Asansol

হাঁড়িতে জমছে না পর্যাপ্ত খেজুর রস, মন খারাপ শিউলিদের

রাজ্য জেলা

মলয়কান্তি মণ্ডল: রানিগঞ্জ

মনখারাপ খেজুর রস সংগ্রহকারী শিউলিদের। ডিসেম্বরের শুরুতে সেইভাবে হাড়হিম করা শীত না পড়ার কারণে কলসিতে জমছে না পর্যাপ্ত খেজুর রস। খেজুররস, পাটালি, নলেন গুড়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত আমজনতার প্রশ্ন, কবে জাঁকিয়ে বসবে শীত? কবে খেজুররসে ভরে উঠবে কলসি?
শিউলিরা জানালেন, যত বেশি শীত পড়ে, তত ভালো খেজুররস পাওয়া যায়। এখন বাজারে নলেন গুড়ের স্বাদের নকল  (কেমিকেল) মিশিয়ে মিষ্টি সহ নানান খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করা হয়। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া, দাঁইহাট,  মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া জেলা থেকে শিউলিরা পরিবার নিয়ে খেজুররসের সন্ধানে এসেছে রানিগঞ্জের বক্তারনগর এলাকায়। তাদের রহিম শেখ জানালেন প্রথমে খেজুর পাতার বিন্যাস ও আকার দেখে গাছ নির্বাচন করা হয়। তারপর গাছের মালিকের সাথে কথা বলে দরদাম করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টাকার সাথে গাছপিছু দেড় থেকে দুই কেজি নলেন গুড় দিতে হয় মালিককে। প্রথমে গাছের কিছু পাতা পরিষ্কার করে চেঁছে গাছের গায়ে বাঁশের নল লাগানো হয়। নলের নীচে বাঁধা হয় কলসি। বাঁশের সরু নল দিয়ে রস গড়িয়ে কলসিতে জমা হয়। প্রতিটি খেজুর গাছ থেকে শীতকালে প্রায় ৫০-৬০ দিন রস সংগ্রহ হয়।প্রতিদিন গাছপিছু ২ থেকে ৫ লিটার খেজুররস পাওয়া যায়। এবারে কয়েকদিন আগে  বৃষ্টি হওয়ায় পর্যাপ্ত খেজুররস পাওয়া যায় নি। খুব বেশি শীত পড়লেই ৫ লিটার খেজুররস পাওয়া যায়। সে রস ফুটিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি হয়। তা বিক্রি হয় ১৫০ টাকা কেজি দরে। এক শিউলি হাবিবুল জানান, প্রত্যেকবছর অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেজুররস সংগ্রহ করেন। শীতের মধ্যেও তারা খেজুরপাতা, প্লাস্টিক দিয়ে অস্থায়ী তাঁবু বানিয়ে রয়েছেন। বাড়ি ফিরে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করেন। খেজুররসে জ্বাল দিতে দিতে শিউলি হীরু তপাদার, হাবিবুলরা উদ্বেগের সাথে জানালেন, গতবছর থেকে তাদের একশো দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে পঞ্চায়েত। কাজ করিয়ে মজুরির টাকাও বাকি রেখেছে। গ্রামের বাড়ি থেকে খবর পেয়েছেন আঙুলের ছাপ দিতে পারেননি বলে রেশন বন্ধ হয়ে গেছে। একরাশ ক্ষোভ নিয়ে বললেন, কোনও সরকার গরিবদের পাশে থাকে না। জমানো অল্প পুঁজি নিয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফলের ব্যবসা করেছিল। বাড়ির মহিলারাও খেজুর পাতার তালাই, ঝুড়ি তৈরি করে সংসারে সাহায্য করে। গত বছর নলেনগুড়, পাটালি করে শিউলিদের  প্রত্যেক পরিবার চার-পাঁচ মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা  আয় করেছিল। বাড়ি ফিরে গ্রামের পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজ বন্ধ আর এখনও জাঁকিয়ে শীত না পড়ায় রোজগারে টান পড়বে বলে আশঙ্কা শিউলিদের।

Comments :0

Login to leave a comment