লোকসভা নির্বাচনের পর দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হরিয়ানায় ক্ষমতা ধরে রাখতে বিজেপি সক্ষম হলেও জম্মু-কাশ্মীরে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে ন্যাশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস এবং সিপিআই(এম)’র ইন্ডিয়া জোট। কাশ্মীর নিয়ে আরএসএস-বিজেপি অনেক স্বপ্ন দেখেছিল এবং দেখিয়েছিল, ৩৭০ ধারা বাতিল করে সন্ত্রাসবাদমুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত ‘নয়া কাশ্মীর’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু সে সব কিছু যে কাশ্মীরের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে সেটা শান্তিপূর্ণভাবে বিপুল সংখ্যায় ভোটে অংশ নিয়ে এবং শাসকদলকে পরাস্ত করে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে আরএসএস-বিজেপি’র রাজনৈতিক মাস্টারপ্ল্যানকে কাশ্মীরের মানুষ মেনে নেননি। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের মানুষের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেবার পর থেকে যেভাবে দমন-পীড়ন নামিয়ে এনেছে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার এমনকি মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে তা মেনে নেননি মানুষ। এই নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে মানুষ জানিয়ে দিয়েছেন মোদী-শাহ’রা এতদিন কাশ্মীরে যা যা করেছেন তারা তার ঘোরবিরোধী।
অন্যদিকে হরিয়ানায় সরকার বিরোধী জোরালো হাওয়া থাকা সত্ত্বেও শাসক বিজেপি ক্ষমতা ধরে রেখে মুখ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। হরিয়ানায় বিজেপি’র পরাজয় একরকম নিশ্চিত থাকলেও ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে অনৈক্য এবং কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে বাজিমাত করেছে বিজেপি। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজেপি জিতলেও এবং কংগ্রেসের আসন সংখ্যা থেকে অনেক এগিয়ে থাকলেও প্রাপ্ত ভোটের বিচারে দু’দলই প্রায় সমান সমান। কেজরিওয়ালের দল আপ একা সব আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র ১.৭৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। জেতেনি কোন আসনে। কংগ্রেস ও আপ এবং ইন্ডিয়া জোটের সকলে জোটবদ্ধ থাকলে হরিয়ানায় বিজেপি’র পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব হতো না।
কাশ্মীরে ক্ষমতা দখলের জন্য মোদী-শাহরা সব ধরনের সম্ভাবনাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। তারজন্য নির্বাচন কমিশনকেও ব্যবহার করতে ছাড়েনি। হিন্দু প্রধান জম্মু অঞ্চলে বিজেপি’র জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে আসন পুনর্বিন্যাস করে জম্মুতে ৬টি আসন বাড়ানো হয়েছে। মুসলিম প্রধান কাশ্মীর উপত্যকায় বাড়ানো হয়েছে মাত্র একটি। তেমনি এলাকা পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে বিরোধীদের শক্তিশালী কেন্দ্রগুলিকে ভেঙে দুর্বল করা হয়েছে। তেমনি নির্বাচনকে সামনে রেখে একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে পেছন থেকে মদত দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় সর্বত্র প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি নতুন দল। ফলে কাশ্মীরে এবার এত প্রার্থী ভোটে দাঁড়িয়েছে যা অতীতে কোনোদিন কল্পনাও করা যায়নি। লক্ষ্য একটাই কাশ্মীরে যথা সম্ভব ভোট ভাগাভাগি করে ন্যাশনাল কনফারেন্স কংগ্রেস জোটের প্রার্থীদের পরাজয় নিশ্চিত করা। তেমনি ভোটের পর পর ত্রিশঙ্কু হলে এই সব দল ও নির্দলদের সমর্থন নিয়ে বিজেপি’র সরকার গড়া। আরও এক ব্যবস্থা হয় মনোনীত পাঁচ সদস্য নিয়ে। বিজেপি’র ঘনিষ্টদের মনোনীত বিধায়ক করে তাদের ভোটে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হবার ছক ছিল। শেষ পর্যন্ত কোনও ছকই কাজে আসেনি। কাশ্মীরের মানুষ সব ফন্দি ফিকির ছুঁড়ে ফেলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে তারা আরএসএস-বিজেপি’র ফরমুলায় কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চান না। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পথে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবেন কাশ্মীরের মানুষই।
Kashmir Election
কাশ্মীরে স্বপ্নভঙ্গ মোদী-শাহ’র
×
Comments :0