কবিতা
একবৃন্তে
গৌরী সেনগুপ্ত
মুক্তধারা
জেগে আছে আমার দেশ আমার ভারত
প্রতি রোমাঞ্চে যার জল আর মাটি
প্রতি রোমাঞ্চে ঢেউয়ের ওপর আলো
মহামিলনের জাগৃতি ।
এ এক প্রবাহ -----
এ প্রবাহে শিরা – উপশিরা বেয়ে ধারাস্নান
এখানে ধান হয়ে জেগে আছে
মকিম , মহাদেব , মনসুরদের ধারা
এ মাটির রক্তে স্নাত স্বাধীনতা
আমাদের পুন্যস্নান করায় ।
চোখের পাতায় ভোর জাগে
সূর্যের পয়ারে
শস্যের দানায় শিশির ভেজা
আবু মজুরদের গল্পের স্বাদ
হাড়পাঁজরের শুকনো গুঁড়োয়
অধিকারহীন বোধে দাঁড় ঠেলে বয়ে যাচ্ছে পবন ।
ওপারে জাগছে অশরীরী ভাষা
শঙ্খ , ঘণ্টা , আজানের একযোগে আত্মহারা সুর
কুয়াশা ঠেলে চাঁদ উঁকি দিচ্ছে
পবন ঈশ্বরকে দেখে
তার ভাটিয়ালি সুরে
সে ওই সুর রপ্ত করে মনসুরের সাথে
মনসুর মিঞা একসময় পদ্মায় দাঁড় টানত
ভাটিয়ালি , ভাওয়াইয়া সুরে মাতন জাগাত পদ্মার বুকে ।
আজ সে এপার বাংলায়
বয়স ষাটোর্ধ তবু শিরায় শিরায় সেই স্রোত
শিকড়ে লেগে আছে স্বাধীনতার আহ্লাদ
অনাস্বাদিত প্রশান্তিতে দাঁড় বেয়ে যায় গঙ্গা্য
মনসুর আর পবনেরা ।
দেখেছে একাত্তরের আর এক কুরুক্ষেত্রের ছবি
ভাইয়ের রক্তে রাঙা হতে ওপার বাংলার ভুঁই
দাঁড়িয়ে সারি সারি মগজ ধোয়া প্রহরা
ইশারায় ঝাঁপ দেয় ছুঁড়ে দিতে ত্রাস
ধর্মের ধান বুনে দিয়েছে যারা
বেবাক করেছে ভিটেমাটি
কত আপন হিন্দু – মুসলমান
দাওয়ায় বসত খোল করতাল
কখনও মুর্শিদির ঠেক
চুমকি – বসানো আলখাল্লার রঙে ।
সময়ের জড়ো করা পিপাসা সব অমাবস্যা হয়ে গেল
দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া দিশাহীন প্রান্তরে
ধ্বংসের শ্বাস শোনা
সেই বড়ে গোলামের অলৌকিক অফুরাণ স্রোতের টান
চেনা মাটিতে জাতক বীজেরা এক সরলরেখায় ।
সেই আকুতি জাগছে ‘’ মেলাবেন তিনি মেলাবেন ‘’ ।
Comments :0