বিশ্বনাথ সিংহ
প্রথমে জানতে চাইলেন, ‘কোথায়’। তারপর বললেন নানা তহবিল থেকে বহু অ্যাম্বুল্যান্স করে দেওয়া হয়েছে। তখন হয়ত ছিল না।
সন্তানের দেহ ব্যাগে নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল বাবাকে। রাজ্যজুড়ে যন্ত্রণায় শরিক হতে দেখা গিয়ে বহু মানুষকে। তবু, সোমবার, ঘটনার চব্বিশ ঘন্টা পরও এতটাই নিস্পৃহ রইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
সোমবারই কালিয়াগঞ্জে মৃত শিশুর বাড়িতে যান ছাত্র, যুব এবং মহিলা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। পুত্রহারা মা সাগরী দেবশর্মা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁর আরেক শিশু, মৃতের যমজ, এখনও অসুস্থ। তীব্র অর্থাভাব, হাসপাতালে চিকিৎসা পরিকাঠামোর সঙ্গে প্রশাসনের নিস্পৃহ আচরণে ক্ষোভ জানাচ্ছেন পরিজনরা। রেড ভলান্টিয়াররা যমজ অপর শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।
কালিয়াগঞ্জের এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। কারণ এর আগে একাধিক ঘটনায় অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি না পেয়ে পরিজনের শব ঘাড়ে নিয়ে বাড়ি ফেরার একাধিক ঘটনা রয়েছে এ রাজ্যেও। জানুয়ারিতেই জলপাইগুড়িতে ঘাড়ে শবদেহ নিয়ে ফিরতে হয়েছিল পরিজনকে।
মুখ্যমন্ত্রীকে এদিন কালিয়াগঞ্জের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করায় প্রথম জানতে চান কোথায় হয়েছে এই ঘটনা। তারপর জুড়ে দেন অনুমান, ‘‘হয়ত সে সময় অ্যাম্বুল্যান্স ছিল না।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘অনেকে শিশুর দেহ কোলে নিয়ে ফিরতে চান। অ্যাম্বুল্যান্স অনেক করে দেওয়া হয়েছে।’’
কালিয়াগঞ্জের পরিযায়ী শ্রমিক অসীম দেবশর্মা পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি জানিয়েছেন শিশুর চিকিৎসায় সব অর্থ খরচ হয়ে যাওয়ায় মৃত সন্তানের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে পারেননি। ব্যাগে করে সন্তানের দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। জানা গিয়েছে, সোমবার বিকেলে উত্তর দিনাজপুরের জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের থেকে নিয়মমাফিক রিপোর্ট চেয়েছে নবান্ন।
এদিন সন্তানহারা পরিবারের কাছে পৌঁছে যান ছাত্র যুব মহিলা নেতৃবৃন্দ। রেড ভলেন্টিয়াররা দ্বিতীয় শিশু সন্তানের জন্যে দু’টি অক্সিজেন সিলিণ্ডার নিয়ে যান গ্রামের বাড়িতে।
অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া না থাকায় মৃত সন্তানের দেহ ব্যাগে ভরে বাড়ির পথে রওনা হয়েছিলেন পুত্রহারা বাবা। শিশুর বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ ব্লকের মোস্তাফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙ্গিপাড়া এলাকায়। ডাঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মা পেশায় দিন মজুর। ঘটনা শনিবার রাতের। ৬ মাসের দুই যমজ শিশুই অসুস্থ। এক শিশুর অবস্থার অবনতি হলে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার মৃত্যু হয় ৬ মাসের সন্তানের।
উত্তর বঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের তরফে শিশুর দেহ নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেই অ্যাম্বুল্যান্সের সন্ধান শুরু করেন অসীম দেবশর্মা। শিলিগুড়ি থেকে কালিয়াগঞ্জের ডাঙ্গিপাড়ায় যেতে ৮ হাজার টাকা দাবি করে অ্যাম্বুল্যান্সের ড্রাইভাররা। এত টাকা না থাকায় ১০২ নম্বরে ফোন করেন পুত্রহারা বাবা। ফোন ধরে একজন বলেন, ভাড়া লাগবে। বিনা পয়সায় অ্যাম্বুল্যান্স হবে না। সুপারকে বলেও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ অসীম দেবশর্মার। এরপর বাধ্য হয়ে মৃত সন্তানের দেহ ব্যাগে ভরে বাড়ির পথে রওনা দেন বাবা।
যমজ অপর শিশু ফের অসুস্থ হয়েছে। তার এখনও পেটে ব্যাথা। সোমবার সকালে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সভানেত্রী বেলা চ্যাটার্জির নেতৃত্বে ডিওয়াইএফআই, এসএফআই নেতা কর্মীরা ডাঙ্গিপাড়া গ্রামে পৌঁছান। পুত্রহারা মা সাগরী দেবশর্মা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। মহিলা সমিতির নেত্রী বেলা চ্যাটার্জি তাঁকে সান্ত্বনা দেন। কিন্তু পুত্র হারা মা বারে বারে অচৈতন্য হয়ে পড়ছেন। রেড ভলেন্টিয়ারের দল পৌছায় তাদের বাড়িতে। যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। রায়গঞ্জের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
Comments :0