬৭-এর পূর্ববর্তী সীমান্তে ফিরে আসতে।

তিনি এখনও বিশ্বাস করেন যে ‘‘সমাধান হিংসায় নয়’’। তিনি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিদেশনীতির নিন্দা করে বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিকভাবে, কৌশলগতভাবে, আমরা এখন যা দেখছি তা হল এই সরকার এবং নেতানিয়াহুর কৌশলে বিশাল ব্যর্থতা, শুধু সামরিকভাবে নয়, নীতির প্রশ্নেও,’’ বলেছেন সারিদ।

 ‘‘ছোটবেলায় আমি ইজরায়েলে বড় হয়েছি এবং এটি একটি প্রতিশ্রুতি ছিল যে ইহুদিদের জন্য একটি নিরাপদ স্থান ইজরায়েল,’’ বলেছেন লিজি ডোরন, আরেক ইজরায়েলি লেখক।

ডোরন তাঁর কাজগুলিতে খোলাখুলিভাবে ইসরায়েলি এবং প্যালেস্তিনীয়দের মধ্যে শান্তিপূর্ণ বোঝাপড়াকে সমর্থন করেছেন, যা তাঁকে নিজের দেশে কুখ্যাতকরে তুলেছে। বিশেষত হলোকাস্টের ট্রমা মোকাবিলা থেকে প্রাক্তন প্যালেস্তিনীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরে। এই সাক্ষাৎকারগুলির ফসলই হল তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস সুইট অকুপেশন’ (২০১৭)। ইজরায়েলের প্রতি ঘৃণার মনস্তাত্বিক দিক তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসটিতে। উল্লেখ্য, ইজরায়েলের এই দখলদারি পরিচিত ‘অকুপেশন’ শব্দেও।

আজও তিনি মনে করেন ইজরায়েল তার প্যালেস্তিনীয় প্রতিবেশীদের প্রতি যথেষ্ট অনুদার থেকে ভুল করেছে। দেশের রাজনীতিতে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন এবং এজেন্ডা দখল করার তীব্র বাসনার জন্য অতি দক্ষিণপন্থী এবং অতি গোঁড়া লবিগুলির সঙ্গে ইজরায়েলি সরকারের আপসকে নিন্দা করেছেন।

ডোরন জিওনবাদী বিশেষ ব্যক্তিধারণাকেও নিন্দা করেন যা তিনি ইহুদি পরিচয়ের মূলে দেখেন। ‘‘জাতি বা ধর্মের কারণে আমাদের বিশিষ্টহওয়ার কথা বলা বন্ধ করতে হবে। আমাদের একটি ঐতিহ্য আছে, আমাদের একটি ইতিহাস আছে, কিন্তু আমাদের অন্যদের দিকেও তাকাতে হবে, যারা দুর্বল তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি গড়ে তুলতে হবে,’’ মত ডোরনের। ‘‘আমি নিষ্ঠুর মানুষদের মতো হতে চাই না,’’ যোগ করেন তিনি। 

ঔপন্যাসিক আসাফ গ্যাভরন লন্ডনে ছিলেন যখন হামাস আক্রমণ শুরু করেছিল, কিন্তু তিনি শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর তেল আভিভে ফিরে আসছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এখানেই আমি আছি। এখানে আমার জীবন আছে এবং আমার মেয়েরা সেখানে স্কুলে যায়’’, বলেছেন পুরস্কার বিজয়ী দ্য হিলটপ’ (২০১৩) সহ বেশ কয়েকটি উপন্যাসের লেখক। 

গ্যাভরন সরকারের নীতিরও সমালোচনা করেন। বলেছেন, ‘‘সরকার বিচার বিভাগীয় সংস্কারে নেমে ব্যক্তিগত অধিকারের বিষয়গুলিতে হাত দিয়েছি। নেতানিয়াহু নিজের  অপরাধের বিচার থেকে বাঁচার জন্য আইনগুলি তৈরি করছিলেন। 

গ্যাভরন বলেছেন, ‘‘নেতানিয়াহু এবং তাঁর সরকার প্যালেস্তিনীয়দের অবজ্ঞা করেছে। তাদের পিষে চলেছে এবং অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে। নেতানিয়াহু আগের চেয়ে বেশি জায়গা দখল করে বসতি স্থাপনের প্রচার করছে’’।

গ্যাভরন বলেছেন, ‘‘নেতানিয়াহু সরকার ভেবেছিল দখলদারিতেই প্যালেস্তাইন সমস্যাকে পিষে দিতে পারবে, কিন্তু সেই ধারণাটি ভেঙে পড়েছে’’। তাঁর মত,

মানুষ বুঝবেনই যে প্রতিশোধ এবং হিংসা কোনও সমাধান না। তিনি বলছেন, ‘‘আমরা গাজা বা প্যালেস্তিনীয়দের মুছে ফেলতে পারি না।’’ 

এই সাহিত্যিক বলছেন ইতিহাস বিস্ময়কর। বার্লিন বা দক্ষিণ আফ্রিকা দেখুন, ‘‘মধ্যবর্তী সাঁকোর উপর দাঁড়িয়ে একদিকে থেকে যায় পিছুটান, অন্যদিকে হাতছানি থাকে অনির্দেশ্যের অভিমুখে। অথচ লেখকের যাওয়ার থাকে না কোনোদিকেই।’’  সাদাত হাসান মান্টোর টোবা টেক সিংমনে পড়ে যায় আমাদের-  না হিন্দুস্তান, না পাকিস্তান, রাষ্ট্র না জনতা, ভূখণ্ড কার?

Comments :0

Login to leave a comment