Maharashtra

উদ্ধবকে সরাতে বেআইনি পদ্ধতি, বলল সুপ্রিম কোর্ট

জাতীয়

উদ্ধব থ্যাকারে মুখ্যমন্ত্রী পদে ফিরলেন না কিন্তু গত বছরের জুনে যে পদ্ধতিতে তাঁর বদলে একনাথ শিন্ডেকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল তা ছিল পদে পদে বেআইনি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একথা স্পষ্ট হলো বৃহস্পতিবার। শিব সেনার একাংশকে ভাঙিয়ে তাদের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গড়ে বিজেপি। সাংবিধানিক বিধি ভেঙেই যে তা করা হয়েছিল শীর্ষ আদালত তা জানিয়ে দিয়েছে। 
মহারাষ্ট্রে ২০২২-এর জুনে আস্থা পরীক্ষার জন্য বিধানসভা ডাকার সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছিল। রাজ্যের তদানীন্তন রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি কোনও বস্তুনিষ্ঠ কারণ ছাড়াই তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব থ্যাকারেকে আস্থা পরীক্ষা করতে বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় গরিষ্ঠতা হারিয়েছেন, এমন কোনও প্রমাণ তাঁর কাছে ছিল না। সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার এই মর্মে পর্যবেক্ষণ দিলেও যেহেতু উদ্ধব থ্যাকারে ওই আস্থা পরীক্ষার আগেই ইস্তফা দিয়েছিলেন তাই তাঁর সরকারকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। মহা বিকাশ আগাদি সরকারকে চলে যেতে হয়েছিল ওই সময়ের ঘটনাক্রমে। শিবসেনার একাংশকে ভেঙে, বিজেপি’র সমর্থনে একনাথ শিন্ডে মুখ্যমন্ত্রী হন। তাঁকেই বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত। 
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে ফেব্রুয়ারি থেকে এ সংক্রান্ত মামলা চলছিল। ১৬ মার্চ শুনানি শেষের পরে রায় স্থগিত রাখা হয়েছিল। 
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছে, রাজ্যপাল দেবেন্দ্র ফড়নবীশের একটি চিঠির ওপরে ভিত্তি করে আস্থা ভোট নেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিধানসভার অধিবেশন চলছিল না। বিরোধী দল কোনও অনাস্থা প্রস্তাব আনেনি। সরকারের গরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যপালের সন্দেহ করার কোনও বস্তুনিষ্ঠ কারণ ছিল না। যে প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নেন সেখানেও বলা ছিল না বিধায়করা সরকারের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করতে চায়। যদি একথা ধরেও নেওয়া যায় বিধায়করা সরকার ছেড়ে চলে আসতে চাইছে, তাহলেও তারা একটি গোষ্ঠী। এটি দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বিধানসভার কক্ষে আস্থা ভোট দিয়ে এই অভ্যন্তরীণ বিতর্কের নিষ্পত্তি করা যায় না। সংবিধান রাজ্যপালকে রাজনৈতিক ময়দানে প্রবেশের এবং দলের মধ্যেকার বা দলগুলির মধ্যেকার বিতর্কে ভূমিকা পালনের কোনও অধিকার দেয়নি। শিবসেনার একাংশের বিধায়কের প্রস্তাবের ওপরে ভিত্তি করে উদ্ধব থ্যাকারে গরিষ্ঠতা হারিয়েছেন এই উপসংহারে পৌঁছে রাজ্যপাল ভুল করেছেন। বিধায়করা নিরাপত্তার কথা বলেছিলেন। তার সঙ্গে সরকারের গরিষ্ঠতার কোনও সম্পর্ক নেই। এটি ঘটনার বাইরের বিষয় এবং তা বিবেচনা করা ঠিক হয়নি। মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল শিবসেনার অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যে। রাজনৈতিক দলের সংবিধান বা তাদের পছন্দের পদ্ধতিতে সেই বিতর্কের সমাধান করতে হয়। কোনও দল সরকারকে সমর্থন করছে না আর দলের মধ্যে সরকারের কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এই দুটি এক কথা নয়। 
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, রাজ্যপালের ‘অভিমত’ স্থির করতে হবে বস্তুনিষ্ঠ মাপকাঠির ভিত্তিতে। রাজ্যপালের বিষয়ীগত বা মনোগত ধারণার ওপরে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া চলে না। গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের পক্ষে আস্থা রয়েছে ধরে নিতে হয়। এই ধারণার পরিবর্তন করতে গেলে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য লাগবে। 
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বাস্তবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে গত বছরের জুন মাসে উদ্ধব থ্যাকারের সরকার ফেলতে রাজ্যপালের পদকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। সংবিধানসম্মত পথে যে তা করা হয়নি, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। 
কিন্তু উদ্ধব থ্যাকারেকে আবার মুখ্যমন্ত্রী পদ ফিরিয়ে দেওয়া যায় না বলে আদালত রায় দিয়েছে। থ্যাকারে আস্থা পরীক্ষার আগেই স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, একজনের স্বেচ্ছায় দেওয়া ইস্তফা বাতিল করার কোনও আইন নেই। যদি থ্যাকারে ইস্তফা না দিতেন তাহলে এই মামলায় তাঁকে পদে ফেরানোর কথা ভাবা যেত। থ্যাকারে পরে সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি নৈতিক কারণে ইস্তফা দিয়েছিলেন। শিবসেনার নামে জয়ী হয়ে দল ভাঙানোর খেলার বিরুদ্ধেই তিনি ইস্তফা দিয়েছিলেন। 
সুপ্রিম কোর্ট ঘটনাক্রম স্মরণ করে বলেছে, ২৯ জুন থ্যাকারে ইস্তফা দেবার পরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ শূন্য হয়ে যায়। বিধানসভায় সর্বোচ্চ আসনে জয়ী দলের (বিজেপি) নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবীশ শিন্ডেকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন। সুতরাং ৩০ জুন রাজ্যপাল শিন্ডেকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানিয়ে ঠিকই করেছেন। 
সমগ্র প্রক্রিয়ায় আরেকটি গুরুতর গলদের কথাও বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ শিন্ডে গোষ্ঠীর সমর্থিত ভারতশেঠ গোগাওয়ালেকে শিব সেনা দলের হুইপ বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। এই কাজ বেআইনি হয়েছে। শীর্ষ আদালতের কথায়, হুইপ ঠিক করে রাজনৈতিক দল। পরিষদীয় দল নয়। যদি দলেরই একাংশ হুইপ ঠিক করে তাহলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নাড়ির টান ছিঁড়ে যাবে। এক্ষেত্রে অধ্যক্ষ জানতেন যে দুটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। অথচ তিনি নতুন হুইপকে স্বীকৃতি দিলেন। শিব সেনা কাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তা জানার কোনও চেষ্টা করেননি তিনি। 
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে থ্যাকারে বলেছেন, গণতন্ত্রে আস্থা ফিরিয়েছে এই রায়। যদি মহারাষ্ট্রের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীর কোনও নৈতিকতা থেকে থাকে তাহলে তাঁদের ইস্তফা দেওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরে অধ্যক্ষেরও শিব সেনার হুইপ হিসাবে সুনীল প্রভুকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment